ইসলামী বন্ড সুকুক কী এবং কেন?

কামরুল হাসান নূর

Updated on:

sukuk bond in Bangladesh

বৈশ্বিক অর্থনীতির পরিবর্তনের সাথে সাথে বিনিয়োগকারীদের বিভিন্ন পছন্দ এবং নৈতিক বিবেচনাগুলি পূরণ করার জন্য নতুন বিনিয়োগের সুযোগ তৈরি হচ্ছে। এই প্রেক্ষাপটে, সুকুক, শরীয়াহ আইন দ্বারা নিয়ন্ত্রিত একটি ইসলামী আর্থিক উপকরণ, বাংলাদেশে একটি বিকল্প বিনিয়োগের পথ হিসেবে জনপ্রিয়তা অর্জন করেছে। প্রচলিত বিনিয়োগের বিপরীতে, সুকুক অনন্য বৈশিষ্ট্যগুলি আর্থিক উপকরণ যা সুদের পরিবর্তে লভ্যাংশ বন্টনের চুক্তিতে বিনিয়োগ থেকে আয়ের সুযোগ তৈরি করে। বর্তমান বিশ্বে এই ইসলামী বন্ড জনপ্রিয়তা অর্জন করাতে বাংলাদেশেও এর যাত্রা শুরু হয়েছে। সুকুক বন্ড কাকে বলে, কখন প্রথম বাংলাদেশে এই বন্ড চালু হলো, এটি কিভাবে কাজ করে এবং এর সম্ভাবনা সম্পর্কে জানুন।

সুকুক কী? (What is Sukuk?)

সুকুক হল একটি ইসলামী আর্থিক উপকরণ যা শরীয়া আইন দ্বারা নিয়ন্ত্রিত হয়। এটি বাংলাদেশে একটি বিকল্প বিনিয়োগের মাধ্যম যার মাধ্যমে বিনিয়োগকারীরা শরীয়ত সম্মতভাবে আয় করতে সক্ষম। প্রচলিত বন্ড থেকে সুকুক এর মূল পার্থক্য হচ্ছে সুদভিত্তিক বিনিয়োগ প্রত্যহার করা লভ্যাংশের মাধ্যমে বিনিয়োগকৃত অর্থের বিপরীতে আয়ের সুযোগ তৈরি করা।

বাংলাদেশে সুকুক বন্ড কবে চালু হয়? (When was Sukuk bond introduced in Bangladesh?)

২০২০ সালে প্রথমবারের মতো বাংলাদেশে সুকুক বন্ড ইস্যু করা হয়। বাংলাদেশ ব্যাংক প্রথম সুকুক বন্ড প্রবর্তন করে, যা পাঁচ বছরের মেয়াদী। ‘সারা দেশের জন্য নিরাপদ পানি সরবরাহ’ শীর্ষক প্রকল্প বাস্তবায়নের লক্ষ্যে তহবিল সংগ্রহের জন্য প্রথম সরকারী ইসলামী বন্ড সুকুক চালু করে।

বাংলাদেশে সুকুক বন্ড কিভাবে কাজ করে? (How to Work Sukuk Bond in Bangladesh)

সুকুক বন্ডে তিনটি প্রধান পক্ষ জড়িত: বিনিয়োগকারী, ঋণগ্রহীতা এবং তৃতীয় পক্ষের মধ্যস্থতাকারী। প্রচলিত বন্ডের বিপরীতে যেখানে বিনিয়োগকারীরা সরাসরি ঋণগ্রহীতার সাথে যোগাযোগ করে, সুকুক বন্ডের জন্য Special Purpose Vehicle (SPV) মাধ্যমে যোগাযোগের প্রয়োজন হয়। এক্ষেত্রে বাংলাদেশ ব্যাংক এসপিভি (SPV) হিসেবে কাজ করে। এটি বিনিয়োগকারীদের কাছ থেকে বিনিয়োগের অর্থ সংগ্রহ করে, প্রকল্পের উন্নয়নের জন্য সরকারের কাছে হস্তান্তর করে এবং বিনিয়োগকারীদের পক্ষে প্রকল্পের অবকাঠামো ক্রয় করে। বাংলাদেশ ব্যাংক তারপরে সরকারকে অবকাঠামোটি ইজারা দেয়, পর্যায়ক্রমিক ভাড়ার আদায় করে। এই আদায়কৃত ভাড়া পরবর্তীতে বিনিয়োগকারীদের কাছে স্থানান্তরিত হয়। পাঁচ বছর পর, সরকার অবকাঠামো কিনে নেয়, বিনিয়োগের অর্থ ফেরত দেয় এবং ইজারা চুক্তি সম্পন্ন করে। বন্ডটি ঝুঁকিমুক্ত বলে বিবেচিত হয় কারণ এটি সরকারের পূর্ণ বিশ্বাস এবং কৃতিত্ব দ্বারা সমর্থিত।

বাংলাদেশে সুকুক বন্ডের সম্ভাবনা (The Prospect of Sukuk Bond in Bangladesh)

যদিও সুকুক বন্ডের কাঠামো প্রাথমিকভাবে জটিল বলে মনে হতে পারে, এটি সাধারণ বাণিজ্যিক ব্যাংক এবং ইসলামী শরীয়াহ-সম্মত ব্যাংক উভয়ের কাছেই আকর্ষণীয়। এটি শুধুমাত্র বাংকগুলোর একদিকে যেমন তারল্য অনুপাতের প্রয়োজনীয়তা পূরণ করে, অন্যদিকে সাধারণ এবং ইসলামিক জীবন বীমা কোম্পানির দীর্ঘমেয়াদী ঝুঁকিমুক্ত বিনিয়োগের চাহিদা যা “তাকাফুল” নামে পরিচিত তার সম্পদ ও দায়ের সমন্বয় করতে সামর্থ্য হয়। বাংলাদেশে ইসলামী ব্যাংকসহ ৫০টিরও বেশি বাণিজ্যিক ব্যাংক এবং ৩০টিরও বেশি জীবন বীমা এবং তাকাফুল কোম্পানির আছে যারা সুকুক বন্ড চালু করে তাদের বিনিয়োগ সম্ভবনাকে বৃদ্ধি এবং ইসলামী বন্ডের বাজারের বিকাশ করতে পারবে।

শেষ কথা

সুকুক বন্ড বাংলাদেশে একটি দারুন বিনিয়োগের পথ হিসেবে আবির্ভূত হয়েছে, যা ইসলামিক ফাইন্যান্সের নীতির সাথে সামঞ্জস্য রেখে আকর্ষণীয় রিটার্ন প্রদান করে। বাংলাদেশ ব্যাংক কর্তৃক প্রবর্তীত সুকুক বন্ডের সফল প্রবর্তন এবং বিভিন্ন স্টেকহোল্ডারদের আগ্রহ বৃদ্ধির ফলে দেশে সুকুকের ভবিষ্যত আশাব্যঞ্জক বলে মনে হচ্ছে। ইসলামিক বন্ড বাজারের বৃদ্ধিকে উৎসাহিত করার মাধ্যমে, বাংলাদেশ তার বিনিয়োগের সম্ভাবনাকে আরও বৈচিত্র্যময় করতে পারে এবং টেকসই উন্নয়ন উদ্যোগে অবদান রাখতে পারে যা সমগ্র বাংলাদেশে অর্থনীতি উপকৃত হবে।

Leave a Comment