যেকোন কারণেই হোক পাসপোর্ট এ ভুল তথ্যের জন্য অনেকের পাসপোর্ট সংশোধন করার প্রয়োজন পড়ে। যারা পাসপোর্ট সংশোধন ( Passport Correction ) করতে চাচ্ছেন তাদের জন্য এই লেখাটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ। পাসপোর্ট সংশোধন করতে হলে কি কি ডকুমেন্ট এর প্রয়োজন হয়, কত টাকা ফি প্রদান করতে হয় এবং কিভাবে পাসপোর্ট সংশোধন করতে হয়, সবকিছুই এই লেখায় বিস্তারিত আলোচনা করা হয়েছে।
পাসপোর্ট সংশোধনের পূর্বে যা যা করবেন
আপনাকে একটি নিদিষ্ট ডকুমেন্ট অনুযায়ী পাসপোর্ট সংশোধন আবেদন করতে হবে সেটা হতে পারে জন্ম নিবন্ধন অথবা এনআইডি তবে সংশোধন করা ক্ষেত্রে দুটি ডকুমেন্টের প্রয়োজন।
NID সংশোধন
যদি আপনার এনআইডিতে (NID) কোন ধরনের ভুল থাকে যেমন-নিজের নামের বানান, মা-বাবার নাম বা জন্মতারিখ তাহলে অবশ্যই পাসপোর্ট সংশোধন আবেদন করার পূর্বেই আপনার এনআইডি কার্ড ও জন্মতারিখ সংশোধন করে নিবেন। প্রয়োজনে NID সংশোধন প্রক্রিয়া সম্পর্কিত নিচের ভিডিওটি দেখে আসতে পারেন।
ভিডিও সোর্স: ইউটিউব চ্যানেল AFR Technology
হলফনামা (affidavit) তৈরি করুন
আপনার পাসপোর্টে যদি নিজের নাম বাবা মায়ের নাম এবং জন্মতারিখ তুল থাকে তাহলে একজন উকিলের কাছে গিয়ে হলফনামা (affidavit) করতে হুবে। পাসপোর্টের ভুল সংশোধন করার ক্ষেত্রে এটি অবশ্যই দরকার পড়বে। আপনি একজন উকিলের কাছে গেলেই বা কি কাজ সে করে দিবে এজন্য আপনাকে তাকে একটি নিদিষ্ট পরিমাণ অর্থ প্রদান করতে হবে।
পাসপোর্ট সংশোধন করার নিয়ম – Passport Correction Process
পাসপোর্ট সংশোধন করতে হলে প্রথমে আপনাকে পাসপোর্ট সংশোধনের আবেদন করতে হবে তারপর পাসপোর্ট রি-ইস্যুর জন্য অনলাইনে আবেদন করতে হবে এবং প্রিন্ট করে নির্ধারিত ফি জমা প্রদান পূর্বক প্রয়োজনীয় নথিসহকারে নির্ধারিত তারিখে পাসপোর্ট অফিসে জমা দিতে হবে। নিচের ধাপসমূহ অনুসরণ করে পাসপোর্ট সংশোধন প্রক্রিয়া সম্পন্ন করুন।
ধাপ ১: পাসপোর্ট সংশোধন ফরম পূরণ করুন
পাসপোর্ট এর জন্য সংশোধন আবেদন করতে হলে অবশ্যই আপনাকে সংশোধন ফরম পূর্ণাঙ্গভাবে পূরণ করতে হবে। এ ফরম পূরণ ছাড়া আপনি কোনোভাবেই পাসপোর্ট সংশোধন আবেদন করতে পারবেন না। উত্ত ফরমটি আপনারা অনলাইন থেকে ডাউনলোড করতে পারবেন।
নিচের ছবিতে দেখানো রেড মার্ক গুলো অবশ্যই লক্ষ্য দিয়ে পুরণ করতে হবে। অর্থাৎ ডানপাশে আপনার পাসপোর্ট রি ইস্যু করার প্রয়োজনীয় ফি প্রদান করার তথ্য যেমন ব্যাংক নাম, ব্যাংক শাখা, রশিদ নাম্বার ইত্যাদি সঠিকভাবে পুরণ করতে হবে। এটা অনলাইন আবেদন করা শেষে যখন আপনি ব্যাংকে টাকা জমা দিবেন ব্যাংক থেকে জমা রশিদটি সংগ্রহ করে সেই অনুযায়ী তথ্য গুলো পুরণ করবেন।
এবং নিচে দেখানো পাসপোর্ট বর্তমানে প্রদশিত এর ঘরে আপনার বর্তমানে ভুল লিপিবদ্ধ করুন এবং ডান পাশে সংশোধিত ঘরে সংশোধনকৃত তথ্যটি লিপিবদ্ধ করুন যেমন ধরুন আপনার নামটি ভুল রয়েছে। আপনার নাম ধরুন দোলোয়ার হোসেন . এখন যদি আপনার নামটি ভুল ভাবে লিপিবদ্ধ থাকে দেলোয়ার হাসান নামে তাহলে দেলোয়ার হাসান নামটি বর্তমানে প্রদর্শিত তথোর ঘরে লিপিবদ্ধ করুন এবং সংশোধিততথ্যের ঘরে প্রকৃত নামটি লিপিবদ্ধ করুন। এভাবে আপনি যে কয়টি তথ্য সংশোধন করতে চান তা লিপিবদ্ধ করতে হবে।
পাসপোর্ট সংশোধন করতে যেসকল কাগজপত্রাদি প্রয়োজন
- আবেদনপত্রের সারংশের প্রিন্ট কপি (অ্যাপয়েন্টমেন্টসহ প্রযোজ্য ক্ষেত্রে)
- অনলাইন আবেদনপত্রের প্রিন্ট কপি
- পাসপোর্ট সংশোধন এর আবেদন ফরম
- সনাক্তকরণ ডকুমেন্ট (জাতীয় পরিচয় পত্র বা অনলাইন জন্ম নিবন্ধন – মেইন কপি ও ফটোকপি)
- ফি জমা রশিদ
- পূর্ববর্তী পাসপোর্ট এর মেইন কপি এবং ডাটা পেজের প্রিন্ট কপি
- সরকারি চাকরিজীবীদের ক্ষেত্রে Go/NOC
তথ্য সংশোধনের ক্ষেত্রে প্রয়োজনীয় কাগজপত্র
- বৈবাহিক অবস্থা – নিকাহনামা
- ঠিকানা – বিদ্যুৎ বিলের কপি, টেলিফোন বিলের কপি, পুলিশ ক্লিয়ারেন্স
- পেশা – কর্মক্ষেত্রের প্রত্যয়নপত্র
- নিজের নাম / বয়স – হলফনামা, সাটিফিকেট
- পিতা/মাতার নাম – হলফনামা, সাটিফিকেট. পিতা মাতার NID – মেইন কপি ও ফটোকপি
- পাসপোর্ট হারিয়ে গেলে – GD এর মুল কপি ও ফটোকপি
- ১৮ বছরের নিচে হলে নিজের অনলাইন জন্ম সনদ ও পিতা মাতার NID – মেইন কপি ও ফটোকপি
- ০৬ বছর বয়সের নিম্নের আবেদনের ক্ষেত্রে ৩ আর (3R Size) সাইজের (ল্যাব প্রিন্ট গ্রে ব্যাকগ্রউন্ড) ছবি )
- ১৫ বছরের নিচে হলে পিতা মাতার পাসপোর্ট সাইজের ছবি
- চেয়ারম্যান প্রতায়ন পত্র
ধাপ ২: অনলাইনে পাসপোর্ট আবেদন ফরম পূরণ
পাসপোর্ট সংশোধন ফরম পুরণ করার পরে আপনাকে অনলাইনে ই-পাসপোর্ট অফিশিয়াল ওয়েবসাইটে একটি একাউন্ট তৈরি করতে হবে এবং সেখান থেকে নতুন করে ই পাসপোর্ট এর জন্য আবেদন করতে হবে। এই কাজটি আপনি যে কোনো কম্পিউটার দোকানে করতে পারেন অথবা নিজে কম্পিউটারে বা মোবাইলে অনলাইনে করতে পারেন।
পাসপোর্ট ইস্যুর জন্য আবেদন করার সময় অবশ্যই আপনার পেমেন্ট মেথড টি অফলাইন পেমেন্ট হিসেবে সিলেক্ট করুন এতে করে আপনার জন্য অনেকটা সহজ হয়ে যাবে। পরবর্তীতে আপনি অফলাইন পেমেন্ট ধরে যে কোন ব্যাংকে চালানের মাধ্যমে ফি প্রদান করতে পারবেন।
সঠিকভাবে অনলাইন আবেদনপত্রটি সাবমিট করার পরে আপনি দুটি ডকুমেন্ট দেখানো হবে। ১/ Print Summary ২/Application Form for printing। উক্ত দু’টি ডকুমেন্ট আপনি আপনার কম্পিউটারে ডাউনলোড করে নিবেন এবং যে কোনো কম্পিউটার দোকান থেকে প্রিন্ট করে নিবেন।
ধাপ ৩: পাসপোর্ট আবেদন ফি প্রদান
উক্ত ফরম দুইটি প্রিন্ট করে ব্যাংকে যেয়ে আপনার জন্য নির্ধারিত ফি প্রদান করবেন এবং জমা রশিদ সংগ্রহ করবেন। বর্তমানে প্রায় সকল ব্যাংকেই পাসপোর্ট আবেদন ফি জমা দেওয়া যায়। এছাড়াও আপনি অনলাইনে A Challan এর মাধ্যমে সরাসরি নিজেও পাসপোর্ট ফি জমা দিতে পারেন। নিচের টেবিলে পাসপোর্ট আবেদন ফি এর পরিমাণ দেওয়া হলো।
ডেলিভারী | ৪৮ পাতা | ৪৮ পাতা | ৬৪ পাতা | ৬৪ পাতা |
---|---|---|---|---|
৫ বছর | ১০ বছর | ৫ বছর | ১০ বছর | |
সাধারণ (Ordinary) | ৪০২৫ টাকা | ৫৭৫০ টাকা | ৬৩২৫ টাকা | ৮০৫০ টাকা |
জরুরী (Express) | ৬৩২৫ টাকা | ৮০৫০ টাকা | ৮৬২৫ টাকা | ১০৩৫০ টাকা |
অতি জরুরী (Super Express) | ৮৬২৫ টাকা | ১০৩৫০ টাকা | ১২০৭৫ টাকা | ১৩৮০০ টাকা |
ধাপ ৪: পাসপোর্ট অফিসে নথিসমূহ সাবমিট
অনলাইনে আবেদন এবং নির্ধারিত পরিমাণ ফি প্রদানের পরে আপনার নির্ধারিত পাসপোর্ট অফিসে আবেদন ফরম, পাসপোর্ট ফি জমা রশিদ এবং প্রয়োজনীয় সকল নথি নিয়ে আপনার জন্য নির্ধারিত তারিখে পাসপোর্ট অফিসে জমা দিন এবং আপনার ফিঙ্গারপ্রিন্ট ও অন্যান্য বায়োমেট্রিক ডাটা প্রদান করুন।
শেষ কথা
পাসপোর্ট সংশোধনের সকল তথ্য জমা দেওয়ার পরে আপনার কাজ শেষ। এখন প্রশ্ন আসতে পারে কতদিনের ভিতর আপনার পাসপোর্ট হাতে পাবেন। যদিও পাসপোর্টের ধরণ অনুসারে নির্ধারিত সময়ের ভিতরেই পাসপোর্ট পাওয়ার কথা কিন্তু বাস্তবে পাসপোর্ট সংশোধন করতে একটু বেশি সময় নেয়। তাই আপনাকে ধৈর্য্যধারণ করে অপেক্ষা করতে হবে।