বর্তমান সময়ে সরকারী ও ব্যাংকিং বিভিন্ন সেবার জন্য করদাতার হিসাবে নিবন্ধন করতে হয়, যার জন্য করদাতার সনাক্তকরণ নম্বর (TIN) সার্টিফিকেট নিতে হয়। নতুন যে আয়কর আইন পাশ হয়েছে সেই আয়কর আইনের ধারা ২৬২ অনুযায়ী করদাতা আবেদনের মাধ্যমে তাদের নিবন্ধন বা টিন (TIN) সার্টিফিকেট বাতিল করতে পারবেন। যেসকল ব্যক্তি করদাতা নিবন্ধন বা টিআইএন সার্টিফিকেট বাতিল করতে পারবেন, কিভাবে টিন সার্টিফিকেট বাতিল (TIN Certificate Cancel) হবে সেই সম্পর্কে আমরা বিস্তারিত এই লেখার মাধ্যমে জানতে পারবো।
টিন সার্টিফিকেট বাতিল বলতে কি বোঝায়? TIN Certificate Cancel
আয়কর আইনের ২৬২(৫) ধারাতে করদাতা নিবন্ধন বাতিল বলতে বোঝানো হয়েছে যে, “নিবন্ধন বাতিল” অর্থ একটি টিআইএন এর নিষ্ক্রিয়করণ (inactive), রহিতকরণ (dormant) এবং সর্বসাধারণের ব্যবহার অনুপযোগীকরণ, কিন্তু ইতিমধ্যে প্রাপ্ত তথ্যের বিলোপ (deletion) বা মোচন (erasure) বুঝাইবে না।
যেসকল ব্যক্তি করদাতা নিবন্ধন বাতিল করতে পারবেন
১. যাদের রিটার্ন দাখিলের প্রমাণ দাখিলের বাধ্যবাধকতা নাই
২. যারা করদাতা নয়
৩. পরপর বিগত ৩ (তিন) বৎসর করযোগ্য আয় শূন্য হন এবং শারীরিক অক্ষমতার কারণে বা অন্য কোনো কারণে ভবিষ্যতে কোনো করযোগ্য আয় শূন্য থাকিবেন
৪. যাদের রিটার্ন দাখিলের প্রয়োজন নাই
৫. মৃত্যু, অবসায়ন, অবলুপ্তি (dissolution) বা অনুরূপ অন্য কোনো কারণে অস্তিত্বহীন হয়ে যান
৬.স্থায়ীভাবে বাংলাদেশ ত্যাগ করেন এবং বাংলাদেশে আয় উপার্জক কোনো কর্মকাণ্ড করবেন না
৭. ডুপ্লিকেট (duplicate) নিবন্ধন বা ভুল নিবন্ধন পেয়ে থাকলে
৮. আইনি মর্যাদা পরিবর্তন করেন
৯. অন্য কোনো আইনানুগ কারণ প্রদর্শন করেন।
কিভাবে করদাতার নিবন্ধন বাতিল হবে?
উপরোক্ত যেকোন কারণে করদাতা নিবন্ধন বাতিল করতে পারবেন। এরজন্য করদাতাকে সংশ্লিষ্ট আয়কর অফিসে আবেদন করতে হবে। আয়কর কর্তৃপক্ষ, নিবন্ধন বাতিলের আবেদন প্রাপ্তির পর, আবেদনের বিষয়ে যাচাই-বাছাই করিয়া করদাতার নিবন্ধন বাতিল করতে পারবেন, যদি তিনি নিশ্চিত হন যে-
(ক) করদাতা কর্তৃক পরিশোধিতব্য কোনো বকেয়া দায় নাই
(খ) করদাতার বিরুদ্ধে কোনো কর নির্ধারণ নিষ্পন্নাধীন নাই
(গ) কোনো ফোরামে আয়কর সংক্রান্ত কোনো বিরোধ নিষ্পন্নাধীন নাই
(ঘ) করদাতা কর্তৃক উপরের উল্লেখিত করদাতা নিবন্ধন বাতিলের যে কারণগুলো বর্ণিত হয়েছে তার যেকোন একটি কারণ উল্লেখ করেছেন এবং উহার সত্যতা রহিয়াছে।
এছাড়া বোর্ডও নিম্নবর্ণিত বিষয়ে স্বতঃপ্রবৃত্ত হইয়া কোনো করদাতার নিবন্ধন বাতিল করিতে পারিবে, যথা-
(ক) উপরে উল্লেখিত কারণসমূহের অধীন কোনো করদাতাকে নিবন্ধন বাতিলের যুক্তি রহিয়াছে
(খ) কোনো করদাতার প্রকৃত বা বৈধ উৎসের কোনো আয় নাই বলিয়া বিশ্বাস করিবার যুক্তিসঙ্গত কারণ রহিয়াছে
(গ) নিবন্ধনটি আর্থিক অপরাধ সংঘটনের লক্ষ্যে বা অর্থ পাচারের কোনো স্কিমের অংশ হিসাবে করা হয়েছে
(ঘ) নিবন্ধন প্রক্রিয়ায় প্রদত্ত তথ্য ভুল এবং অসত্য।
টিন সার্টিফিকেট বাতিলের জন্য আবেদন পত্রের নমুনা
বরাবর,
উপ কর কমিশনার/ কমিশনার
কর সার্কেল- ১৫, কর অঞ্চল- ১, ঢাকা
ঢাকা।
বিষয়: টিন বাতিল করার জন্য আবেদন প্রসঙ্গে।
মহোদয়,
যথাবিহীত সম্মানপূর্বক নিবেদন এই যে. আমি নিম্নস্বাক্ষরকারী জমি ক্রয়ের জন্য বছর তিনেক আগে টিন সার্টিফিকেট TIN Certificate করেছিলাম। আমি আমার একটি ডোবা জমি বিক্রি করে বসতবাড়ি করার জন্য আরেকটি জমি ক্রয় করে বাড়ি তৈরি করি। দীর্ঘদিন ধরে আমার আয় না থাকা শর্তে ও গত তিন বছর ধরে জিরো রিটার্ণ দাখিল করে আসছি (কপি সংযুক্ত)। বর্তমানে আমার করযোগ্য আয় না থাকায় আমি টিআইএন নম্বর ১২৩৪৫৬৭৮৯০১২ বন্ধ করতে ইচ্ছুক ।
অতএব, আমার করযোগ্য আয় না থাকায় আমার টিন সার্টিফিকেট খানি বন্ধের প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণে আপনার সদয় মর্জি হয় ।
সংযুক্তি : বর্ননামতে
১. —– (৷- ) কপি
২. টিন সার্টিফিকেটের কপি,
৩. পূর্ববর্তী আয়কর রিটার্ণের রশিদ/প্রত্যয়ণপত্র.
৪. জাতীয় পরিচপত্রের ফটোকপি
বিনীত নিবেদক,
মো: ——————– ———
ঢাকা।
টিআইএন নম্বর: ১২৩৪৫৬৭৮৯০১২, কর সার্কেল- ১৫, কর অঞ্চল- ১, ঢাকা
মোবাইল নম্বর: ০১৭——
শেষ কথা
করদাতা নিবন্ধন বাতিলের বিধানে আয়কর অধ্যাদেশে ছিলো না যা আয়কর আইনে সংযোজন করা হয়েছে। কিন্তু যেহেতু একজন ব্যক্তি তার এনআইডি কার্ড দিয়ে মাত্র একবারই টিআইন সার্টিফিকেট করতে পারেন তাই টিআইএন সার্টিফিকেট বাতিলের ক্ষেত্রে অবশ্যই এর প্রয়োজনীয়তা আছে কিনা বিবেচনা করবেন। একবার টিআইএন বাতিল করে পরবর্তীতে নতুন করে টিআইএন চালু করতে হলে বেশ জটিলতায় পড়ার সম্ভাবনা আছে। তাই একান্ত প্রয়োজন না হলে টিআইএন সার্টিফিকেট বাতিল না করায় উত্তম।