বাংলাদেশ ব্যাংক বিআরপিডি সার্কুলার নং ২, তারিখ ২০ জানুয়ারী, ২০২২ এর মাধ্যমে ব্যাংক কোম্পানীতে কর্মরত কর্মচারী ও কর্মকর্তার সর্বনিম্ন বেতন নির্ধারণ করেছে। উক্ত সার্কুলার অনুযায়ী

০১। ব্যাংক-কোম্পানীর পরিচালনা ও ব্যবস্থাপনায় ব্যাংক কর্মকর্তা ও কর্মচারীগণের ভূমিকা গুরুত্বপূর্ণ । ব্যাংকের কর্মকর্তা-কর্মচারীগণ নিরবচ্ছিনভাবে ব্যাংকিং সেবা প্রদানের মাধ্যমে দেশের অর্থনীতির চাকা সচল রেখে গতিশীলতা বৃদ্ধির লক্ষ্যে অবদান রেখে যাচ্ছেন । এ প্রেক্ষিতে, ব্যাংক কর্মকর্তা ও কর্মচারীগণ যাতে অধিকতর উজ্জীবিত হয়ে অগ্রগণ্য ভূমিকা পালন করতে পারেন সে উদ্দেশ্যে এবং ব্যাংক-কোম্পানীর যথাযথ ব্যবস্থাপনা নিশ্চিত করার লক্ষ্যে বাংলাদেশ ব্যাংক কর্তৃক প্রয়োজনীয় নির্দেশনা প্রদান আবশ্যক মর্মে প্রতীয়মান হয়।

০২। ব্যাংকের কর্মকর্তা ও কর্মচারীগণের একনিষ্ঠতা, নৈতিকতা, মনোবল ও কর্মস্পৃহা অটুট রাখার লক্ষ্যে তাদের যথাযথ বেতন-ভাতা প্রদান আবশ্যক। কিন্তু, সম্প্রতি লক্ষ্য করা গিয়েছে যে, কতিপয় ব্যাংক-কোম্পানীর এন্ট্রি লেভেলের কর্মকর্তাগণের বেতন-ভাতাদি যথাযথভাবে নির্ধারণ না করে ইচ্ছামাফিক নির্ধারণ করা হচ্ছে; যা একই ব্যাংকের অন্যান্য উচ্চ পর্যায়ে কর্মরত কর্মকর্তাগণের বিদ্যমান বেতন-ভাতাদির তুলনায় খুবই কম। উচ্চ এবং নিম্ন পর্যায়ের কর্মকর্তা-কর্মচারীগণের বেতন-ভাতাদির মধ্যে এতো অস্বাভাবিক ব্যবধান কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়। আরও লক্ষ্য করা গিয়েছে যে, কোনো কোনো ব্যাংকে একইপদে নিয়োজিত কর্মকর্তা ও কর্মচারীগণ ভিন্ন ভি বেতন-ভাতাদি প্রাপ্ত হচ্ছেন । তাছাড়া, নির্ধারিত লক্ষ্য অর্জন করতে না পারা বা অদক্ষতার অজুহাতে বিভিন্ন ব্যাংকে বেতন-ভাতাদির ভিন্নতার কারণে ব্যাংক কর্মকর্তা-কর্মচারীগণের মধ্যে সংশ্লিষ্ট ব্যাংককে নিজ প্রতিষ্ঠান মনে করে একনিষ্ঠ ও অঙ্গীকারাবদ্ধ হয়ে স্থায়ীভাবে ব্যাংকের কাজে মনোযোগী হওয়ার মনোভাব গড়ে উঠে না। ফলে অদক্ষতা, অসম প্রতিযোগিতা ও নৈতিক অবক্ষয়সহ বিভিন্ন ধরণের জটিলতার উদ্ভব হচ্ছে যা সুষ্ঠু মানব সম্পদ ব্যবস্থাপনা ও সুশাসনের ক্ষেত্রে অন্তরায় ও ব্যাংক-কোম্পানীর জন্য ক্ষতিকর;
যা কোনভাবেই কাম্য নয়।

০৩। এ প্রেক্ষিতে, তরুণ ও শিক্ষিত ব্যাংক কর্মকর্তা ও কর্মচারীগণ যাতে অধিকতর প্রশিক্ষিত ও দক্ষ হয়ে সংশ্লিষ্ট ব্যাংককে নিজ প্রতিষ্ঠান মনে করে একনিষ্ঠ ও নিরবচ্ছিন্নভাবে ব্যাংকিং সেবা প্রদানের মাধ্যমে দেশের অর্থনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারেন এবং ভবিষ্যতে মেধাবী ব্যক্তিগণ যাতে ব্যাংকিংকে আকর্ষণীয় ক্যারিয়ার হিসেবে গ্রহণ করতে আগ্রহী হন সে লক্ষ্যে এখন থেকে নিন্নবর্ণিত নির্দেশনাসমূহ যথাযথভাবে অনুসরণ নিশ্চিত করতে হবে :

৩.১। এসিসেন্ট অফিসার/ট্রেইনি এসিস্টেন্ট অফিসার/ট্রেইনি এসিস্টেন্ট ক্যাশ অফিসার অথবা সমপর্যায়ের কর্মকর্তা, যে নামেই অভিহিত হোক না কেন, ব্যাংকের এন্ট্রি লেভেলে এরূপ নিযুক্ত কর্মকর্তাগণের শিক্ষানবিসকালে (probation period) ন্যুনতম বেতন-ভাতাদি হবে ২৮,০০০.০০ টাকা;

৩.২। শিক্ষানবিসকাল সমাপনান্তে ৩.১ ক্রমিকে বর্ণিত কর্মকর্তাগণের প্রারভ্তিক মূল বেতনসহ ন্যুনতম সর্বমোট বেতন-ভাতাদি হবে ৩৯,০০০.০০ টাকা । নতুন নির্ধারিত বেতন-ভাতাদি কার্যকর করার পর একইপদে পূর্ব হতে কর্মরত কর্মকর্তাদের বেতন-ভাতাদি আনুপাতিক হারে বৃদ্ধি করতে হবে;

৩.৩। প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তার অব্যবহিত নিন্ন পদে কর্মরত কর্মকর্তার বেতন-ভাতাদির সাথে ব্যাংকে সর্বনিন্ন পদেকর্মরত কর্মকর্তা ও কর্মচারীগণের বেতন-ভাতাদির পার্থক্য যৌক্তিক পর্যায়ে নির্ধারণ করতে হবে । অনুরূপভাবে সকল স্তরের কর্মকর্তাগণের জন্যও আনুপাতিকহারে বেতন-ভাতাদি নির্ধারণ করতে হবে;

৩.৪। কোনো কর্মকর্তা-কর্মচারীর বেতন-ভাতাদি কোনো অবস্থাতেই বর্তমান বেতন-ভাতাদির চেয়ে কম হবে না। এরূপ পরিস্থিতির উদ্ভব হলে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা/কর্মচারীকে প্রয়োজনীয় সংখ্যক ইনক্রিমেন্ট প্রদানপূর্বক বেতন- ভাতাদি নির্ধারণ করতে হবে । এতদ্বতীত, ব্যাংকের সার্ভিস রুলস্‌ অনুযায়ী কর্মকর্তা/কর্মচারীগণ অন্যান্য ভাতা ও সুযোগসুবিধা যথানিয়মে প্রাপ্য হবেন;

৩.৫। ব্যাংক-কোম্পানী কর্তৃক নিয়োগকৃত কর্মকর্তাগণের চাকুরি স্থায়ীকরণ বা বার্ষিক বেতন বৃদ্ধির জন্য আমানত সংগ্রহের লক্ষ্য অর্জনের শর্ত আরোপ করা যাবে না;

৩.৬। শুধুমাত্র নির্ধারিত লক্ষ্য অর্জন করতে না পারা বা অদক্ষতার অজুহাতে ব্যাংক-কোম্পানীর কর্মকর্তাগণকে প্রাপ্য পদোন্নতি হতে বঞ্চিত করা যাবে না। অনুরূপ অজুহাতে কর্মকর্তা-কর্মচারীগণকে চাকুরিচ্যুত করা যাবে না, অর্থাৎ সুনির্দিষ্ট ও প্রমাণিত কোনো অভিযোগ না থাকলে কর্মকর্তা-কর্মচারীগণকে চাকুরিচ্যুত করা বা পদত্যাগে বাধ্য করা যাবে না;

৩.৭ । মেসেঞ্জার/পরিচ্ছনতাকর্মী/নিরাপত্তাকর্মী/অফিস সহায়ক (support staff) অথবা সমজাতীয় পদে/সর্বনিন্ন যে কোনো পদে নিয়োগকৃত কর্মচারীগণের ন্যুনতম প্রারভিক বেতন-ভাতাদি হবে ২৪,০০০.০০ টাকা;

৩.৮। উপরোক্ত ক্রমিকে বর্ণিত কর্মচারীগণের কাজ যদি চুক্তিভিত্তিক বা দৈনিক ভিত্তিতে বা আউট সোর্সিং বা অন্য কোনো প্রক্রিয়ার মাধ্যমে নিয়োগকৃত কর্মচারীগণের মাধ্যমে সম্পন্ন করা হয়, সেক্ষেত্রে ৩.৭ ক্রমিকে বর্ণিত কর্মচারীগণের বেতন-ভাতাদির সাথে সামঞ্জস্য রেখে এরূপ কর্মচারীগণের বেতন-ভাতাদি নির্ধারণ করতে হবে;

৩.৯। ব্যাংকের এজেন্ট ব্যাংকিং বা মোবাইল ব্যাংকিং বা অন্য কোনো প্রক্রিয়ায় ব্যাংকিং সেবা প্রদানে নিয়োজিত বিভিন্ন আউটলেটে নিযুক্ত ব্যাংকের এজেন্টগণ বা এজেন্টের মাধ্যমে নিযুক্ত ব্যক্তিগণের বেতন-ভাতাদি/পারিশ্রমিক চুক্তি/ন্ব স্ব এজেন্ট কর্তৃক নির্ধারিত হয় বিধায় তাদের ক্ষেত্রে উপরে বর্ণিত নির্দেশনা প্রযোজ্য হবে না;

৩.১০। রাষ্ট্রমালিকানাধীন ব্যাংকের বেতন কাঠামো সরকার কর্তৃক জারিকৃত জাতীয় বেতনস্কেলের আওতাভূক্ত/অনুসরণে নির্ধারিত বিধায় উক্ত ব্যাংকসমূহের জন্য উপরে বর্ণিত নির্দেশনা প্রযোজ্য হবে না।

০৪ । বর্ণিত নির্দেশনাসমূহ পরিপালন নিশ্চিতকল্পে ব্যবস্থাপনা পরিচালকগণ স্ব স্ব ব্যাংকের পরিচালনা পর্যদের পরবর্তী সভায় উপস্থাপনপূর্বক এ সকল নির্দেশনা অনুযায়ী ব্যাংকের এতদৃসংক্রান্ত নীতিমালায় প্রয়োজনীয় সংশোধন আনয়ন করবেন।

০৫। উপরে বর্ণিত নির্দেশনার আলোকে নতুন নির্ধারিত বেতন-ভাতাদি ০১ মার্চ ২০২২ তারিখ হতে কার্যকর হবে । পরবর্তী নির্দেশনা প্রদান না করা পর্যন্ত এ সার্কুলারে বর্ণিত নির্দেশনা বলবৎ থাকবে ।

ব্যাংকিং খাতে শৃঙ্খলা, সুশাসন ও যথাযথ ব্যবস্থাপনা নিশ্চিত করার লক্ষ্যে ব্যাংক-কোম্পানী আইন, ১৯৯১ এর ধারা 8৫ এর উপ-ধারা (ঘ) এ প্রদত্ত ক্ষমতাবলে এই নির্দেশনা জারি করা হলো ।

বাংলাদেশের ব্যাংকের সার্কুলারটি ডাউনলোড করতে এই লিংকে ক্লিক করুন

Show CommentsClose Comments

Leave a comment