কোম্পানি কী ও কয় প্রকার?

Company

আজকের ব্যবসা-বাণিজ্যের জগতে কোম্পানি একটি অপরিহার্য অংশ। বড় বাজার ধরতে এবং দীর্ঘস্থায়িত্ব লাভ করতে ব্যবসায়ীরা প্রায়শই কোম্পানি গঠনের পথ বেছে নেন। কিন্তু কোম্পানি আসলে কী? কয় ধরণের কোম্পানি আছে? এই লেখায় আমরা এই প্রশ্নগুলোর উত্তর খুঁজে বের করব।

কোম্পানি কী?

কোম্পানি হলো একাধিক ব্যক্তির সমন্বয়ে গঠিত একটি আইনি সত্তা যা ব্যবসায়িক উদ্দেশ্যে কাজ করে। কোম্পানিগুলো আকার, গঠন, এবং উদ্দেশ্যে একে অপরের থেকে আলাদা হতে পারে। কোম্পানি বিভিন্ন শিল্পের ক্ষেত্রে, যেমন প্রযুক্তি, অর্থ, উৎপাদন, স্বাস্থ্য সেবা ইত্যাদিতে, কাজ করতে পারে। কোম্পানির গঠন ও কার্যকলাপ সাধারণত আইনি বিধি দ্বারা নিয়ন্ত্রিত হয়। এদের শেয়ারহোল্ডার, একটি পরিচালনা পর্ষদ, এবং বিভিন্ন বিভাগ থাকতে পারে, যা ব্যবসার বিভিন্ন দিক পরিচালনা করে।

কোম্পানির বৈশিষ্ট্য

  • আইনি সত্তা: কোম্পানি আইনের চোখে একটি পৃথক ব্যক্তি হিসেবে বিবেচিত হয়।
  • সীমিত দায়: সীমিত দায় কোম্পানির ক্ষেত্রে, শেয়ারহোল্ডারদের দায় তাদের শেয়ারের মূল্য পর্যন্ত সীমাবদ্ধ থাকে।
  • চিরস্থায়ী উত্তরাধিকার: কোম্পানি তার শেয়ারহোল্ডারদের চেয়ে দীর্ঘস্থায়ী হয়।
  • পৃথক সম্পত্তি: কোম্পানির সম্পত্তি শেয়ারহোল্ডারদের ব্যক্তিগত সম্পত্তি থেকে আলাদা।

কোম্পানির সুবিধা

  • পুঁজি সংগ্রহের সুবিধা: কোম্পানি শেয়ার বিক্রি করে বড় অঙ্কের পুঁজি সংগ্রহ করতে পারে।
  • সীমিত দায়: সীমিত দায় কোম্পানির ক্ষেত্রে, শেয়ারহোল্ডারদের ব্যক্তিগত সম্পত্তি ঝুঁকিপূর্ণ থাকে না।
  • চিরস্থায়ী উত্তরাধিকার: কোম্পানি তার শেয়ারহোল্ডারদের চেয়ে দীর্ঘস্থায়ী হয়।
  • পৃথক সম্পত্তি: কোম্পানির সম্পত্তি শেয়ারহোল্ডারদের ব্যক্তিগত সম্পত্তি থেকে আলাদা।
  • ব্যবসায়িক ঝুঁকি হ্রাস: কোম্পানি গঠনের মাধ্যমে ব্যবসায়িক ঝুঁকি অনেকাংশে হ্রাস করা সম্ভব।
  • সুনাম অর্জন: কোম্পানি গঠনের মাধ্যমে ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের সুনাম বৃদ্ধি পায়।
  • দীর্ঘমেয়াদী পরিকল্পনা: কোম্পানি দীর্ঘমেয়াদী পরিকল্পনা ও বাজার সম্প্রসারণের সুযোগ করে দেয়।

কয় প্রকার কোম্পানি আছে?

বাংলাদেশে বিভিন্ন ধরণের কোম্পানি গঠন করা যায়। আপনার ব্যবসার প্রয়োজন ও উদ্দেশ্যের উপর নির্ভর করে আপনি সবচেয়ে উপযোগী কোম্পানি গঠন করতে পারবেন। এখানে কয়েকটি প্রচলিত ধরণের কোম্পানি সম্পর্কে আলোচনা করা হলো:

  • প্রাইভেট লিমিটেড কোম্পানি: এই ধরণের কোম্পানিতে, শেয়ারহোল্ডারদের দায় তাদের শেয়ারের মূল্য পর্যন্ত সীমাবদ্ধ থাকে। তবে, এই কোম্পানির মালিকানাধীনে কিছু বিধিনিষেধ থাকে। যেমন, শেয়ারহোল্ডাররা তাদের শেয়ার অন্য কাউকে বিক্রি করার আগে, প্রথমে কোম্পানির অন্য শেয়ারহোল্ডারদেরকে সেগুলো কেনার সুযোগ দিতে বাধ্য থাকে। এছাড়াও, এই কোম্পানিগুলো সাধারণ জনগণের কাছে শেয়ার বা ডিবেঞ্চার (ঋণপত্র) বিক্রি করতে পারে না এবং স্টক এক্সচেঞ্জে লেনদেন হয় না। সাধারণত, এই ধরণের কোম্পানিতে শেয়ারহোল্ডারের সংখ্যা একটি নির্দিষ্ট সীমার (সাধারণত ৫০ জন) মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকে।
  • পাবলিক লিমিটেড কোম্পানি: এই ধরণের কোম্পানি নিবন্ধিত এবং সীমিত দায়ের আওতাভুক্ত। এদের শেয়ার সাধারণ জনগণের কাছে বিক্রি করা যায় এবং স্টক এক্সচেঞ্জে লেনদেন হয়। যে কেউ এসব কোম্পানির শেয়ার কিনতে বা বিক্রি করতে পারে। পাবলিক লিমিটেড কোম্পানিগুলো কঠোরভাবে নিয়ন্ত্রিত হয় এবং বিনিয়োগকারীরা কোম্পানির সঠিক আর্থিক অবস্থা জানতে পারে, সেজন্য এদের পূর্ণ ও সঠিক আর্থিক অবস্থা প্রকাশ করতে হয়। এই ধরণের কোম্পানিকে “পাবলিকলি লিস্টেড কোম্পানি”ও বলা হয়, যার অর্থ হলো এটি এক বা একাধিক স্টক এক্সচেঞ্জে তালিকাভুক্ত।
  • গ্যারান্টি দ্বারা সীমাবদ্ধ কোম্পানি: এই ধরনের কোম্পানিতে শেয়ার ক্যাপিটাল (মূলধন) থাকে না। এতে সদস্যদের দায় সেই পরিমাণে সীমাবদ্ধ থাকে, যা কোম্পানি বন্ধ হয়ে যাওয়ার সময় প্রত্যেক সদস্য অবদান রা agreed সম্মত হয়েছিল।
  • অসীম দায় কোম্পানি: এই ধরনের কোম্পানি নিবন্ধিত হতে পারে শেয়ার ক্যাপিটাল (মূলধন) সহ অথবা ছাড়া। তবে, এই কোম্পানির সদস্য বা শেয়ারহোল্ডারদের দায় সীমাবদ্ধ থাকে না। অর্থাৎ, কোম্পানি যদি liquidation এ (বন্ধ হয়ে যাওয়া) যায় এবং কোম্পানির সম্পত্তি দিয়ে ঋণ পরিশোধ করা না যায়, তাহলে কোম্পানির সদস্য বা শেয়ারহোল্ডারদেরকে ব্যক্তিগত সম্পত্তি দায়বদ্ধ থাকে।

প্রাইভেট লিমিটেড ও পাবলিক লিমিটেড কোম্পানির মধ্যে পার্থক্য

প্রাইভেট লিমিটেড কোম্পানি গঠনের প্রক্রিয়া

Leave a Comment