কোন করদাতা সাধারণ ব্যক্তি যদি আয়কর রেয়াত নিতে চান তাহলে তাকে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড কর্তৃক নির্ধারিত খাতে নির্দিষ্ট সময়ের ভিতরে বিনিয়োগ বা অনুদান নিশ্চিত করতে হবে। সর্বোচ্চ কতটাকা বিনিয়োগ করলে কর রেয়াত বা কর ছাড়ের সর্বোচ্চ সুবিধা পাবেন তা জানতে হলে কর রেয়াত নির্ণয়ের সূত্রটা জানা জরুরী।
আয়কর আইনের বিধান সাপেক্ষে এবং ষষ্ঠ তফসিল এর অংশ ৩ এ নির্ধারিত সীমা, শর্তাবলী এবং যোগ্যতা সাপেক্ষে কোন বিনিয়োগ করা হলে, করদাতা কোন করবর্ষে মোট আয়ের উপর প্রযোজ্য হারে এই কর রেয়াত সুবিধা নিতে পারবেন। কর রেয়াত নির্ণয়ের সাধারণ সুত্র আয়কর আইনের ধারা ৭৮ এ উল্লেখ করা হয়েছে। করদাতাগণ আয়কর আইনের ধারা ৭৮ অনুযায়ী নির্ধারিত হারে কর রেয়াত পাবেন। গত পর্বে কর কমাতে কোথায় বিনিয়োগ করবেন সেই বিষয়ে আলোচনা করেছিলাম, আর এইপর্বে আলোচনা করবো সর্বোচ্চ কর কমাতে কত টাকা বিনিয়োগ করবেন।
আয়কর রেয়াত এর পরিমাণ নির্ধারণের সূত্র
সর্বোচ্চ কর কমাতে কত টাকা বিনিয়োগ করবো?
আয়কর রেয়াত (Income Tax Rebate) এর পরিমাণ নির্ধারনের সূত্র
করদাতার সাধারণ কর রেয়াত নির্ণয় করতে হলে করদাতার মোট আয়, বিনিয়োগের পরিমাণ ও ১০ লক্ষ টাকা; এই তিনটি বিষয় বিবেচনা করতে হবে। কোন করদাতা কর রেয়াত প্রাপ্য হবে যদি-
- মোট আয়ের ৩%
- ষষ্ঠ তফসিলের অংশ ৩ অনুসারে করদাতার মোট বিনিয়োগ ও অনুদানের ১৫%
- ১০ লক্ষ টাকা
উপরের তিনটির ভিতর যাহা কম হবে।
তবে এখানে শর্ত থাকে যে,
মোট আয় বলতে, কর অব্যাহতি প্রাপ্ত আয়, হ্রাসকৃত করহার প্রযোজ্য এইরুপ আয় এবং নূন্যতম কর প্রযোজ্য এইরুপ আয় বাদ দিয়ে পরিগণিত মোট আয়।
উদাহরণস্বরুপ, একজন করদাতার মোট আয় ৬ লক্ষ টাকা, বিনিয়োগের পরিমাণ ১৫ লক্ষ টাকা। তাহলে কর রেয়াতের পরিমাণ কত?
মোট আয়ের ৩%; ১৫,০০,০০০ x ৩% = ৪৫,০০০
বিনিয়োগের ১৫%; ১০,০০,০০০ x ১৫% = ১,৫০,০০০
এইখানে, মোট আয়, বিনিয়োগ, ১০ লক্ষ টাকার ভিতর মোট আয়ের ৩% কম থাকায় ৪৫,০০০ টাকা কর রেয়াত প্রাপ্য হবেন।
সর্বোচ্চ কর কমাতে কত টাকা বিনিয়োগ করবো?
কর রেয়াত কিভাবে নির্ণয় করতে হয় সেই বিষয়ে আমরা তো জানলাম। কিন্তু কর রেয়াতের সর্বোচ্চ সুবিধা পেতে অর্থ বছরে কত টাকা বিনিয়োগ করবো তা যদি আগে থেকে জানা যায় তাহলে করদাতার জন্য কর পরিকল্পনা যথাযথ হয়। আর এই হিসাবটা একদম সহজ। আপনি আপনার মোট আয়ের ২০% কর রেয়াতযোগ্য বিনিয়োগ খাতে বিনিয়োগ করবেন। তবে এই হিসাবে মোট আয় থেকে অব্যাহতি প্রাপ্ত আয় (যেমন-পেনশন আয়, প্রভিডেন্ট ফান্ডের আয়), হ্রাসকৃত করহার প্রযোজ্য এইরুপ আয় (যেমন-হাঁস মুরগীর খামার, মৎস্য চাষ হতে আয়) এবং নূন্যতম কর প্রযোজ্য এইরুপ আয় (যেমন- সঞ্চয়পত্র সুদ হতে আয়, ব্যাংক সুদ) বাদ দিয়ে মোট আয় ধরতে হবে।
উদাহরণস্বরুপ, মি. আলিফ ব্যবসা হতে আয় ১০ লক্ষ টাকা, বাড়ী ভাড়া হতে নীট আয় ২ লক্ষ টাকা, জমি বিক্রয় বাবদ নীট মূলধনী আয় ১০ লক্ষ টাকা, সঞ্চয়পত্র সুদ হতে আয় ১ লক্ষ টাকা, মৎস্য চাষের আয় ৫০ হাজার টাকা, আইটি ফ্রিল্যান্সিং হতে আয় ৩ লক্ষ টাকা। তাহলে সে মোট কতটাকা বিনিয়োগ করবে যাতে সর্বোচ্চ কর ছাড় পাওয়া যায়।
যেহেতু কর রেয়াতের আয় নির্ণয়ে কর অব্যহতি প্রাপ্ত আয়, হ্রাসকৃত করহার প্রযোজ্য আয় এবং নূন্যতম কর প্রযোজ্য আয় বাদ দিতে হবে। তাই আমরা উপরের উদাহরনে মি. আলিফের আয় হতে জমি বিক্রয় বাবদ নীট মূলধনী আয় (নূন্যতম কর প্রযোজ্য আয়), সঞ্চয়পত্র সুদ হতে আয় (নূন্যতম কর প্রযোজ্য আয়), মৎস্য চাষ হতে আয় (হ্রাসকৃত করহার প্রযোজ্য আয়) এবং আইটি ফ্রিল্যান্সিং (কর অব্যহতি প্রাপ্ত আয়) আয় বাদ দিবো। তাহলে কর রেয়াতযোগ্য আয়সমূহ হবে:
ব্যবসা হতে আয় | ১০,০০,০০০ |
বাড়ীভাড়া হতে আয় | ২,০০,০০০ |
মোট আয় | ১২,০০,০০০ |
এখন আপনি যদি এই ১২ লক্ষ টাকা ২০% অর্থ্যাৎ, (১২,০০,০০০X২০%)=২,৪০,০০০ টাকা কর রেয়াতযোগ্য বিনিয়োগ খাতে বিনিয়োগ করেন তাহলে আপনি আপনার মোট কর হতে বিনিয়োগের সর্বোচ্চ ১৫% অর্থ্যাৎ (২,৪০,০০০X১৫%)=৩৬,০০০ টাকা কর রেয়াত পাবেন বা কম কর দিতে হবে।
আপনি আমাদের ট্যাক্স ক্যালকুলেটর ব্যবহার করে অর্থবছরের শুরুতেই জানতে পারবেন যে আপনি সর্বোচ্চ কর ছাড় পাওয়ার জন্য কত বিনিয়োগ করতে পারেন। এই ক্যালকুলেটরটি আপনাকে আপনার বিনিয়োগের সঠিক পরিকল্পনা করতে সাহায্য করবে। বিস্তারিত জানতে আমাদের ‘ট্যাক্স প্ল্যানিং ক্যালকুলেটর ২০২৪‘ লেখাটি পড়ুন
শেষ কথা
আমরা আলোচনা করেছি কর রেয়াতের জন্য কোথায় বিনিয়োগ করা যাবে এবং কত টাকা বিনিয়োগ করলে সর্বোচ্চ কর সুবিধা পাওয়া যাবে। এই সুবিধা পেতে হলে আপনাকে অবশ্যই চলতি অর্থবছরের ৩০শে জুনের মধ্যে বিনিয়োগ নিশ্চিত করতে হবে। আর যেহেতু আয়কর আইন প্রতিনিয়ত আপডেট হয় তাই সমসাময়িক তথ্য পেতে হলে অবশ্যই একজন দক্ষ আয়কর আইনজীবীর পরামর্শ নেওয়াটা জরুরী।