বিদেশী বিনিয়োগের প্রণোদনা, প্রতিযোগিতামূলক শ্রম ব্যয় এবং দ্রুত অর্থনৈতিক বিকাশের কারণে বাংলাদেশ বিশ্বের অন্যতম প্রতিশ্রুতিবদ্ধ উদীয়মান বাজারে পরিণত হয়েছে। বাংলাদেশে ব্যবসায় পরিচালনা করতে হলে আইনগত সুবিধা ও নিরাপত্তা বিবেচনায় সবচেয়ে সুবিধাজনক ব্যবসায় ধরণ হচ্ছে ‘প্রাইভেট লিমিটেড কোম্পানি’ গঠন করা। বাংলাদেশে যৌথমূলধনী কোম্পানি ও ফার্মস পরিদপ্তর (RJSC) প্রাইভেট লিমিটেড কোম্পানীর নিবন্ধন দিয়ে থাকে। প্রাইভেট লিমিটেড কোম্পানি গঠনের জন্য যেসকল প্রয়োজনীয় কাগজপত্রাদি RJSC তে দাখিল করতে হয়:
প্রয়োজনীয় কাগজপত্র Required Documents for Private Limited Company Registration
(১) কোম্পানির নাম (নামের ক্লিয়ারেন্স প্রাপ্ত হওয়া আবশ্যক)
(২) Memorandum of Association (সংঘ স্মারক) – ব্যবসায়ের উদ্দেশ্য ক্লজ (object clause) টি ৪০০ শব্দে সীমাবদ্ধ থাকতে হবে এবং ৭টি ক্লজ থাকতে হবে। (মূল কপি ও অতিরিক্ত ২ কপি)
(৩) Articles of Association (সংঘ বিধি) (মূল কপি ও অতিরিক্ত ২ কপি)
(৪) ফরম I – কোম্পানির নিবন্ধনকরণ সংক্রান্ত ঘোষণাপত্র
(৫) ফরম VI – নিবন্ধিত ঠিকানা
(৬) ফরম IX – পরিচালকদের সম্মতিপত্র (স্বাক্ষরসহ)
(৭) ফরম X – পরিচালকদের তালিকা
(৮) ফরম XII – পরিচালক বিবরণী (ট্যাক্স আইডেনটিফিকেশন নাম্বারসহ)
(৯) শেয়ারহোল্ডারদের বিবরণী (যদি শেয়ারহোল্ডার একজন বাংলাদেশী হয় তবে জাতীয় পরিচয়পত্র)
(১০) বিদেশী শেয়ারহোল্ডার এবং পরিচালক পাসপোর্ট অনুলিপি
RJSC এর ফরমসূমহ ডাউনলোড করতে এই লিংকে ক্লিক করুন
প্রাইভেট লিমিটেড কোম্পানি গঠনের কয়েকটি বিবেচ্য বিষয়
বিবেচ্য বিষয় | বিবরণ |
---|---|
কোম্পানীর নাম | নামের ক্লিয়ারেন্স প্রাপ্ত হওয়া আবশ্যক। |
শেয়ারহোল্ডার সংখ্যা | কমপক্ষে ২জন এবং সর্ব্বোচ্চ ৫০ জন হবে। দেশী ও বিদের্শী কোম্পানিও শেয়ারহোল্ডার হতে পারবে। |
পরিচালক সংখ্যা | কমপক্ষে ২জন পরিচালক থাকবে। শেয়ারহোল্ডারগণ পরিচালক হিসাবে দায়িত্ব পালন করতে পারবে অথবা অন্য কাউকে পরিচালক হিসাবে নিয়োগ করা যাবে। বিদেশী ব্যক্তিও পরিচালক হতে পারবে। তবে পরিচালকের বয়স কমপক্ষে ১৮ বছর হতে হবে এবং অতীতে দেউলিয়া অথবা অপরাধসংক্রান্ত কোন ধরনের দোষী সাব্যস্তের রেকর্ড থাকতে পারবে না। |
অনুমোদিত মূলধন | অনুমোদিত মূলধনের কোন সীমারেখা নাই। তবে কোম্পানির অনুমোদিত মূলধনের উপর ভিত্তি করেই কোম্পানি নিবন্ধন ফি নির্ধারিত হয়। |
পরিশোধিত মূলধন | কোম্পানি নিবন্ধন করতে হলে নুন্যতম বাংলাদেশী ১ টাকা মূলধন পরিশোধ করতে হবে। |
নিবন্ধিত ঠিকানা | বাংলাদেশে কোম্পানি গঠন করতে হলে, বাংলাদেশে কোম্পানির physical address থাকতে হবে। তবে এটি কোন পি.ও বক্স হবে না। |
সংঘ স্মারক ও সংঘ বিধি | কোম্পানির গঠন ও পরিচালনা সংক্রান্ত নিয়মনীত প্রণয়ণ করত সংঘ স্মারক ও সংঘ বিধি তৈরি করতে হবে। |
প্রাইভেট লিমিটেড কোম্পানি গঠন প্রক্রিয়া Private Company Registration Steps
কয়েকটি ধাপে প্রাইভেট লিমিটেড কোম্পানি গঠন প্রক্রিয়া সম্পন্ন করা হয়।
ধাপ-১: নামের ছাড়পত্র
কোম্পানি গঠন করতে হলে প্রথমেই নাম ক্লিয়ারেন্স নিতে হবে। http://www.roc.gov.bd ভিজিট করে নিজের নামে একটি একাউন্ট করে নাম ক্লিয়ারেন্স জন্য আবেদন করতে পারেন। নাম ক্লিয়ারেন্সের জন্য আবেদন করার পর, আপনি একটি ব্যাংক স্লিপ পাবেন। পেমেন্ট সম্পন্ন করার পর, আপনাকে পুনরায় ওয়েবসাইটে লগইন করলে নামের ক্লিয়ারেন্স সনদ পাবেন।
অনুমোদিত নামটি ৩০দিন পর্যন্ত সংরক্ষণ থাকে। তবে অনুমোদিত নামটি আবেদন করে ৬ মাস পর্যন্ত সংরক্ষণ করা যায়।
ধাপ-২: ব্যাংক হিসাব খোলা এবং পরিশোধিত মূলধন সংগ্রহ
এই ধাপটি শুধুমাত্র বিদেশী শেয়ারহোল্ডারদের জন্য প্রযোজ্য। কোম্পানি গঠনে কোন বিদেশী শেয়ারহোল্ডারের অংশীদারিত্ব থাকলে, অনুমোদিত নামে বাংলাদেশের যেকোন তফসিলী ব্যাংকে ব্যাংক হিসাব খুলতে হবে এবং বিদেশী শেয়ারহোল্ডারের সম্পূর্ণ শেয়ার মূল্য পরিশোধত করত ব্যাংক থেকে এনক্যাশমেন্ট সার্টিফিকেট (Encashment Certificate) সংগ্রহ করতে হবে যা RJSC তে দাখিল করতে হবে।
ধাপ ৩: কোম্পানি নিবন্ধন
কোম্পানির নাম ক্লিয়ারেন্স সনদ প্রাপ্তির পর কোম্পানি নিবন্ধনের জন্য সকল প্রয়োজনীয় ডকুমেন্টসমূহ RJSC এর ওয়েবসাইটে আপলোড করে দিতে হবে।
কোম্পানি নিবন্ধনের জন্য আবেদন প্রক্রিয়াঃ
এই লিংক– এ প্রবেশ করুন।
এবার Apply for Registration এ ক্লিক করুন।
এবার কোম্পানির ধরন চিহ্নিত করুন। (Entity Type : Private Company) Select করুন।
এবার আপনার কোম্পানির নামের ছাড়পত্রের আবেদন নম্বর (Submission no.) এবং ছাড়পত্র নম্বর (NC Letter no.) বসিয়ে Continue বাটন এ ক্লিক করে নিবন্ধন এর পাতায় প্রবেশ করুন।
নির্ধারিত ফরমটি সতর্কতার সাথে পূরন করুন।
এবার মেমোরেন্ডাম অব এসোসিয়শন (Memorandum of Association) নির্ধারিত ফরমেট এ তথ্য বসিয়ে পূরন করুন। (Memorandum of Association এর Sample)
এবার আর্টিকেল অব এসোসিয়শন (Article of Association) নির্ধারিত ফরমেটে তথ্য বসিয়ে পূরন করুন। (Article of Association এর Sample)
মেমোরেন্ডাম অব এসোসিয়শন (Memorandum of Association) ও আর্টিকেল অব এসোসিয়শন (Article of Association) এর সকল তথ্য ভাল করে দেখে নিশ্চিত (confirm) করুন।
এবার Submit করে Continue ক্লিক করলে আপনি ফি জমা দেয়ার নির্দেশনা পাবেন।
সকল ডকুমেন্টস আপলোড করলে, স্ট্যাম্প ডিউটি সহ রেজিস্ট্রেশন ফি পরিশোধ করার জন্য আপনি একটি ব্যাংক পেমেন্ট স্লিপ পাবেন। ব্যাংকে পেমেন্ট করার পর আপতত আপনার কাজ শেষ। সকল প্রয়োজনীয় ডকুমেন্ট ও পেমেন্ট পাওয়ার পর RJSC এর কর্মকর্তারা আপনার প্রদত্ত নথি ও তথ্য পরীক্ষা করবে। তারা সন্তুষ্ট হলে, উক্ত নথি ডিজিটাল-ভাবে স্বাক্ষরিত হবে এবং নিম্নোক্ত ডকুমেন্টসমূহ আপনার ইমেইলে প্রেরণ করা হবে:
(১) সার্টিফিকেট অফ ইন-কর্পোরেশন
(২) MOA এবং AOA
(৩) ফরম XII
এই ডকুমেন্টসমূহ প্রাপ্তির অর্থ, আপনার কোম্পানিটি নিবন্ধিত হয়েছে। তবে কোম্পানি নিবন্ধিত হওয়ার পরে ব্যবসায় কার্যক্রম শুরু করার জন্য আপনাকে আরও কিছু অনুমতিপত্র ও সনদ সংগ্রহ করতে হবে। ব্যবসায়ের ধরণ ও প্রকৃতি অনুসারে এই সনদের পরিমাণ ভিন্ন ভিন্ন হতে পারে। কোম্পানি নিবন্ধনের পরে বাধ্যতামূলক যে সনদসমূহ নিতে হবে: