শিশুর জন্মের পর সরকারি ডাটাবেইজে/ রেজিস্টারে নাম অর্ন্তভুক্ত করানোই জন্ম নিবন্ধন। এটি নবজাতকের নাম ও একটি জাতীয়তা নিশ্চিত করার এটিই প্রথম আইনগত ধাপ। তাছাড়া যেহেতু ১৮ বছর বয়সের আগেও জাতীয় পরিচয়পত্র পাওয়া যায় না তাই জন্ম নিবন্ধনই একজন ব্যক্তির নাগরিক পরিচয়ের সনদ। বর্তমানে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ভর্তিসহ বিভিন্ন সরকারী সেবা নিতে হলে জন্ম নিবন্ধন সনদ উপস্থাপন বাধ্যতামূলক করা হয়েছে। আর ডিজিটাল বাংলাদেশে অঙ্গীকারবদ্ধ বর্তমান সরকার সকল জন্ম নিবন্ধন কার্যক্রম অনলাইনে সম্পন্ন করার উদ্যোগ নিয়েছে। তাই যাদের ম্যানুয়াল জন্ম নিবন্ধন করা আছে তাদেরকেও অনলাইনে জন্ম নিবন্ধন করতে হবে। অনলাইনে জন্ম নিবন্ধন করার নিয়ম ২০২৪ (Online Jonmo Nibondhon 2024) ছবিসহ ধাপে ধাপে এই লেখায় উল্লেখ করা হয়েছে।
কখন নতুন জন্ম নিবন্ধনের জন্য আবেদন করবেন
জন্ম নিবন্ধন আইনে বলা হয়েছে, বয়স, জাতি-গোষ্ঠি, ধর্ম-কিংবা জাতীয়তা সকল নির্বিশেষে বাংলাদেশে জন্ম গ্রহণকারী প্রত্যেকটি মানুষের জন্য জন্ম নিবন্ধন করা বাধ্যতামূলক।
জন্ম ও মৃত্যু নিবন্ধন আইন ২০০৪ অনুসারে শিশু জন্মের ৪৫ দিনের মধ্যে জন্ম নিবন্ধন করা বাধ্যতামূলক।
বিভিন্ন অসুবিধার কারণে ৪৫ দিনের মধ্যে করতে না পারলেও আমার পরামর্শ থাকবে আপনার শিশুর ৫ বছরের মধ্যে অবশ্যই জন্ম নিবন্ধন করিয়ে নিবেন।
অন্যথায়, ৫ বছর বয়স অতিক্রান্ত হলে জন্ম নিবন্ধন করতে অনেক অতিরিক্ত ডকুমেন্ট প্রয়োজন হয় এবং ঝামেলা পোহাতে হয়।
জন্ম নিবন্ধন আবেদনে প্রয়োজনীয় কাগজপত্রাদি l Documents for Birth Registration
নতুন জন্ম নিবন্ধনের জন্য সকল প্রয়োজনীয় কাগজপত্র ও তথ্য সংগ্রহ করেই অনলাইনে আবেদন করবেন। জন্ম নিবন্ধন করতে যেসকল কাগজপত্রাদি প্রয়োজন তার তালিকা জানতে এখানে ক্লিক করুন।
অনলাইনে জন্ম নিবন্ধন আবেদন করার নিয়ম l Jonmo Nibondhon Online
ধাপ ১- নিবন্ধনাধীর ব্যক্তির পরিচিতি ও জন্মস্থানের ঠিকানা
অনলাইনে আবেদনের জন্য প্রথমে আপনার কম্পিউটার থেকে https://bdris.gov.bd/ এই লিংকে ভিজিট করুন। এখানে নিচের মত একটি পেইজ পাবেন।
আপনি কোন ঠিকানায় জন্ম নিবন্ধন করাতে চান, এখানে তা বাছাই করুন।
অর্থাৎ যে ইউনিয়ন পরিষদ, পৌরসভা বা সিটি কর্পোরেশন থেকে জন্ম নিবন্ধন করতে চান, সেটি নিবন্ধনাধীন শিশু বা ব্যক্তির কোন ঠিকানায় তা এখানে নির্বাচন করে পরবর্তী বাটনে ক্লিক করুন।
নামের ২ টি অংশ থাকলে ১ম অংশটি নামের প্রথম অংশের ঘরে লিখবেন ও ২য় অংশটি নামের শেষের অংশে লিখবেন।
যদি নামের ৩টি অংশ থাকে ১ম ২টি অংশ নামের প্রথম অংশে লিখবেন এবং শেষ অংশটি নামের শেষের অংশের ঘরে লিখবেন।
যদি নাম ১ শব্দে হয় অর্থাৎ নামের অংশ ১টি হয়, এক্ষেত্রে প্রথম অংশ খালি থাকবে। শুধুমাত্র নামের শেষ অংশে নাম লিখবেন।
একইভাবে ইংরেজিতেও পূরণ করবেন। এছাড়া, অন্যান্য তথ্যসমূহ ও জন্মস্থানের ঠিকানা সঠিকভাবে পূরণ করুন।
সবশেষে ডান পাশের পরবর্তী বাটনে ক্লিক করুন।
ধাপ ২- পিতা ও মাতার তথ্য
এই ধাপে নিবন্ধনাধীন শিশু বা ব্যক্তির পিতা ও মাতার অনলাইন বা ডিজিটাল জন্ম নিবন্ধন নম্বর ও জাতীয়তা দিতে হবে।
এখানে পিতা-মাতার ডিজিটাল জন্ম নিবন্ধন নম্বর লিখার পর স্বয়ংক্রীয়ভাবে নামসমূহ আসবে। এগুলো আপনি এডিট করতে পারবেন না।
এজন্য, পিতা মাতার জন্ম নিবন্ধনটি ডিজিটাল বা অনলাইন কিনা তা অবশ্যই আগে যাচাই করে নিবেন। বাবা মায়ের জন্ম নিবন্ধন তথ্য অনলাইনে না থাকলে, শিশুর জন্ম নিবন্ধন আবেদন করা যাবেনা।
https://everify.bdris.gov.bd/ লিংক থেকে চেক করে দেখুন জন্ম নিবন্ধন ডিজিটাল কিনা।
ধাপ ৩- স্থায়ী ও বর্তমান ঠিকানা
এ পর্যায়ে আপনাকে বর্তমান ও স্থায়ী ঠিকানার তথ্য প্রদান করতে হবে। নিচের ছবিটি দেখুন।
এখান থেকে, কোনটিই নয় বাটনে ক্লিক করুন। এরপর নিচের ছবির মত ঠিকানা দেওয়ার অপশন পাবেন।
স্থায়ী ঠিকানার ক্ষেত্রে, জন্মস্থান ও স্থায়ী ঠিকানা একই হলে চেক বক্সে টিক দিন (লাল বক্সে চিহ্নিত)। এছাড়া বর্তমান ঠিকানার ক্ষেত্রেও স্থায়ী ঠিকানা ও বর্তমান ঠিকানা একই হলে (লাল বক্সে চিহ্নিত) চেক বক্সে টিক দিন।
অন্যথায়, ঠিকানাগুলো নির্বাচন করে দিন এবং গ্রাম, বাসা ও সড়ক নম্বর লিখে দিন। এরপর পরবর্তী বাটনে ক্লিক করুন।
ধাপ ৪- আবেদনকারীর তথ্য
এ ধাপে যিনি এই জন্ম নিবন্ধনের আবেদন করছেন, তার তথ্য দিতে হবে। সাধারণত একটি শিশুর জন্ম নিবন্ধনের জন্য দায়ী ব্যক্তি হচ্ছেন পিতা, মাতা, পিতামহ, পিতামহী, মাতামহ, মাতামহী বা আইনগত অভিভাবক। তাই শিশুর জন্ম নিবন্ধনের আবেদন তারাই করে থাকেন।
তাছাড়া আপনি নিজেও নিজের জন্ম নিবন্ধনের জন্য আবেদন করতে পারেন। নিজে আবেদন করলে নিজ সিলেক্ট করুন। অথবা, পিতা, মাতা, পিতামহ, পিতামহী ইত্যাদি সিলেক্ট করবেন।
সবকিছু ঠিক থাকলে ডান পাশের পরবর্তী বাটনে ক্লিক করুন এবং আবেদনটি সম্পন্ন করুন।
সফলভাবে ফরমটি সাবমিট হলে আপনি প্রিন্ট করার অপশন পাবেন। জন্ম নিবন্ধন আবেদন পত্র প্রিন্ট করে সংশ্লিষ্ট ইউনিয়ন পরিষদ/ পৌরসভা বা সিটি কর্পোরেশন অফিসে জমা দিতে হবে। আবেদনের সাথে অবশ্যই প্রয়োজনীয় কাগজপত্র সংযুক্ত করে জমা দিবেন।