কিভাবে আপনি রিটার্ন অডিটের ঝুঁকি কমাতে পারেন?

reduce the risk of return audit

আয়কর রিটার্ন দাখিল করার পর অনেকেই চিন্তিত থাকেন অডিটের ঝুঁকি নিয়ে। অডিটের ঝামেলা এড়াতে এবং কর্তৃপক্ষের সাথে স্বচ্ছতা বজায় রাখতে কিছু সহজ পদক্ষেপ অনুসরণ করা যেতে পারে। এই লেখায় আমরা আলোচনা করব কিভাবে আপনি আয়কর রিটার্ন অডিট এড়াতে পারবেন।

রিটার্ন অডিটের ঝুঁকি কমানোর উপায়

রিটার্ন অডিটের ঝুঁকি কমাতে কিছু সহজ পদক্ষেপ গ্রহণ করা যায়:

১. সঠিক এবং সত্য তথ্য প্রদান

রিটার্ন অডিট এড়িয়ে চলতে হলে রিটার্নে সঠিক ও সত্য তথ্য প্রদান করা অপরিহার্য। সকল আয়ের উৎস স্পষ্টভাবে প্রকাশ করুন এবং আয়ের উপর সঠিকভাবে কর প্রদান করুন। রিটার্নে প্রদত্ত সকল তথ্যের সঠিকতা ও সত্যতা নিশ্চিত করুন। আয়, খরচ, বিনিয়োগ, ঋণ ইত্যাদির সকল প্রয়োজনীয় কাগজপত্র সংগ্রহ করে রাখুন। আপনার আয়ের উৎস স্পষ্ট ও বৈধ কিনা তা নিশ্চিত করুন। অবৈধ বা অস্বচ্ছ উৎস থেকে আয় প্রদর্শন করা থেকে বিরত থাকুন।

২. রিটার্ন প্রস্তুতিতে সতর্কতা অবলম্বন

ভুল তথ্য প্রদানের ফলে জটিলতা তৈরি হতে পারে, এমনকি আইনি ঝামেলাও হতে পারে। তাই রিটার্ন দাখিল করার আগে সাবধানতার সাথে পরীক্ষা করে নেওয়া উচিত।আপনার আয়ের ধরন অনুযায়ী সঠিক কর হার প্রয়োগ করুন। কর ছাড়ের জন্য যোগ্য হলে, সঠিকভাবে কর ছাড় প্রদান করুন। রিটার্নের সাথে সকল প্রয়োজনীয় কাগজপত্র সংযুক্ত করুন।

কিছু গুরুত্বপূর্ণ কাগজপত্রের মধ্যে রয়েছে:

  • আয়ের প্রমাণপত্র: বেতন সার্টিফিকেট, ব্যবসায়িক আয়ের হিসাব ইত্যাদি
  • খরচের প্রমাণপত্র: ভাউচার, রসিদ ইত্যাদি
  • বিনিয়োগের প্রমাণপত্র: শেয়ার সার্টিফিকেট, ডিপিএস সার্টিফিকেট ইত্যাদি
  • ঋণের প্রমাণপত্র: ঋণ চুক্তি, ঋণের কিস্তির রশিদ ইত্যাদি

৩. একজন অভিজ্ঞ করদাতা উপদেষ্টার পরামর্শ নিন

রিটার্ন প্রস্তুতি একটি জটিল প্রক্রিয়া হতে পারে। বিশেষ করে যদি আপনার আয়ের উৎস বহুমুখী হয়, অথবা আপনি কর আইনের সাথে পরিচিত না হন। এই ক্ষেত্রে একজন অভিজ্ঞ করদাতা উপদেষ্টার পরামর্শ নেওয়া অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। একজন করদাতা উপদেষ্টা আপনাকে রিটার্ন সঠিকভাবে প্রস্তুত করতে সাহায্য করতে পারেন। তারা আপনার আয়ের ধরন অনুযায়ী সঠিক কর হার প্রয়োগ করতে, কর ছাড়ের জন্য যোগ্যতা নির্ধারণ করতে এবং রিটার্নের সাথে প্রয়োজনীয় কাগজপত্র সংযুক্ত করতে সহায়তা করবেন।

একজন অভিজ্ঞ করদাতা উপদেষ্টা রিটার্ন অডিটের ঝুঁকি কমাতে সাহায্য করতে পারেন। তারা রিটার্ন ত্রুটিগুলি চিহ্নিত করতে এবং সংশোধন করতে পারেন। উপদেষ্টা কর কর্তৃপক্ষের সাথে যোগাযোগ করতে এবং রিটার্ন অডিটের সময় আপনাকে প্রতিনিধিত্ব করতে সাহায্য করতে পারেন।

৪. রিটার্ন দাখিলের সময়সীমা মেনে চলুন

বর্তমান আয়কর আইন অনুযায়ী, ব্যক্তিগত করদাতাদের জন্য রিটার্ন দাখিলের শেষ তারিখ হলো আয়বর্ষ শেষ হওয়ার পরবর্তী ৩০শে নভেম্বর, যা কর দিবস নামে পরিচিত। অন্যদিকে, কোম্পানিগুলোর জন্য রিটার্ন দাখিলের শেষ তারিখ হলো আয়বর্ষ সমাপ্তির পরবর্তী সপ্তম মাসের ১৫ তারিখ। নির্ধারিত সময়ের মধ্যে রিটার্ন দাখিল না করলে বিলম্ব সুদ আরোপিত হবে। এছাড়া করদাতা সকল কর অব্যহতি ও করমুক্তি সুবিধা হতে বঞ্চিত হবেন।

সর্বোপরি, রিটার্ন দাখিলের নির্ধারিত সময়সীমা মেনে চলে আপনি রিটার্ন অডিটের ঝুঁকি কমাতে পারবেন, আইনি জটিলতা এড়াতে পারবেন এবং কর্তৃপক্ষের সাথে স্বচ্ছতা বজায় রাখতে পারবেন।

৫. পূর্ববর্তী কর বছরের আয় বৃদ্ধি

আয়কর আইনের ধারা ১৮২ অনুযায়ী, রিটার্ন অডিটের আওতাভুক্ত হওয়া থেকে রেহাই পাওয়ার একটি শর্ত হলো বর্তমান বছরের মোট আয় পূর্ববর্তী কর বছরের আয়ের কমপক্ষে ১৫% বেশি দেখানো। অর্থাৎ, যদি আপনি পূর্ববর্তী কর বছরে ১০০ টাকা আয় করে থাকেন, তাহলে বর্তমান বছরে আপনার আয় অবশ্যই ১১৫ টাকা বা তার বেশি হতে হবে। এই নিয়ম মেনে চললে আপনার রিটার্ন অডিটের জন্য নির্বাচিত হওয়ার সম্ভাবনা অনেক কমে যাবে।

আমাদের শেষকথা

আয়কর রিটার্ন অডিট একটি ঝামেলাপূর্ণ প্রক্রিয়া হতে পারে। তবে সঠিক পদক্ষেপ গ্রহণ করলে আপনি এই ঝুঁকি অনেকাংশে কমাতে পারেন। রিটার্নে সঠিক ও সত্য তথ্য প্রদান, রিটার্ন প্রস্তুতিতে সতর্কতা অবলম্বন, একজন অভিজ্ঞ করদাতা উপদেষ্টার পরামর্শ নেওয়া এবং রিটার্ন দাখিলের সময়সীমা মেনে চলার মাধ্যমে আপনি রিটার্ন অডিট এড়াতে পারবেন। আশাকরি এই লেখায় আলোচিত বিষয়গুলো মেনে চললে আপনি রিটার্ন অডিটের ঝুঁকি অনেকাংশে কমাতে পারবেন এবং কর্তৃপক্ষের সাথে সুসম্পর্ক বজায় রাখতে পারবেন।

Leave a Comment