ব্যাংক বন্ধ হলে আমানতকারী ২লক্ষ টাকা বীমা সুবিধা পাবেন

কামরুল হাসান নূর

Updated on:

The Bank Deposit Insurance Amendment Act 2023

ব্যাংকের আমানতকারীর আমনত সুরক্ষার্থে ব্যাংক আমানত বীমা আইন ২,০০০ সংশোধন করে নতুন ব্যাংক আমানত বীমা (সংশোধন) আইন, ২০২৩ (The Bank Deposit Insurance Amendment Act 2023) প্রণয়ন করা হয়েছে যেখানে কোন ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান যদি বন্ধ বা অবসায়ন হয়ে যায় সেক্ষেত্রে উক্ত ব্যাংক বা আর্থিক প্রতিষ্ঠানের প্রত্যেক আমানতকারীকে তৎকর্তৃক আমানতকৃত অর্থের সমপরিমাণ অথবা ২ (দুই) লক্ষ টাকা, যাহা নিম্নতর হয়, অথবা বাংলাদেশ ব্যাংক কর্তৃক, সরকারের পূর্বানুমোদনক্রমে, নির্ধারিত অর্থ আমানত সুরক্ষা ট্রাস্ট তহবিল হতে প্রদান করবে।

বাংলাদেশ ব্যাংক আমানত সুরক্ষা ট্রাস্ট তহবিল নামে একটি তহবিল সংরক্ষণ করবে এবং এই তহবিলের অর্থ বাংলাদেশ ব্যাংক কর্তৃক অনুমোদিত কোনো খাতে বিনিয়োগ করা যাবে।

তহবিলে নিম্নবর্ণিত অর্থ জমা হবে। যথা:
(ক) বীমাকৃত ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান হইতে প্রাপ্ত অর্থ
(খ) তহবিলের অর্থ বিনিয়োগ হতে প্রাপ্ত আয়
(গ) ব্যাংক আমানত বীমা (সংশোধন) আইন, ২০২৩ এর ধারা ৭ এর অধীন অবসায়িত ব্যাংক বা আর্থিক প্রতিষ্ঠান হতে প্রাপ্ত অর্থ
(ঘ) অন্য কোনো উৎস হইতে প্রাপ্ত আয়।

বীমাকৃত ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানের প্রিমিয়াম

(১) প্রত্যেক বীমাকৃত ব্যাংক বা আর্থিক প্রতিষ্ঠান উহার আমানতের বীমাযোগ্য আমানতের উপর প্রত্যেক বৎসর সেইরূপ হারে তহবিলে প্রিমিয়াম প্রদান করিবে যেইরূপ হার বাংলাদেশ ব্যাংক, সময় সময়, নির্ধারণ করবে। তবে শর্ত থাকে যে, বাংলাদেশ ব্যাংক, সরকারের পূর্বানুমোদনক্রমে, প্রিমিয়ামের হার হ্রাস বৃদ্ধি করতে পারবে।
(২) বীমাকৃত ব্যাংক বা আর্থিক প্রতিষ্ঠান উহার ব্যয় খাত হইতে প্রিমিয়াম পরিশোধ করবে।
(৩) বাংলাদেশ ব্যাংক কর্তৃক নির্ধারিত সময় ও পদ্ধতিতে প্রিমিয়াম পরিশোধ করতে হবে।
(৪) কোনো বীমাকৃত ব্যাংক বা আর্থিক প্রতিষ্ঠান প্রিমিয়াম প্রদানে ব্যর্থ হইলে বাংলাদেশ ব্যাংক উহার নিকট রক্ষিত উক্ত ব্যাংক বা আর্থিক প্রতিষ্ঠানের হিসাব হতে সমপরিমাণ অর্থ প্রিমিয়াম বাবদ কর্তন করে উক্ত ব্যাংক বা আর্থিক প্রতিষ্ঠানের তহবিলে জমাদানের নির্দেশ প্রদান করতে পারবে।

প্রিমিয়াম প্রদানে ব্যর্থতার জন্য ব্যবস্থা গ্রহণ

(১) কোনো বীমাকৃত ব্যাংক বা আর্থিক প্রতিষ্ঠান প্রিমিয়াম প্রদানে ব্যর্থ হলে বাংলাদেশ ব্যাংক উহার নিকট রক্ষিত উক্ত ব্যাংক বা আর্থিক প্রতিষ্ঠানের হিসাব হতে সমপরিমাণ অর্থ প্রিমিয়াম বাবদ কর্তন করিয়া উক্ত ব্যাংক বা আর্থিক প্রতিষ্ঠানের তহবিলে জমাদানের নির্দেশ প্রদান করতে পারবে, তবে এইরূপ ক্ষেত্রে বিলম্বিত সময়ের জন্য নির্ধারিত প্রিমিয়ামের উপর ব্যাংক রেট অনুযায়ী বাংলাদেশ ব্যাংক সুদ আরোপ করবে।
(২) কোনো বীমাকৃত ব্যাংক বা আর্থিক প্রতিষ্ঠান পর পর ২(দুই) বার প্রিমিয়াম পরিশোধে ব্যর্থ হলে, বাংলাদেশ ব্যাংক, উক্ত ব্যাংক বা আর্থিক প্রতিষ্ঠানকে শুনানির সুযোগ প্রদানপূর্বক, সরকারি গেজেটে প্রজ্ঞাপন দ্বারা, প্রজ্ঞাপনে উল্লিখিত সময়ের জন্য, আমানত গ্রহণ হতে বিরত থাকবার নির্দেশ প্রদান করবে।
(৩) উপধারা (২) এ উল্লিখিত প্রিমিয়াম পরিশোধে ব্যর্থতার পুনরাবৃত্তির ক্ষেত্রে, ট্রাস্টি বোর্ড, সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানকে অবসায়ন করিবার পদক্ষেপ গ্রহণের জন্য বাংলাদেশ ব্যাংককে পরামর্শ প্রদান করবে।

যেভাবে আমানতকারীর অর্থ পরিশোধ করা হবে?

(১) কোনো বীমাকৃত ব্যাংক বা আর্থিক প্রতিষ্ঠানের অবসায়নের আদেশ প্রদান করা হলে, অবসায়িত ব্যাংক বা আর্থিক প্রতিষ্ঠানের প্রত্যেক আমানতকারীকে তৎকর্তৃক আমানত অর্থের সমপরিমাণ অথবা ২ (দুই) লক্ষ টাকা, যাহা নিম্নতর হয়, অথবা বাংলাদেশ ব্যাংক কর্তৃক, সরকারের পূর্বানুমোদনক্রমে, নির্ধারিত অর্থ আমানত সুরক্ষা ট্রাস্ট তহবিল
হইতে প্রদান করতে হবে।

(২) অবসায়িত ব্যাংক বা আর্থিক প্রতিষ্ঠানে কোনো আমানতকারীর একাধিক হিসাব থাকলে উপ-ধারা (১) এর বিধান প্রযোজ্য হইবে এবং অবসায়িত ব্যাংক বা আর্থিক প্রতিষ্ঠানের নিট সম্পদের বিপরীতে অবসায়ক কর্তৃক কোনো আমানতকারীকে উপ-ধারা (১) এর অধীন প্রাপ্য অর্থের অতিরিক্ত অর্থ প্রদান করতে হলে, তাহা প্রদত্ত অর্থের সহিত সমন্বয় করতে হবে এবং অতিরিক্ত অর্থ প্রাপ্য না হলে উপ-ধারা (১) এর অধীন প্রদত্ত অর্থ চূড়ান্ত পরিশোধ হিসাবে গণ্য হবে।

(৩) অবসায়িত ব্যাংক বা আর্থিক প্রতিষ্ঠানের অবসায়ক, যে নামেই অভিহিত হউক না কেন, তাহার কার্যভার গ্রহণের পর অনধিক ৯০ (নব্বই) দিনের মধ্যে বাংলাদেশ ব্যাংক কর্তৃক নির্ধারিত ছকে আমানতকারীর আমানতের তালিকা বাংলাদেশ ব্যাংকের নিকট দাখিল করবে।

(৪) ট্রাস্টি বোর্ড, উপ-ধারা (৩) এর অধীন আমানতকারীদের তালিকা প্রাপ্তির পর, অনধিক ৯০ (নব্বই) দিনের মধ্যে, উপ-ধারা (১) এর অধীন আমানতকারীদের প্রাপ্য অর্থ তহবিল হতে পরিশোধের ব্যবস্থা গ্রহণ করবে।

(৫) তহবিলে জমাকৃত অর্থের পরিমাণ পরিশোধিতব্য অর্থের চাইতে কম হলে সরকার ঘাটতি অর্থ বাংলাদেশ ব্যাংক হইতে ব্যাংক রেটে ধার করিয়া তহবিলে প্রদান করবে।

(৬) এই ধারায় যাহা কিছু থাকুক না কেন, আমানতকারীর আমানতের পরিমাণ নির্ধারণকালে আইনগতভাবে আমানতকারীর নিকট বীমাকৃত ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানের কোনো পাওনা থাকলে উহা সমন্বয়পূর্বক আমানতকারীর পাওনা নির্ধারণ করতে হবে।

ব্যাংক আমানত বীমা (সংশোধন) আইন, ২০২৩ ডাউনলোড করতে নিচের ডাউনলোড বাটনে ক্লিক করুন

Leave a Comment