বর্তমান অর্থনৈতিক প্রতিকূলতার কারণে অনেক প্রতিষ্ঠানই প্রতিষ্ঠানের পরিচালনা ব্যয় কমানোর জন্য কর্মী ছাটাই করছে। কিন্তু একটা কোম্পানী চাইলেই কি কোন কর্মী ছাটাই করতে পারবে?বাংলাদেশ শ্রম আইন ২০০৬-এর চ্যাপ্টার দুইতে শ্রমিক ছাটাই সম্পর্কিত পদক্ষেপ নিয়ে আলাদা আলাদা নিয়মের উল্লেখ রয়েছে। কিন্তু চাকুরীর অবসানের ক্ষেত্রে প্রাতিষ্ঠানিক খাতের কর্মী কি ধরনের আর্থিক সুবিধা পাবেন সেই ব্যাপারেও বাংলাদেশে নির্দিষ্ট কোন আইন নেই। কাজের ধরনের উপর নির্ভর করে শ্রমিক ও কর্মী নির্ধারিত হয়। কর্মীরা সাধারণত প্রাতিষ্ঠানিক খাতে অফিস আদালতে কাজ করেন বলে মনে করা হয়। তবে প্রাতিষ্ঠানিক কার্যালয়েও শ্রমিক থাকতে পারেন। শ্রম আইন শুধু শ্রমিকদের ক্ষেত্রেই কাজে আসবে। প্রতিষ্ঠানের নিয়োগের সময় একজন কর্মী কি ধরনের দরকষাকষি করতে পেরেছে তার উপর নির্ভর করে কর্মীর চাকরির অবসায়নের সুযোগ-সুবিধা পরিমাণ নির্ধারিত হবে।
মালিক কতৃর্ক শ্রমিকের চাকুরীর অবসানের নিয়ম
মালিক কতৃর্ক শ্রমিকের চাকুরীর অবসানের জন্য মাসিক মজুরীর ভিত্তিতে নিয়োজিত শ্রমিকের ক্ষেত্রে ১২০ দিনের, অন্য শ্রমিকের ক্ষেত্রে ৬০ দিনের লিখিত নোটিশ প্রদান করিয়া কোন স্থায়ী শ্রমিকের চাকুরীর অবসান করিতে পারিবেন৷ ২৬(১)
মাসিক মজুরীর ভিত্তিতে নিয়োজিত শ্রমিকের ক্ষেত্রে ৩০ দিনের, অন্য শ্রমিকের ক্ষেত্রে ১৪ দিনের লিখিত নোটিশ প্রদান করিয়া কোন অস্থায়ী শ্রমিকের চাকুরীর অবসান করিতে পারিবেন, যদি না এই অবসান যে অস্থায়ী কাজ সম্পাদনের জন্য শ্রমিককে নিযুক্ত করা হইয়াছে উহা সম্পূর্ণ হওয়া, বন্ধ হওয়া, বিলুপ্ত হওয়া বা পরিত্যক্ত হওয়ার কারণে হয়৷ ২৬(২)
যে ক্ষেত্রে মালিক বিনা নোটিশে কোন শ্রমিকের চাকুরীর অবসান করিতে চাহেন সে ক্ষেত্রে, তিনি প্রদেয় নোটিশের পরিবর্তে নোটিশ মেয়াদের জন্য মজুরী প্রদান করিয়া ইহা করিতে পারিবেন৷ ২৬(৩)
নোটিশের একটি কপি প্রধান পরিদর্শক অথবা তৎকর্তৃক নির্ধারিত কোন কর্মকর্তার নিকট প্রেরণ করিতে হইবে, এবং আরেকটি কপি প্রতিষ্ঠানের যৌথ দর কষাকষি প্রতিনিধিকে, যদি থাকে, দিতে হইবে। ২০(২খ)
চাকুরীর অবসানের সময় শ্রমিক যেসকল সুবিধা প্রাপ্য হবেন
- কোন স্থায়ী শ্রমিকের চাকুরীর অবসান করলে মালিক শ্রমিককে তাহার প্রত্যেক সম্পূর্ণ বৎসরের চাকুরীর জন্য ক্ষতিপূরণ হিসাবে ত্রিশ দিনের মজুরী, অথবা গ্রাচ্যুইটি, যদি প্রদেয় হয়, যাহা অধিক হইবে, প্রদান করিবেন এবং এই ক্ষতিপূরণ এই আইনের অধীন শ্রমিককে প্রদেয় অন্যান্য সুবিধার অতিরিক্ত হইবে৷ ২৬(৪)
- অজির্ত ছুটির টাকা
- সাভির্স বেনিফিট
- চলতি মাসের বেতন এবং ওভারটাম
- কোন পূর্ব নোটিশ ছাড়া ছাটাই করলে, আইন অনুসারে নোটিশ মেয়াদের জন্য মজুরী প্রদান
তবে বরখাস্ত হওয়া শ্রমিক কোন ধরনের বেতন ভাতা ছাড়াই চাকুরী হারাবেন। কিন্তু তাকে বরখাস্তের আগে কারণ দর্শাও নোটিস করতে হবে, অন্যায়ের অভিযোগ তদন্ত করতে হবে, তদন্তে শুধু মালিকের পছন্দের ব্যক্তি নয় শ্রমিক পক্ষের ব্যক্তিও থাকতে হবে।
অন্যায় হলে কোথায় যাবেন?
বাংলাদেশে ঢাকা, চট্টগ্রাম, খুলনা ও রাজশাহীতে সাতটি শ্রম আদালত রয়েছে। কোন শ্রমিক যদি মনে করেন যে তাকে বঞ্চিত করা হয়েছে, তাহলে তিনি শ্রম আদালতে মামলা করতে পারবেন। কিন্তু বাস্তবতা হচ্ছে, বাংলাদেশে মামলা নিষ্পত্তি হতে এত বেশি সময় ও অর্থ ব্যয় হয় যে, যা একজন শ্রমিকের পক্ষে বহন করা কষ্টকর। শ্রমিকদের আইনি সহায়তা দেয়ার জন্য সরকারি একটি সেল রয়েছে। কিন্তু তার কার্যক্রম বাস্তবে খুবই সীমিত।