how to file income tax return

প্রতি বছর করদাতাদের আয়কর রিটার্ন দাখিল করতে হয়। তবে আয়কর আইনে প্রতি অর্থবছরে বিভিন্ন পরিপ্রেক্ষিতে পরিবর্তন সাধিত হয়। তারই ধারাবাহিকতায় করবর্ষ ২০২৪-২০২৫ এও বেশ কিছু পরিবর্তন সাধিত হয়েছে। যদিও একটি লেখায় আয়কর আইন সম্পর্কে বিস্তারিত ব্যাখা সম্ভব না। তবে আমরা আয়কর রিটার্ন দাখিলের মূল বিষয়বস্তু আলোচনা করবো যাহাতে করদাতাগণ সহজে আয়কর রিটার্ন দাখিল করতে পারবেন এবং প্রয়োজনীয় অতিরিক্ত তথ্য কিভাবে সহজে পেতে পারেন সেই বিষয়েও ধারণা দিবো। আয়কর রিটার্ন দাখিলের নিয়ম ২০২৪-২০২৫ লেখাটিতে শুধুমাত্র ব্যক্তি শ্রেণী করদাতাদের নিমিত্তে লেখা হয়েছে।

কারা আয়কর রিটার্ন দাখিল করবে?

কারা আয়কর রিটার্ন দাখিল করবেন সেই বিষয়ে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড কর্তৃক প্রণীত একটি লম্বা তালিকা আছে। এই তালিকায় প্রায় সকল শ্রেণীয় অন্তর্ভুক্ত আছে। এককথায় বলতে গেলে, যাদের টিন আছে তাদের সকলকেই আয়কর রিটার্ন দাখিল করতে হবে। বিস্তারিত জানতে আপনি যাদেরকে আবশ্যিকভাবে আয়কর রিটার্ন দাখিল করতে হবে সেই তালিকাটি দেখে আসতে পারেন

আয়কর রিটার্ন জমা দেওয়ার শেষ তারিখ

আয়কর রিটার্ন জমা দেওয়ার শেষ তারিখকে কর দিবস বলে। ব্যক্তিশ্রেণী করদাতার জন্য ৩০শে নভেম্বর হচ্ছে কর দিবস। তবে পূর্বে কখনোই রিটার্ন দাখিল করেন নাই এইরূপ স্বাভাবিক ব্যক্তি করদাতার ক্ষেত্রে আয়বর্ষ শেষ হইবার পরবর্তী ৩০ জুন তারিখ। আর বিদেশে অবস্থানরত কোনো স্বাভাবিক ব্যক্তি করদাতার ক্ষেত্রে, তার বাংলাদেশে প্রত্যাবর্তনের দিন হইতে ৯০ (নব্বই) তম দিন। [বিস্তারিত ধারা ২(২৩)(ঘ) দেখুন]

আয়কর রিটার্ন দাখিলের জন্য প্রয়োজনীয় কাগজপত্র

করদাতাগণ তাদের আয়-ব্যয় ও সম্পদ অর্জন বা সম্পদ বর্জনের বিপরীতে প্রয়োজনীয় সকল ডকুমেন্টস অবশ্যই রিটার্নের সহিত জমা দিবেন। সকলের সুবিধার জন্য এইখানে একটি তালিকা দেওয়া হলো। এই তালিকার ভিতর যেসকল ডকুমেন্টস আপনার আয়-ব্যয় ও সম্পদ বিবরণীর জন্য প্রযোজ্য সেসকল কাগজপত্রাটি আয়কর রিটার্ন দাখিলের সময় জমা দিবেন।

চাকুরির তথ্য:

১. বেতন সার্টিফিকেট বা স্টেটমেন্ট।
২. প্রভিডেন্ট ফান্ড স্টেটমেন্ট।
৩. উৎসে কর কর্তনের সার্টিফিকেট।
৪. গাড়ি অগ্রিম করের কপি।

    ব্যবসায়ের তথ্য:

    ১. ট্রেড লাইসেন্স এবং নবায়নকৃত ট্রেড লাইসেন্সের অগ্রিম কর প্রদানের চালানের কপি।
    ২. ব্যবসায় প্রতিষ্ঠানের আয়-ব্যয় হিসাব ও সম্পদের স্থিতি।
    ৩. ব্যাংক স্টেটমেন্ট
    ৪. ব্যবসার নামে ঋণ থাকলে ঋণের স্থিতির সার্টিফিকেট।

      গৃহ-সম্পত্তি হতে আয়ের তথ্য:

      ১. ভাড়া আয়ের ক্ষেত্রে ভাড়ার চুক্তিপত্রের কপি এবং ব্যাংক স্টেটমেন্ট।
      ২. পৌর কর বা সিটি কর্পোরেশন কর প্রদানের রসিদ।
      ৩. হাউজ লোন থাকলে ঋণের স্থিতির সার্টিফিকেট।

        বৈদেশিক/রেমিট্যান্স আয়ের তথ্য:

        ১. বৈদেশিক আয়ের জন্য ব্যাংক সার্টিফিকেট বা বৈদেশিক মুদ্রা ঘোষণার ফর্মের কপি।

          বিনিয়োগের তথ্য:

          ১. DPS স্টেটমেন্ট।
          ২. পূর্বের DPS নগদায়ন করে থাকলে এনক্যাশমেন্ট সার্টিফিকেট।
          ৩. বীমা প্রিমিয়াম সার্টিফিকেট।
          ৪. শেয়ার মার্কেট বিনিয়োগের জন্য ব্রোকার হাউসের সার্টিফিকেট ও পোর্টফলিও।
          ৫. সঞ্চয়পত্র স্টেটমেন্ট।
          ৬. FDR এবং ইন্টারেস্ট প্রাপ্তির সার্টিফিকেট।

            সম্পদ ও দায় বিবরণী:

            ১. জমি/ফ্ল্যাট/গাড়ি ক্রয় করলে দলিলের কপি।
            ২. বিক্রয় করলে বিক্রয় দলিলের কপি এবং উৎসে কর্তনের রসিদ।
            ৩. বাড়ি নির্মাণাধীন থাকলে বিনিয়োগের পরিমাণ।
            ৪. ব্যাংক ঋণের সার্টিফিকেট।
            ৫. ৫ লাখ টাকার বেশি ব্যক্তিগত ঋণের জন্য ব্যাংক স্টেটমেন্ট।
            ৬. পরিবার থেকে দান গ্রহণ বা দান করলে প্রমাণস্বরূপ ডকুমেন্ট এবং ব্যাংক স্টেটমেন্ট।
            ৭. অন্য কোনো আয়ের ডকুমেন্ট।
            ৮. উপহার প্রাপ্তির তথ্য এবং ডকুমেন্ট।

              আয়কর রিটার্ন দাখিলের পদ্ধতি

              আয়কর রিটার্ন দাখিলের পদ্ধতি দুইটি।

              ১. অনলাইনে ই-রিটার্ন ওয়েবসাইটে রিটার্ন দাখিল

              ২. আয়কর রিটার্ন ফরম পূরণ করে সরাসরি সংশ্লিষ্ট কর সার্কেলে জমা দেওয়া।

              অনলাইনে আয়কর রিটার্ন দাখিল করা তুলনামূলক সহজ। এক্ষেত্রে আপনার করহার সম্পর্কে ধারণা না থাকলেও চলে। আপনি শুধুমাত্র আপনার আয়ের খাতগুলো নির্বাচন করে সংশ্লিষ্ট ফরমে আয় ও উৎসে কর কর্তন তথ্য সংযুক্ত করে দিতে হবে। আর সম্পদ বিবরণীতে কোন পরিবর্তন হলে সেই সংযোজন বা বিয়োজন করে দিতে হবে। অনলাইনে আয়কর রিটার্ন দাখিল সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে ”অনলাইনে জিরো রিটার্ন জমা দেওয়ার নিয়ম” লেখাটি আপনার জন্য সহায়ক হবে।

              অন্যদিকে আয়কর রিটার্ন ফরম পূরণ করতে হবে আয়কর হার ও রিটার্ন পূরণ সম্পর্কে সম্যক ধারণা থাকতে হবে। করদাতা যাতে সহজে আয়কর রিটার্ন নিজেই পূরণ করতে পারে সেই জন্য প্রতিবছর জাতীয় রাজস্ব বোর্ড আয়কর সহায়িকা আয়কর নির্দেশিকা প্রকাশ করে। সর্বশেষ জাতীয় রাজস্ব বোর্ড কর্তৃক আয়কর নির্দেশিকা ২০২৪-২০২৫ প্রকাশ করা হয়েছে। আয়কর নির্দেশিকা ২০২৪-২০২৫ এ ব্যক্তিশ্রেণীর আয়কর রিটার্ন দাখিলের নিয়ম উদাহরণসহ বর্ণনা করা হয়েছে। আপনি আয়কর নির্দেশিকা ২০২৪-২০২৫ ডাউনলোড করে আয়কর রিটার্ন পূরণের যাবতীয় নির্দেশনা পেয়ে যাবেন। এছাড়াও আমাদের আয়কর বিভাগে বিভিন্ন প্রশ্নের উত্তর সহজ ভাষায় দেওয়া হয়েছে। আমাদের ওয়েবসাইটের আয়কর বিভাগ এ আশা করা যায় আপনার প্রশ্নের উত্তর পেয়ে যাবেন।

              তবে যাদের জিরো রিটার্ন অথবা যাদের করযোগ্য আয় ৫ লক্ষ টাকার নিচে এবং মোট পরিসম্পদ ৪০ লক্ষ টাকার নিচে তারা সহজেই ১ পৃষ্ঠার আয়কর রিটার্ন ফরম এর মাধ্যমে আয়কর রিটার্ন দাখিল করতে পারবেন। কিভাবে ১ পৃষ্ঠার আয়কর রিটার্ন ফরম পূরণ করবেন এবং রিটার্ন ফরমটি ডাউনলোড করতে আমাদের “এক পৃষ্ঠার আয়কর রিটার্ন ফরম IT GHA 2023” লেখাটি পড়ুন।

              শেষ কথা

              আপনার যদি আয়কর নির্ণয়ে কোন জটিলতা না থাকে তাহলে আপনি অনলাইনে বা আয়কর নির্দেশনা অনুসরণ করে আয়কর রিটার্ন ফরম পূরণপূর্বক সরাসরি সংশ্লিষ্ট কর সার্কেলে আপনার আয়কর রিটার্ন দাখিল করতে পারবেন। আর আয়কর রিটার্ন পূরণ সম্পর্কে যথাযথ অভিজ্ঞতা না থাকলে অবশ্যই একজন অভিজ্ঞ কর আইনজীবী পরামর্শ নিবেন।

              About The Author

              Leave a Reply

              × Contact Support!