কিভাবে পেটেন্ট আবেদন করবেন?

How to apply for patent

নতুন কিছু আবিষ্কার করেছেন? আপনার উদ্ভাবনের স্বত্ব দীর্ঘায়িত করতে চান? তাহলে পেটেন্ট আবেদন করা আপনার জন্য জরুরি!

কোনো উদ্ভাবনের দাবিদার ব্যক্তি একক বা যৌথভাবে বা আইনানুগ প্রতিনিধি, বিধি দ্বারা নির্ধারিত ফরমে ও পদ্ধতিতে নির্দিষ্টকৃত ফি প্রদানপূর্বক পেটেন্টের জন্য রেজিস্ট্রারের নিকট সম্পূর্ণ বিশেষত্বনামা (Complete specification) বা সাময়িক বিশেষত্বনামা (Provisional specification) সহকারে আবেদন করতে পারবেন। এই লেখায় পেটেন্ট আবেদনে কী কী থাকতে হবে সেই বিষয়ে বিস্তারিত উল্লেখ করা হয়েছে।

পেটেন্ট বলতে কি বোঝায়?

পেটেন্ট বলতে বোঝায় এক ধরণের অনন্য অধিকার যা সরকার কর্তৃক একজন উদ্ভাবক-কে প্রদান করা হয়। এই অধিকারের মাধ্যমে উদ্ভাবক নির্দিষ্ট সময়ের জন্য তার উদ্ভাবন একচেটিয়াভাবে ব্যবহার, উৎপাদন, বিক্রয় ও বাজারজাত করতে পারেন। পেটেন্ট-এর মূল উদ্দেশ্য হলো উদ্ভাবকদের নতুন নতুন উদ্ভাবন করতে উৎসাহিত করা এবং তাদের উদ্ভাবনের জন্য পুরষ্কার প্রদান করা। পেটেন্ট উদ্ভাবকদের বিনিয়োগ সুরক্ষা প্রদান করে এবং নতুন প্রযুক্তি বাজারে আনতে সাহায্য করে।

বাংলাদেশ পেটেন্ট আইন, ২০২২ এর সংজ্ঞায় ‘‘পেটেন্ট’’ অর্থ কোনো উদ্ভাবন সুরক্ষা করিবার জন্য মঞ্জুরিকৃত নিরঙ্কুশ অধিকার, যাহার দ্বারা পেটেন্টের স্বত্বাধিকারী তাহার উদ্ভাবন বাংলাদেশে অন্য কোনো ব্যক্তিকে ব্যবহার করা হইতে বিরত রাখিবার আইনগত অধিকারী হয়।

কখন আবেদন করবেন?

  • সাময়িক বিশেষত্বনামা দাখিলের ১২ (বার) মাসের মধ্যে সম্পূর্ণ বিশেষত্বনামা দাখিল করতে হবে
  • সাময়িক বিশেষত্বনামায় উদ্ভাবনের স্বাভাবিক বৈশিষ্ট্য থাকিতে হইবে এবং উহা পরবর্তীতে দাখিলকৃত সম্পূর্ণ বিশেষত্বনামার সহিত সামঞ্জস্যপূর্ণ হতে হবে

আবেদনপত্রে কী কী থাকবে?

  • আবেদনকারী ও উদ্ভাবকের তথ্য: নাম, পরিচয়, ঠিকানা ইত্যাদি।
  • উদ্ভাবনের শিরোনাম: স্পষ্ট ও সংক্ষিপ্ত।
  • উদ্ভাবনের বর্ণনা: সুস্পষ্ট ও স্বয়ংসম্পূর্ণ।
  • উদ্ভাবনের বিবরণ: নির্দিষ্ট অংশে উদ্ভাবনের বৈশিষ্ট্য উল্লেখ।
  • দাবি: উদ্ভাবনের বৈশিষ্ট্য উল্লেখপূর্বক এক বা একাধিক দাবি।
  • সার-সংক্ষেপ: উদ্ভাবনের সারসংক্ষেপ (৩০০ শব্দের মধ্যে)।
  • অগ্রাধিকার দাবি: যদি থাকে, তাহলে নম্বর ও তারিখ।

অন্যান্য দলিল

  • পাওয়ার অব অ্যাটর্নি: যদি প্রতিনিধির মাধ্যমে আবেদন করা হয়।
  • অধিকারের যৌক্তিকতা: আবেদনকারী যদি উদ্ভাবক না হন।
  • অগ্রাধিকার দাবির প্রমাণ: যদি থাকে।

উদ্ভাবন সুস্পষ্টভাবে প্রকাশ

  • অংকন: প্রয়োজন অনুসারে অংকন প্রদান করতে হবে।
  • দাবি: স্পষ্ট ও সংক্ষিপ্ত হতে হবে এবং বর্ণনার মাধ্যমে সমর্থিত হতে হবে।
  • ব্যাখ্যা: উদ্ভাবনের বিবরণ ও অংকন ব্যবহার করা যাবে।

জেনেটিক রিসোর্স

  • জাতীয় সম্পদের তথ্য: দাবিকৃত উদ্ভাবনে ব্যবহৃত জেনেটিক রিসোর্সের তথ্য।
  • ঐতিহ্যগত জ্ঞান: ব্যবহৃত ঐতিহ্যগত জ্ঞানের তথ্য।

আবেদন পর্যালোচনা

রেজিস্ট্রার আবেদনপত্র পর্যালোচনা করে নির্ধারিত শর্তাবলী পূরণ হয়েছে কিনা তা যাচাই করবেন। শর্তাবলী পূরণ না হলে, রেজিস্ট্রার প্রয়োজনীয় সংশোধন আনার জন্য নির্দেশ দিবেন। নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে সংশোধন না করা হলে আবেদন পরিত্যক্ত বলে গণ্য হবে।

শেষ কথা

এই লেখায় আমরা পেটেন্ট আবেদনের প্রক্রিয়া সম্পর্কে ধারণা দিয়েছি। আশা করি এই তথ্যগুলো আপনার উদ্ভাবনের জন্য পেটেন্ট আবেদন করতে সাহায্য করবে। পেটেন্ট আইন জটিল, তাই প্রয়োজনে একজন পেটেন্ট অ্যাটর্নির সাথে পরামর্শ করুন।

Leave a Comment