what is offshore banking

বাংলাদেশ ব্যাংক বাংলাদেশের অফশোর ব্যাংকিং কার্যক্রম নিয়ন্ত্রণ, তদারকি এবং উন্নয়নের লক্ষ্যে সম্প্রতি অফশোর ব্যাংকিং আইন ২০২৪ আইন প্রণয়ন করেছে। এই আইনটি বাংলাদেশে অফশোর ব্যাংকিং কার্যক্রম পরিচালনার জন্য একটি আনুষ্ঠানিক কাঠামো তৈরি করে। আইনের উদ্দেশ্য হল বৈদেশিক বিনিয়োগ আকর্ষণ, অর্থনৈতিক উন্নয়ন বৃদ্ধি এবং বাংলাদেশকে আন্তর্জাতিক আর্থিক কেন্দ্রে পরিণত করা। কিভাবে অফশোর ব্যাংকিং কার্যক্রম পরিচালিত হবে এবং আমানতকারী কী ধরনের সুবিধা পাবে সবকিছুই নতুন আইনে উল্লেখ করা হয়েছে। কিন্তু প্রশ্ন হলো এই অফশোর ব্যাংকিংটা আসলে কী?

আমরা এই লেখায় অফসোর ব্যাংকিং কী এবং এর বৈশিষ্ট্য সম্পর্কে ধারণা নিবো।

অফশোর ব্যাংকিং কি?

অফশোর ব্যাংকিং বলতে বোঝায় এমন এক ধরণের ব্যাংকিং ব্যবস্থা যেখানে একজন ব্যক্তি তার নিজের দেশ ব্যতীত অন্য কোন দেশে অবস্থিত ব্যাংকে অ্যাকাউন্ট খুলে টাকা রাখতে পারেন।

বাংলাদেশের অফশোর ব্যাংকিং আইন ২০২৪ এই অফশোর ব্যাংকিং এর সংজ্ঞায় বলা হয়েছে যে, “অফশোর ব্যাংকিং” অর্থ বহিঃউৎস এবং অনুমোদিত বিশেষায়িত অঞ্চলে পরিচালিত শতভাগ বিদেশি মালিকানাধীন প্রতিষ্ঠান এবং বাংলাদেশ ব্যাংক কর্তৃক অনুমোদিত উৎস হইতে বৈদেশিক মুদ্রায় প্রাপ্ত তহবিল দ্বারা এই আইনে বর্ণিত শর্তাধীনে বাংলাদেশ ব্যাংক কর্তৃক, সময় সময়, জারিকৃত নির্দেশনা অনুযায়ী অনিবাসী বা, ক্ষেত্রমত, বাংলাদেশে নিবাসী ব্যক্তির সহিত পরিচালিত ব্যাংকিং কার্যক্রম।”

উদাহরণস্বরূপ, অনাবাসী বাংলাদেশী নাগরিক (এনআরবি), বাংলাদেশী বংশোদ্ভূত ব্যক্তি (বিদেশী নাগরিকত্বধারী বাংলাদেশী), বিদেশী নাগরিক, বিদেশে নিবন্ধিত ও পরিচালিত কোম্পানি/ফার্ম, বিদেশী প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারী ইত্যাদি এই অফশোর ব্যাংক ইউনিট (ওবিইউ) অ্যাকাউন্ট খুলতে পারবেন।

অফশোর ব্যাংকিং এর কিছু বৈশিষ্ট্য

বাণিজ্যিক ব্যাংকিং থেকে কিছুটা আলাদা অফশোর ব্যাংকিং এর কিছু স্বতন্ত্র বৈশিষ্ট্য থাকে যার উল্লেখযোগ্যগুলো নিচে আলোচনা করা হলো।

গ্রাহক: বাংলাদেশে অফশোর ব্যাংকিং এর গ্রাহক সবাই হতে পারবেন না। অনাবাসী বাংলাদেশী (এনআরবি), বিদেশী নাগরিক এবং বাংলাদেশী বংশোদ্ভূত ব্যক্তিরা (বিদেশী নাগরিকত্বধারী), বিদেশে নিবন্ধিত কোম্পানি/ফার্ম এবং বিদেশী প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীরা, বাংলাদেশের ইপিজেড, বেসরকারি ইপিজেড, অর্থনৈতিক অঞ্চল এবং হাই-টেক পার্কের টাইপ এ ইউনিটগুলো বাংলাদেশের অফশোর ব্যাংকিং একাউন্টে হিসাব খুলতে পারবেন।

নিয়ন্ত্রণ: অফশোর ব্যাংকিং আইন ২০২৪ এর মাধ্যমে বাংলাদেশে পরিচালিত অফশোর ব্যাংকিং ইউনিটগুলো বাংলাদেশ ব্যাংক নিয়ন্ত্রণ করে থাকে।

গোপনীয়তা: অনেক অফশোর দেশে কঠোর গোপনীয়তা আইন রয়েছে যা গ্রাহকদের আর্থিক তথ্য রক্ষা করে। এই আইনগুলো তৃতীয় পক্ষের সাথে শেয়ার করে না এবং গ্রাহকদের তাদের গোপনীয়তা লঙ্ঘনের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নেওয়ার অধিকার প্রদান করে।

মুদ্রা: অফশোর ব্যাংকিং এর সবচেয়ে বড় সুবিধা হচ্ছে বৈদেশিক মুদ্রায় একাউন্টে অর্থ গচ্ছিত রাখা যায়। বর্তমান বাংলাদেশে অফশোর ব্যাংকিং এর মার্কিন ডলার (USD), ব্রিটিশ পাউন্ড (GBP), কানাডিয়ান ডলার (CAD), অস্ট্রেলিয়ান ডলার (AUD), ও ইউরোতে (EURO) একাউন্ট খোলা যায়।

কর অবকাশ: অফশোর এফডিআর থেকে অর্জিত সুদ (Interest) এর উপর কোন কর দিতে হবে না।

অর্থ স্থানান্তর: অফশোর একাউন্টের টাকা আপনি যেকোনো বাংলাদেশি ব্যাংক অ্যাকাউন্টে তুলে নিতে বা স্থানান্তর করতে পারবেন।

শেষকথা

নতুন অফশোর ব্যাংকিং আইন পাশ হওয়ার পরে এবং কর অবকাশের সুবিধা থাকায় অনেকেই অফশোর ব্যাংকিং এ আগ্রহ দেখাচ্ছেন। তাই আমরা অফশোর ব্যাংকিং সম্পর্কে এই ওয়েবসাইটে নিয়মিত আলোচনা করবো যাতে আপনার অফশোর ব্যাংকিং এর সুবিধা-অসুবিধা, গ্রাহকের যোগ্যতা, কিভাবে অফশোর ব্যাংকিং একাউন্ট খুলতে হয় এবং কিভাবে অফশোর একাউন্ট পরিচালিত হবে সববিষয়ে জানতে পারেন।

About The Author

Leave a Reply

× Contact Support!