অফশোর ব্যাংকিং এর সাথে আগের লেখায় আপনাদের পরিচয় করিয়ে দিয়েছি। বাংলাদেশে অফশোর ব্যাংকিং এর কনসেপ্ট তুলনামূলকভাবে নতুন হওয়াতে এই বিষয়ে সাধারণ গ্রাহকের আগ্রহ অনেক বিশেষত যারা বিদেশে আছেন কিন্তু বাংলাদেশে নিয়মিত অর্থ পাঠান তাদের জন্য অফশোর ব্যাংকিং বিনিয়োগের একটি নতুন মাধ্যম হতে পারে। আজকের লেখায় আমরা অফশোর ব্যাংকিং এর সুবিধা অসুবিধা বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে আলোচনা করবো।
অফশোর ব্যাংকিং এর সুবিধা
অফশোর ব্যাংকিং বিদেশে অর্থ লেনদেনের কাজটা এখন অনেক সহজ করে দিয়েছে। অফশোর ব্যাংকিং এর মাধ্যমে একজন গ্রাহক যেসকল সুবিধা পাবেন সেগুলো নিম্নরুপ:
প্রবাসীদের রেমিট্যান্স বৃদ্ধি: অফশোর ব্যাংকিং প্রবাসীদের জন্য তাদের আয় দেশে পাঠানো আরও সহজ ও আকর্ষণীয় করে তুলবে। প্রবাসীরা এখন সহজে নিজের নামে বাংলাদেশের ব্যাংকগুলোতে অফশোর ব্যাংকিং একাউন্ট খুলতে পারবে এবং সেখানে বিদেশ থেকে টাকা পাঠাতে পারবে। এমনকি উক্ত অ্যাকাউন্ট এফডিআরও করতে পারবে।
বৈদেশিক বিনিয়োগ বৃদ্ধি: বিদেশে নিবন্ধিত এবং পরিচালিত কোম্পানিসমূহ/ফার্ম, বিদেশি প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারী
বাংলাদেশের ইপিজেডের (রপ্তানি প্রক্রিয়াকরণ অঞ্চল, বেসরকারি ইপিজেড, অর্থনৈতিক অঞ্চল এবং হাই টেক পার্ক) টাইপ-এ শ্রেণীভুক্ত ইউনিটসমূহ অফশোর ব্যাংকিং অ্যাকাউন্ট খুলতে পারবে যার ফলে বিদেশী বিনিয়োগ বৃদ্ধি পাবে।
একাধিক বৈদেশিক মুদ্রা সমর্থন: অফশোর ব্যাংকিং এ একাধিক বৈদেশিক মুদ্রায় অ্যাকাউন্ট খোলা যাবে। আপনি চাইলে ডলার, ইউরো, ব্রিটিশ পাউন্ডসহ আরও অন্যান্য বৈদেশিক মুদ্রায় অ্যাকাউন্ট পরিচালনা করতে পারবেন।
করমুক্ত সুবিধা: অফশোর ব্যাংকিং অ্যাকাউন্টের আমানত এবং সুদের উপর কোন আয়কর দিতে হবে না। এছাড়া এই অ্যাকাউন্টের স্থিতির উপর আবগারী শুল্কও মওকুফ করা হয়েছে।
ফান্ড ট্রান্সফার: অফশোর ব্যাংকিং অ্যাকাউন্টের অর্থ আপনি সহজেই বিদেশে আপনার সুবিধামতো বৈদেশিক মুদ্রায় পাঠাতে পারবেন এবং বাংলাদেশের অন্য যেকোন ব্যাংকে ফান্ড ট্রান্সফার করে টাকা উত্তোলন করতে পারবেন। বাংলাদেশের মানি লন্ডারিং আইন অনুযায়ী বিদেশে টাকা পাঠানো বেশ জটিল। অফশোর ব্যাংকিং এই কাজটা সহজ করে দিয়েছে। এখন আপনি সহজেই বিদেশে অর্থ পাঠাতে ও আনতে পারবেন।
অফশোর ব্যাংকিং এর অসুবিধা
সববিষয়েরও সুবিধা ও অসুবিধা থাকে। অফশোর ব্যাংকিং এর কিছু ঝুঁকি বা অসুবিধা আছে যেগুলো অ্যাকাউন্ট করার আগেই জেনে নেওয়া ভালো।
অ্যাকাউন্ট পরিচালনায় জটিলতা: অফশোর ব্যাংকিং বাংলাদেশের তফসিল ব্যাংকের একটি উইং। কনভেনশনাল ব্যাংকিং সিস্টেম থেকে একটু আলাদা এবং এই অ্যাকাউন্ট পরিচালনার জন্য বিশেষ আইন প্রনয়ণ করা হয়েছে। তাই অফশোর ব্যাংকিং পরিচালনা করতে হলে নিয়মিত আইনগত বিষয়গুলো সম্পর্কে অবগত থাকতে হবে নতুবা পরবর্তীতে অ্যাকাউন্ট পরিচালনায় জটিলতা দেখা দিতে পারে।
দক্ষ কর্মীর স্বল্পতা: অফশোর ব্যাংকিং অ্যাকাউন্ট পরিচালনার জন্য এখনও বাংলাদেশে পর্যাপ্ত ব্যাংকার তৈরি হয়নি। তাই এই বিষয়ে যেকোন তথ্য বা সেবা পেতে অনেকসময় সমস্যায় পড়তে হতে পারে।
দূরত্ব এবং অ্যাক্সেসযোগ্যতা: আমেরিকা ও ইউরোপে দেশসমূহের সাথে বাংলাদেশের সময়ের পার্থক্য এই ব্যাংক অ্যাকাউন্ট পরিচালনায় অসুবিধা হতে পারে। এছাড়াও আপনি সশরীরে ব্যাংকে গেলে যেসেবা নিশ্চিত করতে পারবেন। অনলাইনে সেই সেবা সবসময় পাওয়া যায় না। তাই দূরত্বও এই ধরনের ব্যাংক অ্যাকাউন্ট পরিচালনায় বাঁধা।
প্রযুক্তিগত ঝুঁকি: অফশোর ব্যাংকিং সম্পূর্ণই প্রযুক্তি নির্ভর। আর প্রযুক্তি নির্ভর অর্থনৈনিত লেনদেনে হ্যাকিং ঝুঁকি থাকেই। এছাড়াও ইন্টারনেট দুর্বলতা বা বিচ্ছিন্নতার ঘটনা কম ঘটলেও ঘটে। যা প্রয়োজনীয় সময়ে লেনদেনে দীর্ঘায়িত করে।
মুদ্রার মান উঠানামা: বৈদেশিক মুদ্রার দাম সবসময় একরকম থাকে না। কখনও বাড়ে কখনও কমে। তাই বৈদেশিক মুদ্রায় ব্যাংক অ্যাকাউন্ট করলে বৈদেশিক মুদ্রার বিনিময় হারের কারণে আপনার অ্যাকাউন্টে স্থিতির পরিমাণ পরিবর্তীত হয়ে যেতে পারে।
শেষকথা
অফশোর ব্যাংকিং ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠান উভয়ের জন্যই বেশ কিছু আর্থিক সুবিধা প্রদান করে। তবে, এর কিছু অসুবিধা ও ঝুঁকিও রয়েছে যা সিদ্ধান্ত নেওয়ার আগে বিবেচনা করা গুরুত্বপূর্ণ। আর আপনি যদি অফশোর ব্যাংকিং অ্যাকাউন্ট খুলতে চান তাহলে অফশোর ব্যাংকিং অ্যাকাউন্ট খোলার নিয়ম লেখাটি পড়তে পারেন।