Offshore Tax Amnesty

Offshore Tax Amnesty কখন প্রযোজ্য?

অর্থ আইন, ২০২২ এর মাধ্যমে আয়কর অধ্যাদেশে Offshore Tax Amnesty এর বিধান অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। এ বিধান প্রবর্তনের ফলে কোন করদাতা নির্ধারিত সময়ের মধ্যে ৭% হারে কর পরিশোধ করে তার অপ্রদর্শিত বৈদেশিক সম্পদ প্রদর্শন করতে পারবেন এবং অপ্রদর্শিত বৈদেশিক সম্পদের উৎস নিয়ে বাংলাদেশের কোন কর্তৃপক্ষ কোন প্রশ্ন উ্থাপন করতে পারবে না।

সংযোজিত বিধানানুযায়ী, আয়কর অধ্যাদেশ বা বাংলাদেশে বলবৎ অন্যকোন আইনে যা কিছুই থাকুক না কেন, কোন করদাতা ২০২২-২০২৩ করবর্ষের রিটার্ন দাখিলের পূর্বে নিম্নোক্ত টেবিলে বর্ণিত বাংলাদেশের বাইরে অবস্থিত অপ্রদর্শিত সম্পদের বিপরীতে কর পরিশোধ করলে করদাতার সম্পদের উৎস নিয়ে কোন প্রশ্ন উথ্থাপন করা যাবেনা-

সম্পদের বর্ণনাকরহার
যেকোন পরিমাণ নগদ বা নগদ সমতুল্য, ব্যাংক জমা, ব্যাংক নোটস, ব্যাংক হিসাব, কনভারটিবল সিকিউরিটিজ এবং আর্থিক দলিলাদি (financial instruments) যদি ব্যাংকিং চ্যানেলে বাংলাদেশে প্রত্যাবর্তিত হয়।৭%

যেক্ষেত্রে এই ধারার অধীনে কোন অর্থ বিদেশ হতে দেশে প্রত্যাবর্তিত হবে, দায়িত্বপ্রাপ্ত ব্যাংক করদাতার হিসেবে উক্ত অর্থ জমার পূর্বে ৭% হারে কর কর্তন ও সরকারি কোষাগারে জমাপূর্বক অবশিষ্ট অর্থ করদাতার ব্যাংক হিসেবে জমা করবে এবং করদাতাকে কর কর্তন সম্পর্কিত একটি প্রত্যয়নপত্র প্রদান করবে।

এ ধারার অধীনে কর্তিত কর অটোমেটেড চালানের মাধ্যমে জমা করতে হবে।

যে সকল ক্ষেত্রে ৩০ জুন ২০২২ তারিখের মধ্যে এ অধ্যাদেশ বা অন্যকোন আইনের অধীনে করফাঁকি বা ফৌজদারী অপরাধ সংক্রান্ত কোন কার্যক্রম (proceeding)
গৃহীত হয়েছে সে সকল ক্ষেত্রে এ ধারার সুযোগ গ্রহণ করা যাবেনা।

এ ধারায় বর্ণিত রিটার্ন অর্থে ৮২বিবি ধারায় দাখিলকৃত ভুল সংশোধনী রিটার্ন এবং section ৭৮ এর অধীনে দাখিলকৃত সংশোধিত রিটার্ন অন্তর্ভূক্ত হবে এবং ৩০ জুন ২০২৩ তারিখের মধ্যে দাখিলকৃত হতে হবে।

উদাহরণ:

ধরা যাক, করদাতা জনাব আব্দুল জলিল ২০২২-২০২৩ করবর্ষে রিটার্ন দাখিলের পূর্বে বিদেশ হতে বাংলাদেশে ৫০ মিলিয়ন ডলার প্রত্যাবর্তন করেন। তিনি ব্যাংককে অবহিত করেন যে, তিনি আয়কর অধ্যাদেশ, ১৯৮৪ এর section 19F এর অধীনে কর পরিশোধপূর্বক উক্ত অর্থ আয়কর রিটার্নে প্রদর্শন করতে আগ্রহী।

করদাতার এমন অভিপ্রায়ের প্রেক্ষিতে ব্যাংক করদাতা কর্তৃক প্রত্যাবতিত মোট অর্থ হতে ৭% হারে কর কর্তন করে এ-চালানের মাধ্যমে জমা করবে এবং অবশিষ্ট অর্থ করদাতার হিসাবে জমা করবে। সংশ্লিষ্ট ব্যাংক করদাতাকে অর্থের উৎস সম্পর্কে কোন প্রশ্ন করতে পারবেনা এবং করদাতাকে আয়কর অধ্যাদেশ, ১৯৮৪ এর section 19F এর অধীনে কর পরিশোধ করেছেন মর্মে একটি প্রত্যয়নপত্র প্রদান করবে।

করদাতা বাংলাদেশে প্রত্যাবর্তিত অর্থ আয়কর রিটার্নে প্রদর্শন করবেন এবং কর পরিশোধের প্রত্যয়নপত্র রিটার্নের সাথে সংযুক্ত করবেন।

section 19F এর অধীনে কর পরিশোধ করলে করদাতাকে উক্ত সম্পদের জন্য 19G ধারায় বা অন্যকোন ধারায় কোন জরিমানা আরোপ করা যাবে না।

করদাতা কর্তৃক এরুপে দাখিলকৃত রিটার্ন ও রিটার্নে প্রদর্শিত সম্পদের উৎস সম্পর্কে কোন কর্তৃপক্ষ কর্তৃক কোন প্রকার প্রশ্ন উত্থাপন করা যাবে না।

এক নজরে – Offshore Tax Amnesty

প্রশ্ন উত্তর
করহার কত?৭%
section 19G এর অধীনে জরিমানা প্রযোজ্য হবে কিনা?প্রযোজ্য হবে না।
অন্যকোন প্রকার জরিমানা প্রযোজ্য হবে কিনা?না। অন্যকোন প্রকারের জরিমানা প্রযোজ্য নয়।
কার মাধ্যমে পরিশোধ করতে হবে?যে ব্যাংকের মাধ্যেমে অর্থ বাংলাদেশে প্রত্যাবর্তিত হবে সে ব্যাংকের নিকট এই ধারার অধীনে কর পরিশোধের অভিপ্রায় ব্যক্ত করতে হবে।
কীভাবে কর পরিশোধ করতে হবে?ব্যাংক প্রত্যাবর্তিত অর্থ হতে ৭% হারে কর কর্তনপূর্বক সরকারি কোষাগারে এ-চালানের মাধ্যমে জমা করবে।
ব্যাংক কি কোন প্রশ্ন উত্থাপন করতে পারবে?ব্যাংক উক্ত অর্থের উৎস সম্পর্কে কোন প্রশ্ন উত্থাপন করতে পারবে না।
বাংলাদেশের অন্যকোন কর্তৃপক্ষ কি কোন প্রশ্ন উত্থাপন করতে পারবে?না। বাংলাদেশের অন্যকোন কর্তৃপক্ষ এ বিষয়ে কোন প্রকার প্রশ্ন উথাপন করতে পারবেনা।
ব্যাংক কি কোন প্রত্যয়নপত্র ব্যাংক প্রদান করবে? এ ধারার অধীনে প্রদর্শিত অর্থ ও উৎসে কর্তিত করের পরিমাণ উল্লেখপূর্বক একটি প্রত্যয়নপত্র প্রদান করবে।
কী ধরনের সম্পদ প্রদর্শন করা যাবে?যেকোন পরিমাণ নগদ বা নগদ সমতুল্য, ব্যাংক জমা, ব্যাংক নোটস্‌, ব্যাংক হিসাব, কনভারটিবল সিকিউরিটিজ এবং আর্থিক দলিলাদি (financial instruments)
কী প্রকৃতির সম্পদ প্রদর্শন করা যাবে?আয়কর রিটার্নে অপ্রদর্শিত এবং বিদেশে অবস্থিত সম্পদ ব্যাংকিং চ্যানেলে বাংলাদেশে প্রত্যাবর্তিত হলে।
কীভাবে প্রদর্শন করা যাবে?২০২২-২০২৩ করবর্ষের জন্য প্রযোজ্য রিটার্ন প্রদর্শন করতে হবে৷
রিটার্ন বলতে কি বুঝাবে?রিটার্ন বলতে আয়কর অধ্যাদেশ, ১৯৮৪ এর ধারা ৭৫ এর অধীনে দাখিলকৃত রিটার্ন বুঝাবে এবং রিটার্ন অর্থে ৮২বিবি
ধারায় দাখিলকৃত ভুল সংশোধনী রিটার্ন ও ৭৮ ধারার অধীনে দাখিলকৃত সংশোধিত রিটার্নও অন্তর্ভূক্ত হবে।
কখন এ ধারার অধীনে কর পরিশোধ করা যাবে না?৩০ জুন ২০২৩ তারিখের পর।
এ ধারার অধীনে কর পরিশোধের কোন ব্যতিক্রম রয়েছে কিনা?যে সকল ক্ষেত্রে ৩০ জুন ২০২২ তারিখের মধ্যে এ অধ্যাদেশ বা অন্যকোন আইনের অধীনে করফাঁকি বা ফৌজদারী অপরাধ সংক্রান্ত কোন কার্যক্রম (proceeding) গৃহীত হয়েছে সে সকল ক্ষেত্রে এ ধারার সুযোগ গ্রহণ করা যাবে না।
ভুল সংশোধনী রিটার্ন বা Amended return এ প্রত্যাবর্তিত সম্পদ প্রদর্শন করা যাবে কিনা?৮২বিবি ধারায় দাখিলকৃত ভুল সংশোধনী রিটার্ন বা Amended return এ প্রত্যাবর্তিত সম্পদ প্রদর্শন করা যাবে। তবে তা ৩০ জুন ২০২৩ তারিখের মধ্যে দাখিল হতে হবে।
সংশোধিত রিটার্ন বা Revised return এ প্রত্যাবর্তিত সম্পদ প্রদর্শন করা যাবে কিনা?৭৮ ধারার অধীনে দাখিলকৃত সংশোধিত রিটার্ন বা Revised return এ প্রত্যাবর্তিত সম্পদ প্রদর্শন করা যাবে। তবে তা ৩০ জুন ২০২৩ তারিখের মধ্যে দাখিল হতে হবে।

section 19G সংযোজন- আয়কর রিটার্নে অপ্রদর্শিত অফশোর সম্পদের জন্য জরিমানা

অর্থ আইন, ২০২২ এর মাধ্যমে আয়কর অধ্যাদেশ এ নিবাসী বাংলাদেশী করদাতার আয়কর রিটার্নে অপ্রদর্শিত অফশোর বা বিদেশস্থ সম্পদের জন্য জরিমানার বিধান সংযোজন করা হয়েছে।

সংযোজিত বিধানানুযায়ী,

ক। section 19G এর অধীনে আরোপিত জরিমানা আয়কর অধ্যাদেশ, ১৯৮৪ এর অন্যকোন ধারার অধীনে বা বাংলাদেশে বলবৎ অন্যকোন আইনের অধীনে সৃষ্ট কোন দায়কে ক্ষুণ্ন করবে না। অর্থাৎ এ ধারার অধীনে জরিমানা আরোপ আয়কর অধ্যাদেশ, ১৯৮৪ এর অন্যকোন section বা অন্যকোন আইনের অধীনে গৃহীত বা গৃহীতব্য কোন কার্যক্রমকে ব্যাহত করবে না;

খ। নিবাসী বাংলাদেশী কোন ব্যক্তির রিটার্নে অপ্রদর্শিত সম্পদ বিদেশে অবস্থিত হতে হবে;

গ। করদাতাকে জরিমানা আরোপের পূর্বে শুনানীর পর্যাপ্ত সুযোগ দিতে হবে;

ঘ। করদাতার নিকট হতে সম্পদ অর্জনের প্রকৃতি (Nature) এবং উৎস সম্পর্কে ব্যাখ্যা গ্রহণ করতে হবে। অর্থাৎ কেবলমাত্র সম্পদের উৎস নয় বরং কী প্রকারে সম্পদ অর্জিত হয়েছে, যে উৎস হতে সম্পদ অর্জিত হয়েছে তার উৎস, প্রকৃতি ও অন্যান্য প্রাসঙ্গিক বিষয়াদি পর্যালোচনা করতে হবে;

ঙ। উপ-কর কমিশনারের নিকট উপস্থাপিত ব্যাখ্যা সন্তোষজনক প্রতীয়মান না হলে;

চ। উপ-কর কমিশনার করদাতার নিকট হতে বিদেশস্থ সম্পদের ন্যা্য মূল্যের সমপরিমাণ অর্থ জরিমানা হিসেবে আদায় করতে পারবেন।

ছ। করদাতার সম্পদ বা করদাতার পক্ষে অন্যকেউ করদাতার সম্পদ ধারণ করলে, সে সম্পদ বাজেয়াপ্ত বা বিক্রয় করার মাধ্যেমে এ ধারার অধীনে আরোপিত জরিমানা আদায় করা যাবে;

জ। কোন করদাতার বিদেশে অপ্রদর্শিত সম্পদ রয়েছে মর্মে উপ-কর কমিশনারের বিশ্বাস করার কারণ থাকলে তিনি বিদেশে তদন্ত পরিচালনা করতে পারবেন;

ঝ। বিদেশে অপ্রদর্শিত সম্পদ ধারণ প্রতিরোধে এবং এ ধরণের সম্পদ পুনরুদ্ধারে বোর্ড-

অ। উপযুক্ত যেকোন ব্যবস্থা গ্রহণ করতে পারবে; এবং

আ। উপ-কর কমিশনারের নিয়ে নহে এমন যেকোন আয়কর কর্তৃপক্ষকে অনুসন্ধান বা তদন্তের পরিচালনার নিমিত্ত সম্মতি প্রদান, অনুমতি প্রদান বা ব্যবস্থা গ্রহণ করতে
পারবে।

উদাহরণ:

ধরা যাক, জনাব ইন্দ্রনীল একজন নিয়মিত করদাতা। উপ-কর কমিশনার বা বোর্ডের নিকট এমন তথ্য রয়েছে যা হতে বিশ্বাস করার যুক্তিসংগত কারণ রয়েছে যে জনাব ইন্দ্রনীলের বিদেশে অপ্রদর্শিত সম্পদ রয়েছে যার ন্যায্যমূল্য ২০ কোটি টাকা। উপ-কর কমিশনারের তদন্তে উক্ত সম্পদের সত্যতা মেলে।

উপ-কর কমিশনার করদাতাকে পর্যাপ্ত শুনানীর সুযোগ প্রদান করবেন এবং করদাতার নিকট হতে উক্ত সম্পদ অর্জনের উৎস ও তার প্রকৃতি সম্পর্কে ব্যাখ্যা গ্রহণ করবেন। করদাতা কর্তৃক উপস্থাপিত ব্যাখ্যা সন্তোষজনক না হলে উপ-কর কমিশনার আয়কর অধ্যাদেশ, ১৯৮৪ এর ধারা 19G ব্যতীত অন্যান্য বিধানানুসারে যে সকল ব্যবস্থা গ্রহণ করা যেতে পারে তার সব-ই করবেন এবং ১৯জি ধারানুযায়ী সম্পদের অর্থ মূল্যের সমপরিমাণ অর্থ অর্থাৎ ২০ কোটি টাকা জরিমানা আরোপ করতে পারবেন। জরিমানা আদায়ে করদাতার সম্পদ বা করদাতার পক্ষে অন্যকেউ সম্পদ ধারণ করলে তা বাজেয়াপ্ত বা বিক্রয়ের মাধ্যমে আদায় করা যাবে।

About The Author

Leave a Reply

× Contact Support!