দীর্ঘদিন ধরে, দালালদের কবলে পড়ে বিদেশ যাত্রা ছিল দেশের শ্রমজীবি মানুষদের দুঃস্বপ্ন। দালালদের হাত থেকে মুক্তি পেয়ে এখন আপনি “আমি প্রবাসী” অ্যাপের মাধ্যমে সরাসরি বিদেশ যাত্রার জন্য আবেদন করতে পারবেন। বাংলাদেশ সরকারের তত্ত্বাবধানে প্রবাসীদের সুবিধার্থে “আমি প্রবাসী” অ্যাপটি তৈরি করা হয়েছে। এই অ্যাপের মাধ্যমে একাউন্ট তৈরি করে আপনি সরাসরি অনলাইনে বিদেশে চাকরির জন্য আবেদন করতে পারবেন।
বিদেশ যাত্রা করার জন্য বাংলাদেশের প্রবাসীদের “আমি প্রবাসী” অ্যাপ এ রেজিস্ট্রেশন করতে হবে। এই রেজিস্ট্রেশন প্রক্রিয়াটিকে BMET (Bureau of Manpower Employment and Training) সিস্টেম বলা হয়। এই ব্লগে আমরা “আমি প্রবাসী” অ্যাপ রেজিস্ট্রেশন এবং আবেদন প্রক্রিয়া ধাপে ধাপে আলোচনা করব।
আমি প্রবাসী রেজিষ্ট্রেশন
বিদেশ যাত্রার জন্য “আমি প্রবাসী” অ্যাপের মাধ্যমে রেজিস্ট্রেশন প্রক্রিয়া আরও সহজ ও সাবলীল হয়েছে। এই টিউটোরিয়ালে আমরা আপনাকে ধাপে ধাপে দেখাবো কিভাবে “আমি প্রবাসী” অ্যাপ ব্যবহার করে রেজিস্ট্রেশন সম্পন্ন করবেন।
১. Ami Probashi অ্যাপ ইন্সটল
BMET Registration এর জন্য প্রথমেই আপনাকে “আমি প্রবাসী” অ্যাপটি আপনার মোবাইলে ইন্সটল করে নিতে হবে। আপনার অ্যান্ড্রয়েড মোবাইল ফোনের জন্য “আমি প্রবাসী” অ্যাপটি ডাউনলোড করতে এখানে ক্লিক করুন। আর আইফোন ব্যবহারকারীরা এইখানে ক্লিক করে “আমি প্রবাসী” অ্যাপটি ডাউনলোড করে নিন। অ্যাপসটি ডাউনলোড সম্পন্ন হলে আপনার ফোনে ইন্সটল করুন।
২. মোবাইল ভেরিফিকেশন ও পাসওয়ার্ড সেট করুন
অ্যাপটি ইন্সটল সম্পন্ন হলে অ্যাপটি খুলে আপনার মোবাইল নম্বর দিয়ে পরবর্তী লেখায় ট্যাপ করুন। আপনার মোবাইলে একটি ভেরিফিকেশন কোড আসবে উক্ত কোড অ্যাপে বসিয়ে আপনার ভেরিফিকেশ সম্পন্ন করুন এবং পরবর্তী পেজে ৬ ডিজিটের একটি পাসওয়ার্ড সেট করুন।
৩. দেশ নির্বাচন করুন
আপনাকে আপনার পছন্দের তিনটি দেশ নির্বাচন করতে হবে যেখানে আপনি কাজ করতে চান। আপনি যদি চান, তাহলে সবগুলো দেশ নির্বাচন করতে পারেন। দেশ নির্বাচন শেষে, “পরবর্তী” বাটনে ক্লিক করুন।
৪. দক্ষতা নির্বাচন
এরপর, আপনাকে দক্ষতার তালিকা থেকে আপনি যেসকল কাজে দক্ষ সেই দক্ষতাসমূহ নির্বাচন করুন। আপনার দক্ষতা নির্বাচন শেষে, “পরবর্তী” বাটনে ক্লিক করুন।
৫. ব্যক্তিগত তথ্য দিন
এই ধাপে আপনাকে কিছু ব্যক্তিগত তথ্য নির্বাচন করতে হবে। যেমন-
- লিঙ্গ ও বয়স
- শিক্ষাগত যোগ্যতা
- বর্তমানে বিদেশে কর্মরত আছেন কিনা
- বিএমইটি স্মার্ট কার্ড আছে কিনা
সকল তথ্য সঠিকভাবে প্রদান করে “সম্পন্ন” বাটনে ক্লিক করুন।
এরপর আপনাদের সামনে একটি POP-UP আকারে নোটিফিকেশন দেখা যাবে। “ঠিক আছে” বাটনে ক্লিক করে দিন।
যদি আপনারা পূর্ববর্তী ধাপে BMET আইডি কার্ড আছে সিলেক্ট করে থাকেন, তাহলে পুনরায় BMET রেজিস্ট্রেশন করার প্রয়োজন নেই। কিন্তু আপনার যদি BMET আইডি কার্ড না থাকে, তাহলে রেজিস্ট্রেশন প্রক্রিয়া সম্পন্ন করতে হবে।
BMET Registration
বিএমইটি রেজিস্ট্রেশন করার জন্য আমি প্রবাসী অ্যাপ এ প্রবেশ করার পরে বিএমইটি রেজিস্ট্রেশন বাটনে ক্লিক করুন। তারপর আপনি যেদেশে যেতে চান সেই দেশ সিলেক্ট করে আপনার পাসপোর্ট এর তথ্য অনুযায়ী সকল তথ্য প্রদান করতে হবে।
১. পাসপোর্টের তথ্য দিন
এই ধাপে, আপনার পাসপোর্টের ছবি আপলোড করতে হবে। আপনি সরাসরি ক্যামেরা ব্যবহার করে ছবি তুলতে পারেন অথবা গ্যালারি থেকে পূর্বে তোলা ছবি আপলোড করতে পারেন। ছবি আপলোড হলে, পাসপোর্ট নম্বর স্বয়ংক্রিয়ভাবে লেখা হবে। এরপর, নিম্নলিখিত তথ্যগুলো পূরণ করতে হবে:
- আপনার নাম:
- পাসপোর্ট প্রদানের তারিখ:
- পাসপোর্ট মেয়াদ উত্তীর্ণের তারিখ:
- জাতীয় পরিচয়পত্র (ঐচ্ছিক):
- জন্মস্থান:
- জন্ম তারিখ:
- লিঙ্গ: (পুরুষ/মহিলা)
“পরবর্তী” বাটনে ক্লিক করুন। এরপরের পৃষ্ঠায় আপনার ব্যক্তিগত তথ্য প্রদান করতে হবে।
২. ব্যক্তিতথ্য দিন
এইধাপে আপনার ব্যক্তিগত তথ্য পূরণ করতে হবে
- পিতার নাম
- মাতার নাম
- বৈবাহিক অবস্থা: (বিবাহিত হলে স্ত্রীর নাম উল্লেখ করতে হবে)
- ধর্ম
- উচ্চতা
- ওজন (কেজি)
সকল তথ্য পূরণের পরে “পরবর্তী” বাটনে ক্লিক করুন।
৩. যোগাযোগের তথ্য দিন
এই ধাপে আপনাকে আপনার যোগাযোগের সকল তথ্য প্রদান করতে হবে। তথ্যগুলো অবশ্যই আপনার পাসপোর্টের সাথে মিল থাকতে হবে।
- মোবাইল নাম্বার
- ইমেইল এড্রেস
- স্থায়ী ঠিকানা (স্থায়ী ঠিকানা লেখার সময়, পোস্ট অফিস, থানা, জেলা, এবং পোস্টাল কোড সঠিকভাবে উল্লেখ করুন।)
সকল তথ্য পূরণের পরে “পরবর্তী” বাটনে ক্লিক করুন।
৪. নমিনির তথ্য দিন
নমিনির তথ্য ধাপে নমিনি সম্পর্কে যে তথ্যসমূহ দিতে হবে:
- নমিনির সাথে আপনার সম্পর্ক
- নমিনির নাম
- নমিনির জাতীয় পরিচয় পত্র (ঐচ্ছিক)
- নমিনির মোবাইল নম্বর
- নমিনির পিতার নাম
- নমিনির মাতার নাম
এই তথ্যগুলো যথাযথভাবে প্রদান করে “পরবর্তী” বাটনে ক্লিক করুন।
৫. জরুরী যোগাযোগ তথ্য দিন
জরুরী যোগাযোগের জন্য যেসকল তথ্য দিতে হবে:
- সম্পর্ক সিলেক্ট করুন
- নাম প্রদান করুন
- সচল মোবাইল নাম্বার প্রদান করুন
তারপর “পরবর্তী” বাটনে ক্লিক করুন
৬. শিক্ষাগত যোগ্যতার বিবরণ দিন
শিক্ষাগত যোগ্যতার ধাপে নিচের তথ্যগুলো যথাযথভাবে পূরণ করতে হবে:
- শিক্ষাগত যোগ্যতা
- পাশের সাল
- প্রতিষ্ঠান বা স্কুল
- বোর্ড
- গ্রেড/ডিভিশন
আপনার যদি একাধিক শিক্ষাগত যোগ্যতা থাকে, তাহলে “+আরো যোগ করুন” বাটনে ক্লিক করে একইভাবে অন্যান্য শিক্ষাগত যোগ্যতার তথ্য সংযুক্ত করুন।
৭. ভাষাগত দক্ষতার তথ্য দিন
এই ধাপে আপনাকে আপনার ভাষাগত দক্ষতার তথ্য প্রদান করতে হবে।
- ভাষাগত যোগ্যতা
- মৌখিক দক্ষতা
- লিখিত দক্ষতা
অনেকগুলো ভাষায় পারদর্শী হলে +আরো যোগ করুন বাটনে ক্লিক করে একইভাবে অন্যান্য ভাষার জন্য তথ্য প্রদান করুন।
৮. আবেদন ফরম সাবমিট করুন
এই ধাপে, আপনার আবেদনপত্রে প্রদত্ত সকল তথ্যের একটি সংক্ষিপ্তসার দেখানো হবে। আপনি চাইলে তথ্যগুলো রিভিউ করে যাচাই করতে পারবেন। তথ্য সঠিক হলে, “ঠিক আছে” বাটনে ক্লিক করুন। আবেদনটি সাবমিট করার ৭২ ঘণ্টার মধ্যে আপনার পাসপোর্ট ভেরিফিকেশন সম্পূর্ণ হবে। এরপর আপনি আবেদন ফি পরিশোধ করতে পারবেন।
৯. আমি প্রবাসী রেজিস্ট্রেশন ফি পেমেন্ট করুন
আবেদন ফি পরিশোধ করার জন্য “পেমেন্ট করুন” বাটনে ক্লিক করুন। ৩০০ টাকা প্রদান করুন। অনলাইনে সাধারণত দুই বিকাশ অথবা নগদ এর মাধ্যমে পেমেন্ট করতে পারবেন। যেকোনো একটি পেমেন্ট গেটওয়ে সিলেক্ট করে পেমেন্টটি সম্পন্ন করুন।
১০. বিএমইটি রেজিস্ট্রেশন কার্ড ডাউনলোড
উপরের ধাপগুলো সম্পন্ন করে বিএমইটি রেজিস্ট্রেশন হয়ে গেলে আপনি বিএমটি রেজিস্ট্রেশন সম্পন্ন হওয়ার অভিনন্দন জ্ঞাপনসহ একটি মেসেজ পাবেন। এখান থেকে “ঠিক আছে” বাটনে ক্লিক করুন। আপনি আপনার নতুন রেজিস্ট্রেশন করা বিএমইটি কার্ডের অনলাইন কপি দেখতে পাবেন। এতে আপনার বিএমইটি কার্ডের নম্বরও উল্লেখ করা থাকবে। আপনার বিএমইটি রেজিস্ট্রেশন কার্ড ডাউনলোড করতে, উপরের ডানদিকে থাকা “ডাউনলোড” বাটনে ক্লিক করুন।
শেষকথা
এই ব্লগ পোস্টে, আমরা বিএমইটি রেজিস্ট্রেশনের প্রক্রিয়া, প্রয়োজনীয় কাগজপত্র এবং রেজিস্ট্রেশনের সুবিধাগুলি সম্পর্কে আলোচনা করেছি। আশা করি এই তথ্যগুলি আপনার বিএমইটি রেজিস্ট্রেশন সম্পন্ন করতে সহায়তা করবে। এই ব্লগ পোস্টটি আপনার জন্য সহায়ক হয়ে থাকলে, অনুগ্রহ করে এটি শেয়ার করুন এবং অন্যদেরকে বিএমইটি রেজিস্ট্রেশন সম্পর্কে জানতে সাহায্য করুন।