“জমি কিনছেন নাকি মামলা কিনছেন?” এইরকম একটা কথা প্রচলিত আছে। তাই জমি কেনার সময় জমি ক্রেতাকে সতর্কতার সাথে সকল তথ্য সঠিকভাবে যাচাই বাছাই করে নিতে হয়। একজন জমি ক্রেতা জমি কেনার সময় যেসকল বিষয়গুলো বিবেচনা করবেন তা আমরা এই লেখায় উল্লেখ করলাম।
জমি ক্রয়ের পূর্বে ক্রেতার করণীয় (Things to Check Before Buying Land)
১। সম্পত্তিতে বিক্রেতার সঠিক মালিকানা আছে কিনা ও উক্ত সম্পত্তি বিক্রয়ের বৈধ অধিকার তার আছে কি-না তা যাচাই করুন।
বিক্রেতার নিকট থেকে দলিল, খতিয়ান এবং পর্চা নিয়ে পর্যায়ক্রমে রেজিস্ট্রি অফিস, ভূমি অফিস ও সেটেলমেন্ট অফিসে গিয়ে এগুলোর সঠিকতা যাচাই করুন।
২। সম্পত্তির সর্বশেষ খতিয়ান দাতার নিজ নামে আছে কিনা কিংবা পূর্ব পুরুষের সম্পত্তি হলে, সম্পত্তির সর্বশেষ খতিয়ান পূর্ব পুরুষের নামে আছে কি-না তা যাচাই করুন। কারন সম্পত্তি হস্তান্তর আইন, ১৮৮২ এর ৫৩সি ধারা মোতাবেক, কোন ব্যক্তি উত্তরাধিকার ব্যতীত অন্যভাবে সম্পত্তির মালিক হয়ে থাকলে, রাষ্ট্রীয় অধিগ্রহণ ও প্রজাস্বত্ব আইন, ১৯৫০ এর অধীন তার নিজ নামে সর্বশেষ খতিয়ান না থাকলে, অথবা উত্তরাধিকার সূত্রে সম্পত্তির মালিক হয়ে থাকলে, তার নিজ নামে বা পূর্ববর্তী নামে সর্বশেষ খতিয়ান প্রস্তুত করা না থাকলে, কোন স্থাবর সম্পত্তি বিক্রয় করতে পারবে না, যদি অন্য কোন ভাবে বিক্রয় হয়, তবে তা অবৈধ হবে।
বিক্রেতা উত্তরাধিকার সূত্রে সম্পত্তি পেয়ে থাকলে মৃত ব্যক্তির কতজন ওয়ারিশ আছেন, তা ওয়ারিশ সনদ নিয়ে ও বিক্রেতার প্রতিবেশিকে জিজ্ঞাসা করে যাচাই করুন। ওয়ারিশ হিসেবে প্রাপ্ত সম্পত্তির বেশি বিক্রয় করছেন কিনা যাচাই করুন।
৩। হাল সন পর্যন্ত ভূমি উন্নয়ন কর (খাজনা) পরিশোধ আছে কি-না যাচাই করুন। পূর্বেই ভূমি উন্নয়ন কর (খাজনা) পরিশোধ করা থাকলে ভূমি উন্নয়ন কর (খাজনা) পরিশোধের দাখিলা বা রশিদটি জাল কিনা তা সংশ্লিষ্ট সহকারী ভূমি উন্নয়ন কর্মকর্তার কার্যালয়ে গিয়ে যাচাই করুন।
৪। প্রস্তাবিত সম্পত্তির দখল বিক্রেতার আছে কি-না, যাচাই করুন। সম্পত্তিতে বিক্রেতার দখল না থাকলে সে জমি ক্রয় করা সঠিক হবে না।
৫। সম্পত্তিটি খাস কিংবা সরকারি কিনা যাচাই করুন। সরকারী বা খাস সম্পত্তি বিধিবহির্ভূত ভাবে ক্রয়-বিক্রয় শাস্তিযোগ্য অপরাধ।
৬। অন্য কোন পক্ষের সাথে বিক্রয় চুক্তি বা বায়না পত্র রেজিস্ট্রি করা আছে কিনা তা যাচাই করুন। সম্পত্তি হস্তান্তর আইন, ১৮৮২ এর ৫৩বি ধারা অনুযায়ী, বায়নাপত্র বলবত থাকাকালে, বায়নাপত্রের অধীন কোন স্থাবর সম্পত্তি, উক্ত বায়নাপত্র আইনানুগভাবে বাতিল না করে, বায়নাপত্র গ্রহীতা ব্যতীত অন্য কোন পক্ষের নিকট হস্তান্তর করা যাবে না, অন্য কোন ভাবে হস্তান্তর করা হলে তা বাতিল হবে।
৭। ব্যাংক বা কোন আর্থিক প্রতিষ্ঠানের নিকট দায়বদ্ধ কিনা তা যাচাই করুন। কারন সম্পত্তি হস্তান্তর আইন, ১৮৮২ এর ৫৩ডি ধারা মোতাবেক, বন্ধক-গ্রহীতার লিখিত সম্মতি ব্যতীত কোন নিবন্ধিত বন্ধকী স্থাবর সম্পত্তি পুনঃবন্ধক বা বিক্রয় করা যায় না, এতৎসত্ত্বেও কোন পুনঃবন্ধক বা বিক্রয় করা হলে তা বাতিল হবে।
৮। নাবালকের সম্পত্তি হলে বৈধ অভিভাবক অথবা আদালত কর্তৃক নিযুক্ত অভিভাবকের বিক্রয়ের ক্ষমতা আছে কি-না যাচাই করুন।
৯। হস্তান্তরের জন্য প্রস্তাবিত সম্পত্তি সরকারের অনুকুলে বাজেয়াপ্ত কিনা যাচাই করুন।
১০। প্রস্তাবিত হস্তান্তর আপাততঃ বলবত অন্য কোন আইনের কোন বিধানের সহিত সাংঘর্ষিক কিনা যাচাই করুন।
১১। জমি বিক্রয়ের জন্য অ্যাটর্নি নিয়োগ করা আছে কি-না তা যাচাই করুন। অ্যাটর্নি নিয়োগ করা থাকলে অ্যাটর্নি ছাড়া মূল মালিকের সম্পাদন গ্রহণযোগ্য নয়। অবশ্য বিধি মোতাবেক পাওয়ার অব অ্যাটর্নি দলিল বাতিল করে মূল মালিকের সম্পাদনে দলিল রেজিস্ট্রি করা যাবে।
১২। দলিল লেখার জন্য একজন ভাল দলিল লেখকের সহযোগীতা নিন। রেজিস্ট্রি অফিসে রেজিস্ট্রির জন্য দলিল দাখিলের পূর্বে দলিলটি ভালভাবে পড়ে নিন। দলিলের গুরুত্বপূর্ণ যায়গাগুলো বার বার পড়ে নিশ্চিত হোন যে, দলিলটি নির্দিষ্ট ফরমেটে আইন ও বিধি অনুযায়ী লেখা হয়েছে।
⭐️⭐️⭐️ প্রতিদিন আপডেট পেতে এখানে ক্লিক করুন ⭐️⭐️⭐️