কিভাবে হোল্ডিং ট্যাক্স নির্ধারণ করা হয়?

Holding Tax in Bangladesh

হোল্ডিং ট্যাক্স হলো স্থানীয় সরকার কর্তৃক ধার্যকৃত একটি বাধ্যতামূলক কর যা প্রতিটি বাড়ির মালিককে প্রদান করতে হয়। এই ট্যাক্স স্থানীয় সরকারের রাজস্ব আয়ের একটি গুরুত্বপূর্ণ উৎস এবং এটি এলাকার মৌলিক অবকাঠামো উন্নয়ন ও রক্ষণাবেক্ষণে ব্যবহৃত হয়।

গ্রামাঞ্চলে হোল্ডিং ট্যাক্সের হার শহরাঞ্চলের তুলনায় কম। গ্রামে, হোল্ডিং ট্যাক্সের হার সর্বনিম্ন ১% থেকে সর্বোচ্চ ৭% পর্যন্ত হতে পারে। অন্যদিকে, শহরাঞ্চলে হোল্ডিং ট্যাক্সের হার সর্বোচ্চ ১২% পর্যন্ত হতে পারে। এই ১২% এর মধ্যে ৭% হোল্ডিং ট্যাক্স, ২% পরিচ্ছন্ন ট্যাক্স এবং ৩% রোড লাইট ট্যাক্স অন্তর্ভুক্ত। আপনার বাড়ির মাপ অনুযায়ী হোল্ডিং ট্যাক্স হিসাব করার একটি সহজ পদ্ধতি নিচে ধাপে ধাপে উল্লেখ করা হলো।

হোল্ডিং ট্যাক্স নির্ধারণের পদ্ধতি

হোল্ডিং ট্যাক্স নির্ধারণের পদ্ধতি সম্পর্কে একটি প্রাথমিক ধারণা প্রদান করা হয়েছে, যেখান থেকে আপনার বাড়ি বা ফ্ল্যাটের হোল্ডিং ট্যাক্স কত টাকা আসবে তা আপনি হিসাব করতে পারবেন।

১. রেট চার্ট:

  • প্রথমে, আপনার বাড়ি/ফ্ল্যাটের অবস্থিত ওয়ার্ডের জন্য নির্ধারিত হোল্ডিং ট্যাক্সের রেট চার্ট খুঁজে বের করুন। DNCC ওয়েবসাইটে (www.dncc.gov.bd) এই রেট চার্ট পাওয়া যায়।

২. মাসিক মূল্যায়ন:

  • আপনার বাড়ি/ফ্ল্যাটের আয়তনকে সংশ্লিষ্ট এলাকার রেট দিয়ে গুণ করুন। এর ফলে আপনি এক মাসের মূল্যায়ন বের করতে পারবেন।

৩. বাৎসরিক মূল্যায়ন:

  • মাসিক মূল্যায়নকে ১০ দিয়ে গুণ করুন।
  • কারণ:
    • ১২ মাসে এক বছর হলেও, বাড়ি মেরামতের জন্য দুই মাসের মূল্যায়ন বাদ দেওয়া হয়।
    • সুতরাং, বার্ষিক মূল্যায়ন নির্ণয়ের জন্য ১০ মাসের মূল্যায়ন ব্যবহার করা হয়।

৪. হোল্ডিং কর:

  • বার্ষিক মূল্যায়নের ১২% হারে হোল্ডিং কর নির্ধারণ করা হয়।
  • উল্লেখ্য:
    • সরকারি আইনে সর্বোচ্চ ৩০% হারে হোল্ডিং কর ধার্য করা যায়।
    • কিন্তু DNCC শুধুমাত্র ১২% হারে কর ধার্য করে।

উদাহরণ:

বাড়ির আয়তন: ১,৫০০ বর্গফুট
সংশ্লিষ্ট এলাকার রেট: ৬.৫০ টাকা
মাসিক মূল্যায়ন: ১,৫০০ x ৬.৫০ = ৯,৭৫০ টাকা
বার্ষিক মূল্যায়ন: ৯,৭৫০ x ১০ = ৯৭,৫০০ টাকা
হোল্ডিং ট্যাক্স: ৯৭,৫০০ x ১২% = ১১,৭০০ টাকা

কিভাবে হোল্ডিং ট্যাক্স কমাতে পারবেন?

নিচে উল্লেখিত পদ্ধতির মাধ্যমে আপনি আপনার নির্ধারিত হোল্ডিং ট্যাক্সর উপর রেয়াত নিতে পারবেন। তাই এই অংশটি অবশ্যই সকল বাড়ির মালিকদের জেনে রাখা দরকার।

  • রিভিউ: নির্ধারিত “পি ফরম” পূরণ করে রিভিউ আবেদন করলে, কর পর্যালোচনা পরিষদ (Assessment Review Board) আপনার বার্ষিক মূল্যায়ন সর্বোচ্চ ১৫% পর্যন্ত হ্রাস করতে পারে। তবে এই সুবিধা নিতে হলে হোল্ডিং ট্যাক্স নির্ধারণের পর ৩০ দিনের মধ্যে আবেদন করতে হবে।
  • আপিল: কর পর্যালোচনা পরিষদের সিদ্ধান্তে আপত্তি থাকলে, ঢাকার বিভাগীয় কমিশনারের কাছে আপিল করতে পারেন। আপিলের পরিপ্রেক্ষিতে আপনার বার্ষিক মূল্যায়ন আরো ২৫% পর্যন্ত কমিয়ে দিতে পারেন।
  • নিজ বসবাসের সুবিধা: আপনি যদি আপনার বাড়ি/ফ্ল্যাটে নিজে বসবাস করেন, তাহলে আপনার বার্ষিক মূল্যায়ন আরো ৪০% হ্রাস হবে।
  • ঋণ সুবিধা: আপনি জেনে খুশি হবেন, যদি আপনার গৃহ নির্মাণ ঋণ থাকে বা আপনি যদি ফ্ল্যাট লোন নিয়ে থাকেন তাহলে আপনার গৃহীত ঋণের বাৎসরিক সুদ বার্ষিক মূল্যায়ন থেকে সম্পূর্ণ বাদ যাবে। এর ফলে আপনার বার্ষিক হোল্ডিং ট্যাক্স অনেকাংশ কমে যাবে। আপনার ঋণের মেয়াদ যত বছর বলবৎ থাকবে, ঠিক তত বছর আপনি এ কর হ্রাসের সুবিধা পাবেন। তবে মনে রাখবেন, রেজিস্ট্রার্ড বন্ধকী দলিল ব্যতিত এ সুবিধা পাওয়া যাবে না।
  • মুক্তিযোদ্ধা সুবিধা: আপনি কি বীর মুক্তিযোদ্ধা? আপনি যদি বীর মুক্তিযোদ্ধা হয়ে থাকেন তাহলে নিম্নোক্তভাবে পৌরকর সুবিধা পাবেন:
    • শহীদ পরিবার, যুদ্ধাহত ও খেতাবপ্রাপ্ত বীর মুক্তিযোদ্ধাদের বসবাসকৃত বাড়ি বা ফ্ল্যাট সম্পূর্ণভাবে হোল্ডিং করের আওতামুক্ত
    • সাধারণ বীর মুক্তিযোদ্ধাদের বাড়ি বা ফ্ল্যাটের ১৫০০ বর্গফুট পর্যন্ত হোল্ডিং করের আওতামুক্ত।
  • রিবেট সুবিধা: নির্ধারিত সময়সীমার মধ্যে হোল্ডিং ট্যাক্স পরিশোধ করলে সর্বোচ্চ ১০% রিবেট ‍সুবিধা পাবেন।

হোল্ডিং ট্যাক্স না প্রদানের ফলাফল

আপনি যদি নির্ধারিত সময়ের মধ্যে হোল্ডিং ট্যাক্স প্রদান না করেন তবে আপনাকে জরিমানা দিতে হতে পারে। আর আপনি যদি দীর্ঘ সময় ধরে হোল্ডিং ট্যাক্স প্রদান না করেন তবে স্থানীয় সরকার আপনার সম্পত্তি বাজেয়াপ্ত করতে পারে।

শেষ কথা

এই লেখায় আমরা হোল্ডিং ট্যাক্সের বিভিন্ন দিক, যেমন নির্ধারণ পদ্ধতি, কমানোর উপায় এবং না প্রদানের ফলাফল সম্পর্কে আলোচনা করেছি। এই লেখা আপনার জন্য সহায়ক হলে, অনুগ্রহ করে আপনার মন্তব্য শেয়ার করুন এবং এটি আপনার বন্ধুদের সাথে শেয়ার করুন।

Leave a Comment