GI Products in Bangladesh

বাংলাদেশ একটি ঐতিহ্যবাহী দেশ যেখানে অনেক বিখ্যাত পণ্য রয়েছে যা তাদের অনন্য বৈশিষ্ট্য ও খ্যাতির জন্য বিশ্বব্যাপী পরিচিত। এই পণ্যগুলো কেবল আমাদের ঐতিহ্য বাহন করে না, এছাড়াও অর্থনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। এই পণ্যগুলো কে নকল থেকে সুরক্ষা দিতে এবং বিশ্ববাজারে তাদের খ্যাতি বৃদ্ধি করতে ভৌগোলিক নির্দেশক (জিআই) সনদ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।

এই ব্লগ পোস্টে, আমরা বাংলাদেশের জিআই পণ্য সম্পর্কে আলোচনা করব। আমরা জানব যে জিআই স্বীকৃতি কেন প্রয়োজন, এখন পর্যন্ত কতগুলো পণ্য জিআই সনদ পেয়েছে এবং কতগুলো পণ্য জিআই সনদের জন্য আবেদন করা হয়েছে।

জি আই পণ্য বলতে কি বুঝায়?
কেন স্থানীয় পণ্যের জি আই করা প্রয়োজন?
বাংলাদেশের প্রথম জি আই পণ্য কোনটি?
বর্তমানে বাংলাদেশের জিআই পণ্য কয়টি ও কী কী?
জিআই সনদের জন্য আবেদনকারী পণ্যসমূহ

জি আই পণ্য বলতে কি বুঝায়?

ভৌগোলিক নির্দেশক (জিআই) পণ্য হল এমন কোন পণ্য যা নির্দিষ্ট একটি ভৌগোলিক অঞ্চলের বিশেষ বৈশিষ্ট্য এবং খ্যাতির কারণে সেখানকার উৎপাদিত হিসেবে স্বীকৃত। জিআই পণ্য গুলো উচ্চ মানের এবং বিশেষ গুণাবলীর জন্য বিশ্বব্যাপী খ্যাতি লাভ করে। উদাহরণস্বরুপ- টাঙ্গাইলের পোড়াবাড়ীর চমচম একটি জিআই পণ্য।

কেন স্থানীয় পণ্যের জি আই করা প্রয়োজন?

ভৌগোলিক নির্দেশক (জিআই) স্থানীয় পণ্যের জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ সুরক্ষা ব্যবস্থা। এটি নিশ্চিত করে যে পণ্যটি নির্দিষ্ট ভৌগোলিক অঞ্চল থেকে এসেছে এবং এর অনন্য বৈশিষ্ট্য রয়েছে। জিআই স্থানীয় পণ্যের জন্য অনেক সুবিধা প্রদান করে:

১. গুণমান এবং খ্যাতি: জিআই স্থানীয় পণ্যের গুণমান এবং খ্যাতি রক্ষা করে। জিআই চিহ্ন ভোক্তাদের নিশ্চয়তা দেয় যে তারা উচ্চ-মানের পণ্য কিনছে।

২. বাজারে প্রবেশাধিকার: জিআই স্থানীয় পণ্যকে আন্তর্জাতিক বাজারে প্রবেশাধিকার প্রদান করে। জিআই চিহ্ন ভোক্তাদের কাছে পণ্যকে আলাদা করে তোলে এবং বাজারে প্রতিযোগিতা করতে সাহায্য করে।

৩. বৌদ্ধিক সম্পত্তি অধিকার: জিআই স্থানীয় পণ্যের উৎপাদকদের তাদের বৌদ্ধিক সম্পত্তি অধিকার রক্ষা করতে সাহায্য করে। জিআই চিহ্ন নকল এবং প্রতারণা রোধে সাহায্য করে।

৪. অর্থনৈতিক উন্নয়ন: জিআই স্থানীয় অর্থনীতির উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। জিআই চিহ্ন স্থানীয় পণ্যের বিক্রয় বৃদ্ধি করে এবং উৎপাদকদের আয় বৃদ্ধি করে।

৫. সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য: জিআই স্থানীয় সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য সংরক্ষণ করে। জিআই চিহ্ন স্থানীয় পণ্যের ঐতিহ্য এবং গুরুত্ব তুলে ধরে।

বাংলাদেশের প্রথম জি আই পণ্য কোনটি?

বাংলাদেশের প্রথম জিআই পণ্য হল জামদানি। ২০১৬ সালের ১৭ নভেম্বর জামদানি ভৌগোলিক নির্দেশক (জিআই) সনদ পায়। এর মাধ্যমে জামদানি শাড়ি বিশ্বব্যাপী বাংলাদেশের নিজস্ব ঐতিহ্যবাহী পণ্য হিসেবে স্বীকৃতি লাভ করে। জামদানি একটি সূক্ষ্ম, হালকা ও পাতলা সুতির শাড়ি যা নারায়ণগঞ্জ জেলার ধানমন্ডি ও বারডেম এলাকায় তৈরি করা হয়। এই শাড়ির সূক্ষ্মতা, নকশা এবং এর তৈরিতে ব্যবহৃত সুতার মান অনন্য। জামদানি শাড়ি বাংলাদেশের ঐতিহ্য ও সংস্কৃতির প্রতীক। এটি বাংলাদেশের গর্ব এবং বিশ্বব্যাপী জনপ্রিয়।

বর্তমানে বাংলাদেশের জিআই পণ্য কয়টি ও কী কী?

বর্তমানে বাংলাদেশের মোট ২৮টি জিআই পণ্য রয়েছে। এগুলো হল:

১. জামদানি শাড়ি
২. বাংলাদেশের ইলিশ
৩. চাঁপাইনবাবগঞ্জের ক্ষীরসাপাতি আম
৪. বিজয়পুরের সাদামাটি
৫. দিনাজপুরের কাটারিভোগ
৬. বাংলাদেশের কালিজিরা
৭. রংপুরের শতরঞ্জি
৮. রাজশাহীর সিল্ক
৯. ঢাকার মসলিন
১০. বাংলাদেশের বাগদা চিংড়ি
১১. রাজশাহী ও চাঁপাইনবাবগঞ্জের ফজলি আম
১২. বাংলাদেশের শীতলপাটি
১৩. বগুড়ার দই
১৪. শেরপুরের তুলসীমালা চাল
১৫. চাঁপাইনবাবগঞ্জের ল্যাংড়া আম
১৬. চাঁপাইনবাবগঞ্জের আশ্বিনা আম
১৭. বাংলাদেশের ব্ল্যাক বেঙ্গল ছাগল
১৮. নাটোরের কাঁচাগোল্লা
১৯. টাঙ্গাইলের পোড়াবাড়ীর চমচম
২০. কুমিল্লার রসমালাই
২১. কুষ্টিয়ার তিলের খাজা
২২. টাঙ্গাইল শাড়ি
২৩. নরসিংদীর অমৃতসাগর কলা
২৪. গোপালগঞ্জের রসগোল্লা
২৫. রংপুরের হাঁড়িভাঙ্গা আম
২৬. মৌলভীবাজরের আগর
২৭. মুক্তগাছার মন্ডা
২৮. মৌলভীবাজারের আগর আতর

১২ই ফেব্রুয়ারী ২০২৩ তারিখে রংপুরের হাঁড়িভাঙ্গা আম, মৌলভীবাজারের আগর, মুক্তগাছার মন্ডা ও মৌলভীবাজারের আগর আতর এই ৪টি পণ্য জিআই সর্বশেষ জিআই পণ্য হিসাবে স্বীকৃতি লাভ করেছে।

জিআই সনদের জন্য আবেদনকারী পণ্যসমূহ

বাংলাদেশের ঐতিহ্যবাহী এবং বিখ্যাত অনেক পণ্য আন্তর্জাতিক বাজারে তাদের অনন্য বৈশিষ্ট্য ও খ্যাতি ধরে রাখার জন্য ভৌগোলিক নির্দেশক (জিআই) সনদ পাওয়ার জন্য আবেদন করেছে। এই সনদ পেলে এই পণ্যগুলো বিশ্বব্যাপী আরও বেশি পরিচিতি লাভ করবে এবং নকল থেকে সুরক্ষিত থাকবে।

পেটেন্টস, ডিজাইন এবং ট্রেডমার্ক বিভাগ (ডিপিডিটি) এর কাছে এই মুহুর্তে মোট ৯ টি পণ্যের জন্য জিআই সনদ পাওয়ার জন্য আবেদন জমা পড়েছে। এই পণ্যগুলো হল:

  • যশোরের খেজুর গুড়
  • নরসিংদীর লটকন
  • জামালপুরের নকশীকাঁথা
  • মধুপুরের আনারস
  • সুন্দরবনের মধু
  • রাজশাহীর মিষ্টিপান
  • শেরপুরের ছানার পায়েশ
  • ভোলার মহিষের কাঁচা দুধ
  • নওগাঁ’র নাগ ফজলি আম

এছাড়াও, আরও একটি পণ্য জিআই সনদ পাওয়ার জন্য আবেদনের প্রক্রিয়ায় আছে। পণ্যটি হচ্ছে:

  • দিনাজপুরের লিচু

জিআই সনদ পাওয়ার মাধ্যমে এই পণ্যগুলো শুধু বাংলাদেশের মধ্যে নয়, বিশ্বব্যাপী আরও বেশি পরিচিতি লাভ করবে এবং নকল থেকে সুরক্ষিত থাকবে। এই সাথে সাথে, এই পণ্যগুলোর উৎপাদকরা ও শিল্পীরা আরও বেশি লাভবান হবে।

শেষকথা

বাংলাদেশের জিআই পণ্যের বাজার ক্রমশ প্রসারিত হচ্ছে। জিআই স্বীকৃতি বাংলাদেশের ঐতিহ্যবাহী পণ্যগুলোকে দেশীয় ও আন্তর্জাতিক বাজারে ব্র্যান্ডিং করতে সাহায্য করবে। এর ফলে, উৎপাদকদের আয় বৃদ্ধি পাবে এবং দেশের অর্থনীতিতে ইতিবাচক প্রভাব পড়বে। বর্তমানে, বাংলাদেশের ২২টি পণ্য জিআই সনদ পেয়েছে এবং ১৪টি পণ্য জিআই সনদের জন্য আবেদন করা হয়েছে। আমাদের লক্ষ্য হওয়া উচিত আরও বেশি সংখ্যক পণ্যকে জিআই সনদের আওতায় আনা।

About The Author

Leave a Reply

× Contact Support!