ব্যাংক চেক লেখার নিয়ম

How to write Bank Cheque

ব্যাংক চেক লেখার সঠিক নিয়ম জানুন: আপনার লেনদেনের নিরাপত্তা নিশ্চিত করুন

ব্যাংক চেক হলো লেনদেনের একটি গুরুত্বপূর্ণ মাধ্যম। কিন্তু ভুলভাবে চেক লেখার ফলে লেনদেনে বিলম্ব, জরিমানা, এমনকি জালিয়াতির শিকার হওয়ার ঝুঁকিও বেড়ে যায়। এই লেখায়, আমরা ব্যাংক চেক লেখার সঠিক নিয়ম সম্পর্কে আলোচনা করবো। আমরা ধাপে ধাপে আপনাকে দেখাবো কিভাবে সহজেই একটি চেক লিখতে পারবেন, কোন কোন বিষয়গুলো খেয়াল রাখতে হবে এবং কিভাবে জালিয়াতি থেকে সাবধান থাকতে হবে।

চেক লেখার নিয়ম: সহজ পদ্ধতিতে

একটি চেকে গ্রহীতার নাম, তারিখ ও টাকার অংক কথায় লিখতে হয়। অনেকের কাছেই চেক লেখা একটা জটিল ব্যাপার মনে হয়। কাটা-ছেঁড়া, ভুল তথ্য, নিরাপত্তা ঝুঁকি – এসবের ভয়ে অনেকেই চেক লেখা এড়িয়ে চলেন। আজকের এই আলোচনায় আমরা বিভিন্ন ব্যাংকের চেক লেখার উদাহরণসহ সঠিকভাবে চেক লেখার নিয়মাবলী শেয়ার করব।

ধাপ ১: তারিখ

চেকের উপরের ডানদিকে তারিখ লিখুন। তারিখ লেখার সময় দিন, মাস এবং বছর স্পষ্টভাবে উল্লেখ করুন। উদাহরণ: ২২/০২/২০২৪

বাংলাদেশ ব্যাংকের নিয়ম অনুযায়ী একটি বৈধ চেকের মেয়াদ ছয় মাস। একটি চেক ইস্যুর তারিখ থেকে ছয় মাস মেয়াদে কার্যকর থাকে। তাই চেকের তারিখ লেখার সময় এই বিষয়টি বিবেচনা করবেন। তবে আপনি যেই দিন চেক ব্যাংকে জমা দিন, চেকের তারিখ তার পরের কোন দিনের হতে পারবে না।

ধাপ ২: প্রাপকের নাম

“Pay to” এর অর্থ হল “পরিশোধ করুন”। চেকের মাধ্যমে যাকে টাকা প্রদান করবেন তার নাম এই অংশে লিখতে হবে। নিজের প্রয়োজনে টাকা উত্তোলনের জন্য “Self” বা “নিজ” লিখতে পারেন। অন্য কাউকে টাকা দিতে হলে তার নাম স্পষ্টভাবে উল্লেখ করুন।

পাওনাদার যদি অন্য কেউ হয়, তাহলে তার এনআইডি বা ব্যাংক অ্যাকাউন্ট অনুসারে সঠিক নাম লেখা গুরুত্বপূর্ণ। এতে করে তিনি চেকটি সরাসরি তার যেকোনো ব্যাংক অ্যাকাউন্টে জমা দিয়ে টাকা সংগ্রহ করতে পারবেন।

ধাপ ৩: টাকার পরিমাণ (সংখ্যায়)

টাকার পরিমাণ লেখার সময় নিরাপত্তা বৃদ্ধির জন্য কিছু নিয়ম মেনে চলতে হবে। Tk. লেখা বক্সে অংকে টাকার পরিমাণ লিখুন। টাকার অংকের শেষে /- চিহ্ন ব্যবহার করুন এবং শুরুতে ও শেষে Inverted Comma (কমা) ব্যবহার করুন। যেমন “১০,০০০/-” টাকা। এর ফলে টাকার পরিমাণ পরিবর্তন করা কঠিন হবে এবং জালিয়াতির সম্ভাবনা কমে যাবে।

ধাপ ৪: টাকার পরিমাণ (কথায়)

চেকের মূল অংশে “TAKA” লেখার পর টাকার পরিমাণ অবশ্যই কথায় লিখতে হবে। পরিমাণ স্পষ্টভাবে এবং সাবলীলভাবে লেখা গুরুত্বপূর্ণ, যাতে কোন ভুল বোঝাবুঝি না হয়। পরিমাণ লেখার শুরুতে এবং শেষে খালি জায়গা থাকলে একটি লাইন টেনে দিন। এটি জালিয়াতি রোধে সাহায্য করবে। উদাহরণস্বরূপ, “দশ হাজার টাকা মাত্র”।

ধাপ ৫: স্বাক্ষর

চেকের নিচের ডানদিকে আপনার স্বাক্ষর করুন। স্বাক্ষরটি আপনার ব্যাংক অ্যাকাউন্টে থাকা স্বাক্ষরের সাথে মিলে যেতে হবে।

ধাপ ৬: পেছনের পৃষ্ঠায় অতিরিক্ত স্বাক্ষর

নিজের নামের চেক দিয়ে টাকা উত্তোলনের জন্য চেকের পেছনে স্বাক্ষরের প্রয়োজন নেই। কিন্তু, অন্য কাউকে টাকা উত্তোলনের অনুমতি দিতে হলে চেকের পেছনে অতিরিক্ত দুটি স্বাক্ষর দিতে হবে। এই অতিরিক্ত স্বাক্ষরকেই ‘চেক অনুমোদন’ বলা হয়।

পাওনাদার বা অন্য কাউকে চেক দিয়ে অর্থ পরিশোধ করার ক্ষেত্রে এই অতিরিক্ত স্বাক্ষরের প্রয়োজন নেই। অনুমোদিত চেক যেকোনো ব্যক্তি উত্তোলন করতে পারবেন তাই কেবলমাত্র বিশ্বস্ত ব্যক্তির কাছেই অনুমোদিত চেক প্রদান করুন।

চেক লেখার সতর্কতা

চেক লেখায় কোন ধরনের কাটা ছেড়া করা যাবে না। যদি ভুলক্রমে কোথাও লেখা ভুল হয়ে যায়, তাহলে একটানে লেখাটি কেটে পাশে স্পষ্ট করে লিখে দিন এবং কাটা-ছেঁড়ার পাশে একটি স্বাক্ষর প্রদান করুন। তবে, চেকের খালি অংশে কখনোই কোন কারণ ছাড়া স্বাক্ষর করবেন না। কেবলমাত্র বিশ্বস্ত ব্যক্তিদের কাছেই চেক প্রদান করুন।

চেকের জালিয়ারি রোধ করতে চেকের উপরে বামপাশে “A/C Payee Only” লিখুন। তাহলে এই চেকটি আপনি অথবা চেকে উল্লেখিত ব্যক্তি ছাড়া আর কেউ কোনভাবে টাকা উত্তোলন করতে পারবে না।

আমাদের শেষকথা

চেক লেখার নিয়ম সম্পর্কে আজকের আলোচনার মাধ্যমে আমরা আশা করি আপনারা সঠিকভাবে চেক লিখতে পারবেন। মনে রাখবেন, স্পষ্ট লেখা, সঠিক তথ্য, এবং নিরাপত্তা ঝুঁকি সম্পর্কে সচেতনতা – এই তিনটি বিষয়ই নিরাপদ ও সফল চেক লেনদেনের জন্য অপরিহার্য।

উপরোক্ত নিয়মগুলো অনুসরণ করার পাশাপাশি, নিয়মিত আপনার ব্যাংক অ্যাকাউন্টের লেনদেন পর্যবেক্ষণ করুন এবং কোন সন্দেহজনক লেনদেন দেখা গেলে দ্রুত আপনার ব্যাংকের সাথে যোগাযোগ করুন।

Leave a Comment