মোবাইল ব্যাংকিং ও অনলাইন ব্যাংকিং এর পার্থক্য

difference between mobile banking and online banking

বর্তমান ডিজিটাল যুগে আর্থিক লেনদেন এখন হাতের মুঠোয়। ঘরে বসে সহজেই দেশে এবং দেশের বাইরে টাকা পাঠানো যায়, হিসাব পরিচালনাসহ আরও অনেক ধরনের ব্যাংকিং কার্যক্রম অনলাইনে পরিচালনা করা যায়। অনলাইনে আর্থিক লেনদেনের জন্য বর্তমানে মোবাইল ব্যাংকিং ও অনলাইন ব্যাংকিং বেশ জনপ্রিয়। যদিও মোবাইল ব্যাংকিং ও অনলাইন ব্যাংকিং এর মধ্যে বেশ কিছু পার্থক্য রয়েছে, দুইটিই মোবাইলের মাধ্যমে পরিচালনা করা যায়।

আজকের লেখায় মোবাইল ব্যাংকিং ও অনলাইন ব্যাংকিং এর মধ্যে পার্থক্য এবং কখন কোনটি ব্যবহারে করা উত্তম সেই বিষয়ে আলোচনা করবো।

মোবাইল ব্যাংকিং এবং অনলাইন ব্যাংকিং এর মধ্যে পার্থক্য

হিসাব পরিচালনা, নেটওয়ার্ক, লেনদেনের ধরণ, টাকা জমা ও উত্তোলন এর নিয়ম, নিরাপত্তা ব্যবস্থার তারতম্যের কারণে মোবাইল ব্যাংকিং ও অনলাইন ব্যাংকিংয়ে বেশ কিছু পার্থক্য পরিলক্ষিত হয়ে থাকে যা নিচে পর্যায়ক্রমে আলোচনা করা হলো।

হিসাব:

  • মোবাইল ব্যাংকিং: মোবাইল নম্বর দিয়ে খোলা যায়। এই হিসাবটি কোন ব্যাংক একাউন্টের সাথে যুক্ত থাকে না। তবে আপনি বিভিন্ন ব্যাংক থেকে টাকা আনয়ন ও পাঠাতে পারবেন।
  • অনলাইন ব্যাংকিং: বাংলাদেশের তফসিলি ব্যাংকের একাউন্টের সাথে সংযুক্ত থাকে। এই অনলাইন ব্যাংকিং থেকেই আপনি আপনার ব্যাংক পরিচালনা করতে পারবেন এবং প্রায় সকল ধরনের ব্যাংকিং সেবায় পাওয়া সম্ভব। যার ফলে ব্যাংকের অফিসগুলোতে কষ্ট করে যাওয়ার প্রয়োজনীয়তা অনেকটায় কমে গেছে।

নেটওয়ার্ক:

  • মোবাইল ব্যাংকিং: মোবাইল নেটওয়ার্ক ব্যবহার করেই মোবাইল ব্যাংকিং হিসাব পরিচালনা করতে পারা যায়। যদিও প্রতিটি মোবাইল ব্যাংকিং এর নির্ধারিত অ্যাপ আছে যেই অ্যাপ ব্যবহার করে মোবাইল ব্যাংকিংয়ের কাজটা সহজ হয়। তবে আপনি বাংলাদেশের যেকোন প্রান্ত থেকেই মোবাইল নেটওয়ার্ক ব্যবহার করে লেনদেন করতে পারবেন।
  • অনলাইন ব্যাংকিং: অনলাইন ব্যাংকিং সেবা নিতে হলে আপনাকে অবশ্যই ইন্টারনেট ব্যবহার করতে হবে। ইন্টারনেট নেটওয়ার্ক ছাড়া আপনি অনলাইন ব্যাংকিং পরিচালনা করতে পারবেন না। ইন্টারনেট ব্যবহার করে মোবাইলে বা কম্পিউটারের মাধ্যমে আপনি অনলাইন ব্যাংকিং সেবা নিতে পারবেন।

লেনদেন:

  • মোবাইল ব্যাংকিং: মোবাইল ব্যাংকিং এর একটি বড় সুবিধা হচ্ছে যেকোন সময় যেকোন স্থান থেকে টাকা পাঠানো যায়। তবে লেনদেনের পরিমাণ অনলাইন ব্যাংকিং এর তুলনায় সীমিত।
  • অনলাইন ব্যাংকিং: অনলাইন ব্যাংকিং ইন্টারনেটের মাধ্যমে যেকোন ব্যাংক একাউন্টে টাকা পাঠানো সম্ভব। আপনি যদি NPSB এর মাধ্যমে টাকা পাঠান তাহলে মুহুর্তেই বেনেফিশিয়ারির একাউন্টে টাকা পাঠানো সম্ভব অন্যদিকে EFT এর মাধ্যমে টাকা পাঠালে পরের ব্যাংকিং আওয়ারে টাকাটি বেনেফিশিয়ারির একাউন্টে যাবে। অনলাইন ব্যাংকিংয়ের লেনদেনের পরিমাণ মোবাইল ব্যাংকিং থেকে তুলনামূলক বেশি।

টাকা জমা/উত্তোলন:

  • মোবাইল ব্যাংকিং: মোবাইল ব্যাংকিংয়ে এজেন্টের মাধ্যমে জমা/উত্তোলন করা যায়। বর্তমানে সারা বাংলাদেশেই প্রায় সকল মোবাইল ব্যাংকিং কোম্পানির এজেন্ট পয়েন্ট রয়েছে।
  • অনলাইন ব্যাংকিং: অনলাইন ব্যাংকিংয়ে টাকা পাঠালে সরাসরি বেনেফিশিয়ারির একাউন্টে যায়। বেনেফিশিয়ারি তার ব্যাংকের শাখা বা এটিএম বুথ ব্যবহার করে টাকা উত্তোলন করতে পারে।

নিরাপত্তা:

  • মোবাইল ব্যাংকিং: মোবাইল ব্যাংকিং নিরাপত্তার জন্য পিন নম্বর ব্যবহার করতে হয়। যদি অনলাইনে কোন লেনদেন করতে হয় সেক্ষেত্রে অনেক সময় মোবাইলে একটি ওটিপি আসে, সেই ওটিপি দিয়ে আইডেনটিটি ভেরিফিকেশন করতে হয়।
  • অনলাইন ব্যাংকিং: অনলাইন ব্যাংকিং ব্যবহার করতে হলে নির্ধারিত পাসওয়ার্ড দিয়ে একাউন্টে লগইন করতে হয়। অনেক ব্যাংক 2FA ভেরিফিকেশন সিস্টেম অনুসরণ করে সেক্ষেত্রে পাসওয়ার্ড দেওয়ার পরে একটি ওটিপি মোবাইল বা ইমেইলে পাঠানো হয় সেই ওটিপি দিয়ে ভেরিফাই করলেই একাউন্টে প্রবেশ করা সম্ভব হয়।

মোবাইল ব্যাংকি না অনলাইন ব্যাংকিং কোনটি ব্যবহার করা উচিত?

আপনার প্রয়োজনের উপর নির্ভর করবে আপনি মোবাইল ব্যাংকি না অনলাইন ব্যাংকিং সেবা নিবেন। যদি আপনার দ্রুত লেনদেনের প্রয়োজন হয় এবং ইন্টারনেট অ্যাক্সেস না থাকে, তাহলে মোবাইল ব্যাংকিং ব্যবহার করা উচিত। অন্যদিকে, যদি আপনার বড় পরিমাণে লেনদেন করার প্রয়োজন হয় এবং ইন্টারনেট অ্যাক্সেস থাকে, তাহলে অনলাইন ব্যাংকিং ব্যবহার করা উচিত।

আবার যাকে টাকা পাঠাবেন তার যদি কোন ব্যাংক একাউন্ট না থাকে তাহলে মোবাইল ব্যাংকিংএর মাধ্যমে সহজেই টাকা পাঠাতে পারবেন যা অনলাইন ব্যাংকিংয়ে সম্ভব না।

শেষ কথা

আজকের দ্রুতগতির জীবনে, মোবাইল ব্যাংকিং এবং অনলাইন ব্যাংকিং দুটিই আর্থিক সেবা। কোনটি আপনার জন্য সেরা তা নির্ভর করে আপনার ব্যক্তিগত চাহিদা এবং পছন্দের উপর। অনেকসময় একজন ব্যক্তি একই সাথে মোবাইল ব্যাংকিং ও অনলাইন ব্যাংকিং উভয় সেবায় ব্যবহার করতে দেখা যায় এবং বর্তমানে মোবাইল ব্যাংকিং থেকে অনলাইন ব্যাংকিং, অনলাইন ব্যাংকিং থেকে মোবাইল ব্যাংকিংয়েও লেনদেন করা যায়।

Leave a Comment