শ্রমিকদের জন্য চিকিৎসা সংক্রান্ত বিধিমালা

Noor

শ্রমিকদের চিকিৎসা বিধি

প্রাথমিক চিকিৎসার সরঞ্জমাদি

বাংলাদেশ শ্রম আইন ধারা ৮৯(১) এর বিধান অনুসারে প্রত্যেক প্রতিষ্ঠানের প্রতিটি বিভাগ, শাখা ও তলায় কমপক্ষে একটি করিয়া প্রাথমিক চিকিৎসার বাক্স বা আলমারি থাকিতে হইবে এবং উহা সুস্পষ্টভাবে রেড ক্রিসেন্ট বা ক্রস চিহ্নযুক্ত হইতে হইবে।

কারখানার ব্যক্তির সংখ্যার ভিত্তিতে প্রাথমিক চিকিৎসার বাক্স কি কি সামগ্রী কয়টি করে থাকবে তার বিবরণ নিচে উল্লেখ করা হলো:

সরঞ্জামাদি বিবরণ
নিযুক্ত ব্যক্তির সংখ্যা: ১০ এর কম (যান্ত্রিক শক্তি ব্যবহৃত প্রতিষ্ঠান)
নিযুক্ত ব্যক্তির সংখ্যা: ৫০ এর এর কম (যান্ত্রিক শক্তি ব্যবহৃত হয় না এমন প্রতিষ্ঠান ) নিযুক্ত ব্যক্তির সংখ্যা: ১০- ৫০ (যান্ত্রিক শক্তি ব্যবহৃত প্রতিষ্ঠান ) নিযুক্ত ব্যক্তির সংখ্যা ৫০ এর বেশি
ছোট জীবাণুমুক্ত ব্যান্ডেজ৬টি ৬টি ১২টি২৪টি
(প্রতিটি ০.৫ আউন্স) প্যাকেট জীবানুমুক্ত তুলা৩টি ৩টি ৬টি১২টি
মাঝারি আকৃতির জীবাণুমুক্ত ব্যান্ডেজ ৩টি ৩টি ৬টি ১২টি
বড় আকৃতির জীবাণুমুক্ত ব্যান্ডেজ ৩টি ৩টি ৬টি ১২টি
পুড়ে যাইবার ক্ষেত্রে ব্যবহার্য বড় আকৃতির জীবাণুমুক্ত ব্যান্ডেজ ৩টি ৩টি ৬টি ১২টি
হিবিসল বা হেক্সাসল ভর্তি (১ আউন্স) বোতল ১টি ১টি ১টি ১টি
রেকটিফাইড স্পিরিট ভর্তি (১ আউন্স) বোতল ১টি ১টি ১টি ১টি
কাঁচিএক জোড়া এক জোড়া এক জোড়া এক জোড়া
প্রাথমিক চিকিৎসার প্রচারপত্র ১টি ১টি ১টি ১টি
খাবার স্যালাইন প্যাকেট ৩টি ৩টি ৬টি ১২টি
বেদনানাশক ও এন্টাসিড জাতীয় বড়ি পর্যাপ্ত পরিমাণ পর্যাপ্ত পরিমাণ পর্যাপ্ত পরিমাণ পর্যাপ্ত পরিমাণ
পোড়ায় ব্যবহারের মলম পর্যাপ্ত পরিমাণ পর্যাপ্ত পরিমাণ পর্যাপ্ত পরিমাণ পর্যাপ্ত পরিমাণ
চোখের
মলম
পর্যাপ্ত পরিমাণ পর্যাপ্ত পরিমাণ পর্যাপ্ত পরিমাণ পর্যাপ্ত পরিমাণ
শল্য চিকিৎসার উপযুক্ত এন্টিসেপটিক দ্রবণ পর্যাপ্ত পরিমাণ পর্যাপ্ত পরিমাণ পর্যাপ্ত পরিমাণ পর্যাপ্ত পরিমাণ
টুরনিকেট (রক্তপাত বন্ধ করিবার উপকরণ)পর্যাপ্ত পরিমাণপর্যাপ্ত পরিমাণ
আঁঠালো প্লাস্টার১ রোল
(৪” চওড়া) রোলার ব্যান্ডেজ১২টি
(২” চওড়া) রোলার ব্যান্ডেজ১২টি
ত্রিকোণাকৃতি ব্যান্ডেজ৬টি
সেইফটি পিন২ প্যাকেট
হাড়ভাঙ্গার ক্ষেত্রে ব্যবহার্য বাঁশের/কাঠের চটি ১২ টি
  • এই বিধিতে উল্লিখিত বাক্স ও আলমারি, যন্ত্রপাতি এবং উপকরণসমূহ দায়িত্বপ্রাপ্ত ব্যক্তি কর্তৃক প্রতি ৩ (তিন) মাসে অন্তত একবার পরীক্ষা করিতে হইবে এবং কোন সামগ্রীর মেয়াদোত্তীর্ণ তারিখের অন্তত এক মাস পূর্বে উহা পরিবর্তন করিতে হইবে।
  • প্রতিটি কারখানায় বা প্রতিষ্ঠানে ডিসপেনসারিসহ চিকিৎসা কক্ষ কমপক্ষে একজন রেজিস্টার্ড চিকিৎসকের দায়িত্বে থাকিবে এবং তাহাকে সহায়তা করিবার জন্য অন্যূন একজন প্রশিক্ষিত কম্পাউন্ডার বা মেডিক্যাল এসিস্ট্যান্ট, নার্স এবং অধস্তন কর্মচারী থাকিবেন।

স্বাস্থ্য কেন্দ্র (Health Centre)

বাংলাদেশ শ্রম আইন ধারা ৮৯(৬) এর বিধান মোতাবেক একই মালিকের অধীন যে সকল প্রতিষ্ঠান বা প্রতিষ্ঠানসমূহ একই ভবনে বা একই স্থানে অবস্থিত সেইখানে পাঁচ হাজার বা ততোধিক শ্রমিক – কর্মচারী কর্মরত থাকিলে- প্রতিষ্ঠানের মালিক একটি স্বাস্থ্য কেন্দ্র প্রতিষ্ঠা করিবেন এবং শ্রধ বিধি ২০১৫ বিধি ৭৮ মোতাবেক অনুরূপ প্রতিটি স্বাস্থ্য কেন্দ্রে শ্রমিকদের কাজ চলাকালীন চিকিৎসা করিবার জন্য নিম্নবর্ণিত মেডিক্যাল স্টাফ থাকিতে হইবে,

শ্রমিক সংখ্যা রেজিস্ট্রার্ড চিকিৎসক সংখ্যা
৫০০০ হইতে ৭৫০০ শ্রমিকের জন্য ন্যূনতম দুইজন রেজিস্ট্রার্ড চিকিৎসক
৭৫০১ বা তদূর্পের জন্য ন্যূনতম তিন জন রেজিস্ট্রার্ড চিকিৎসক

প্রতি চিকিৎসকের জন্য ন্যূনতম একজন মেডিকেল এসিস্টেন্ট বা প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত নার্স এবং ন্যূনতম একজন যোগ্যতাসম্পন্ন ড্রেসার : তবে শর্ত থাকে যে , একাধিক চিকিৎসক নিয়োগের বিধান থাকিলে অন্ততপক্ষে একজন মহিলা চিকিৎসক নিয়োগের চেষ্টা করিতে হইবে।

বাংলাদেশ শ্রম বিধি ৭৭(খ) মোতাবেক পৃথক চিকিৎসা কক্ষের প্রয়োজন হইবে না , তবে প্রত্যেক স্বাস্থ্য কেন্দ্রে কমপক্ষে ৬টি শয্যা রাখিতে হইবে। এছাড়াও স্বাস্থ্য কেন্দ্র সংক্রান্ত যেসকল বিধি বিধান পালন করতে হবে:

  • পাঁচ হাজারের উর্ধ্বে প্রতি হাজার শ্রমিকের জন্য ১ টি হারে শয্যা সংখ্যা । বাড়াইতে হইবে এবং প্রতিটি শয্যার জন্য মেঝের আয়তন কমপক্ষে ৩৭২ বর্গমিটার জায়গা বরাদ্দ করিতে হইবে। তবে জরুরি অবস্থার ক্ষেত্রে মালিক, মহাপরিদর্শককে অবগত করিয়া মেঝের আয়তন শিথিল করিতে পারিবেন।
  • প্রতিষ্ঠানের স্বাস্থ্য কেন্দ্রে নিম্নবর্ণিত ব্যবস্থা থাকিতে হইবে, যথা :
    • পুরুষ ও মহিলাদের পৃথক শয্যা।
    • পৃথক শৌচাগার ও প্রক্ষালণ কক্ষসহ সংক্রামক ব্যাধির জন্য একটি শয্যাসহ পৃথক কক্ষ; বহির্বিভাগের রোগীদের জন্য ঘেরাও করা বসার জায়গাসহ পৃথক বিভাগ।
    • রোগীদের গোপনে পরীক্ষার জন্য পৃথক কক্ষ।
    • ছোটখাটো অস্ত্রোপচার ও ড্রেসিং কক্ষ।
    • ডিসপেনসারীর ঔষধ রাখিবার স্টোর।
    • চিকিৎসাধীন শয্যাশায়ী শ্রমিককে বিনামূল্যে ঔষধ ও খাবার সরবরাহ।
    • পরিবার কল্যাণ ও প্রজনন স্বাস্থ্য সংক্রান্ত তথ্য , প্রশিক্ষণ ও পরামর্শ প্রদানের ব্যবস্থা।
    • প্রসূতি মহিলা শ্রমিকদের প্রসব পূর্ব এবং প্রসব পরবর্তী সেবা ও পরামর্শ প্রদানের ব্যবস্থা।
    • রেজিস্টার্ড চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী ক্লিনিক্যাল এক্স-রে, ফিজিক্যাল থেরাপি, ইত্যাদি, প্রয়োজন হইলে মালিকের খরচে যথাসময়ে উহা ব্যবস্থা করা।

তবে শর্ত থাকে যে, মালিক যদি মহাপরিদর্শক বা তৎকর্তৃক ক্ষমতাপ্রাপ্ত পরিদর্শকের অনুমতিক্রমে অনুমোদিত অন্য কোন নিকটবর্তী হাসপাতালে শ্রমিকদের জন্য বিনামূল্যে চিকিৎসার ব্যবস্থা করিতে পারেন, তাহা হইলে উক্ত স্বাস্থ্য কেন্দ্রে ক্লিনিক্যাল ল্যাবরেটরী, এক্স-রে ও ফিজিক্যাল থেরাপী বিভাগ না থাকিলেও চলিবে।

Leave a Comment