নির্ধারিত সময়ের মধ্যে আয়কর রিটার্ন জমা না দিলে কী ধরণের ব্যবস্থা গৃহীত হবে?

কামরুল হাসান নূর

Updated on:

what if return is not submitted within tax day

বাংলাদেশের আয়কর আইন অনুসারে, প্রতিটি করদাতার নির্ধারিত সময়ের মধ্যে আয়কর রিটার্ন জমা দেওয়া বাধ্যতামূলক। রিটার্ন জমা না দিলে করদাতাকে জরিমানা প্রদান করতে হবে। আয়কর আইন ২০২৩ অনুযায়ী করদাতা করদিবসের পরেও স্বনির্ধারনী পদ্ধতিতে আয়কর রিটার্ন জমা দিতে পারবেন কিন্তু সেক্ষেত্রে করদাতা আয়কর আইন ২০২৩ এর ধারা ৭৬, ৭৭, ৭৮, ৭৯ অনুযায়ী যে কর অব্যহতি, করমুক্ত আয় সুবিধা ও কর রেয়াত সুবিধা পেয়ে থাকেন সেই সুবিধাসমূহ প্রাপ্ত হবেন না। এছাড়াও করদাতাকে আয়কর আইনের ১৭৪ ধারা অনুসারে বিলম্ব ফিসহ কর নির্ধারণ করা হবে।

করদিবস পরবর্তী সময়ে রিটার্ন দাখিলের ক্ষেত্রে কর পরিগণনা

ধারা ১৬৬ অনুযায়ী রিটার্ন দাখিলের বাধ্যবাধকতা রহিয়াছে এইরূপ কোনো করদাতা করদিবসের মধ্যে রিটার্ন দাখিলে ব্যর্থ হলে, এই আইনের অন্যান্য বিধানের অধীন উদ্ভূত দায় অক্ষুণ্ন রাখিয়া নিম্নবর্ণিত নিয়মে করদাতার কর নির্ধারিত ও পরিশোধিত হবে, যথা:-

গ = ক × (১ + ০.০৪ × খ), যেখানে,-

গ = মোট প্রদেয় করের পরিমাণ, যেইক্ষেত্রে-

(অ) করদাতা করদিবস পরবর্তী কোনো দিনে রিটার্ন দাখিল করেন; বা

(আ) কর কর্তৃপক্ষ করদিবস পরবর্তী কোনো দিনে করদাতার কর নির্ধারণ করেন,

ক = করদাতা করদিবসের মধ্যে রিটার্ন দাখিল করিলে মোট যেই পরিমাণ কর পরিশোধ করিতেন সেই অঙ্ক, তবে এইক্ষেত্রে-

(অ) কর অব্যাহতি প্রাপ্ত আয় মোট আয়ের অন্তর্ভুক্ত হইবে এবং নিয়মিত হারে কর পরিগণনা করিতে হইবে; এবং

(আ) ন্যূনতম কর, সারচার্জ ও সরল সুদ ব্যতীত এই আইনের অধীন প্রযোজ্য বা ধার্যকৃত কোনো জরিমানা বা কর ইহার অন্তর্ভুক্ত হইবে না,

খ = নিম্নবর্ণিতরূপে নির্ধারিত মাসের সংখ্যা, যথা:-

(অ) করদিবস অতিক্রান্ত হইবার পর মাসের সংখ্যা যাহা অনধিক ২৪ (চব্বিশ) হইবে; এবং

(আ) কোনো মাসের ভগ্নাংশও ১ (এক) মাস হিসাবে পরিগণিত হইবে

উদাহরণ

মিস সুহাসিনীর ব্যবসা হইতে আয় রয়েছে। করদিবসের মধ্যে রিটার্ন দাখিলের ক্ষেত্রে তার গ্রস করদায় ২০.০০০ টাকা। কর রেয়াতে পরিমাণ ৫,০০০ টাকা। উৎসে পরিশোধিত করের পরিমাণ ১৫,০০০ টাকা। তিনি করদিবস অতিক্রান্ত হবার ২ মাস ২৮ দিন পর রিটার্ন দাখিল করবেন। রিটার্নের সাথে মিস সুহাসিনীকে কি পরিমাণ কর পরিশোধ করতে হবে?

ধারা ১৭৪ অনুযায়ী নিমবরণত ভাবে করদায় নির্ধারণ ও পরিশোধ করতে হবে, যথা:

প্রদেয় করদায় = ২০,০০০ X (১ + ০.০৪ X ৩) = ২২,৪০০ টাকা

রিটার্নের সাথে এ চালানের মাধ্যমে পরিশোধ করতে হবে (২২,৪০০-১৫,০০০) টাকা বা ৭,৪০০ টাকা।

রিটার্ন দাখিলে ব্যর্থতার জন্য জরিমানা

যদি কোনো ব্যক্তি যুক্তিসঙ্গত কারণ ছাড়া ধারা ১৬৬, ১৭২, ১৯১, ১৯৩ অথবা ২১২ এর অধীনে নির্ধারিত রিটার্ন দাখিল করতে ব্যর্থ হন, তাহলে উপকর কমিশনার উক্ত ব্যক্তির সর্বশেষ নির্ধারিত আয়ের উপর ১০% (দশ শতাংশ) হারে জরিমানা আরোপ করতে পারবেন। এই জরিমানার পরিমাণ কমপক্ষে ১ (এক) হাজার টাকা হবে। যদি ব্যর্থতা অব্যাহত থাকে, তাহলে প্রতিদিনের জন্য অতিরিক্ত ৫০ (পঞ্চাশ) টাকা জরিমানা আরোপ করা হবে।

তবে, জরিমানার পরিমাণ নিম্নলিখিত সীমা অতিক্রম করবে না:

  • যদি ব্যক্তিটি পূর্বে কখনো কর নির্ধারণ না করে থাকেন, তাহলে জরিমানার পরিমাণ সর্বোচ্চ ৫ (পাঁচ) হাজার টাকা হবে।
  • যদি ব্যক্তিটি পূর্বে কর নির্ধারণ করে থাকেন, তাহলে জরিমানার পরিমাণ সর্বোচ্চ হবে তার সর্বশেষ নির্ধারিত আয়ের উপর প্রদেয় করের ৫০% (পঞ্চাশ শতাংশ) অথবা ১ (এক) হাজার টাকা, এই দুইয়ের মধ্যে যেটি বেশি।

শেষকথা

নির্ধারিত সময়ের মধ্যে আয়কর রিটার্ন জমা দেওয়া প্রতিটি করদাতার কর্তব্য। তাছাড়া আয়কর আইন অনুযায়ী করদাতারা নির্ধারিত সময়ের মধ্যে রিটার্ন দাখিল করলে নির্ধারিত কিছু খাতে কর অব্যাহতি ও করমুক্তির সুবিধা পেয়ে থাকেন যা কর দিবসের পরে আর প্রযোজ্য হবে না। তাই প্রতিটি সচেতন করদাতার উচিত নির্ধারিত সময়ের মধ্যে আয়কর রিটার্ন দাখিল করা।

Leave a Comment