করদাতা ট্যাক্স প্লানিংয়ের মাধ্যমে একদিকে যেমন তার আয়কর হ্রাস করতে পারে আবার অন্যদিক বিনিয়োগের পরিমাণ বৃদ্ধি করতে পারে। ট্যাক্স প্লানিং একটি সৎ এবং কার্যকরী পদক্ষেপ, যার মাধ্যমে করদাতা কর আইনের নিয়ম নীতিগুলো মেনে চলে আইনগতভাবে আয়করের সর্ব্বোচ্চ সুবিধা নিতে পারে।
কেন ট্যাক্স প্লানিং করবেন? Why Tax Planning is needed?
দেশের অর্থনীতিতে জনগণের অংশ গ্রহণে উৎসাহ দিতে সরকার বিভিন্ন সময় নানাবিধ বিনিয়োগ প্রণোদনা দিয়ে থাকে। এই প্রণোদনায় জনগণকে আগ্রহী করতে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড কর্তৃক কর ছাড় দেওয়া হয়। Exemptions, deductions, rebates, reliefs নামে এই কর ছাড়গুলো করদাতা উপভোগ করতে পারেন। তবে ট্যাক্স প্লানিং মানে শুধুমাত্র করের টাকা কমানো নয়, বরং সর্ব্বোচ্চ বিনিয়োগ সুবিধা গ্রহণ। যেসকল কারণে ট্যাক্স প্লানিং করবেন, তার একটি চেক লিস্ট তৈরি করা হলো:
- করের পরিমাণ কমানো
- করের আইনগত জটিলতা নিরসন
- বিনিয়োগের সর্বোত্তম ব্যবহার
- দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়ন
- দেশের স্থিতিশীল অর্থনীতিতে অবদান
ট্যাক্স প্লানিংয়ে সতর্কতা – Caution in Tax Planning
ট্যাক্স প্লানিংয়ে কয়েকটি বিষয় যদি বিবেচনা না করা হয়, তাহলে যে উদ্দেশ্যে ট্যাক্স প্লানিং করা সেই উদ্দেশ্য সফল নাও হতে পারে। তাই ট্যাক্স প্লানিংয়ে যেসকল বিষয়ে সতর্কতা অবলম্বন করা উচিত:
- ট্যাক্স প্লানিংয়ে আয়কর আইনের সহিত ব্যবসা সংশ্লিষ্ট অন্যান্য আইন-কানুনগুলোও মেনে চলতে হবে। নতুবা ট্যাক্স প্লানিংয়ের সঠিক সুফল নাও পাওয়া যেতে পারে।
- শুধুমাত্র কর ছাড়ের জন্য বিনিয়োগ সিদ্ধান্ত না নিয়ে, বিনিয়োগ থেকে ব্যবসায় মুনাফা অর্জিত হবে কিনা এবং ব্যবসায় পরিচালনার সকল অবকাঠামোগত সুবিধাগুলো বিবেচনা করতে হবে।
- করফাঁকি দিয়ে স্বল্পমেয়াদী সুবিধা পাওয়া গেলেও পরবর্তীতে আইনগত জটিলতার সম্মুখিন হওয়া লাগতে পারে। তাই ট্যাক্স প্লানিংটা হওয়া উচিত আয়কর আইন ও বিধি মোতাবেক।
- ট্যাক্স প্লানিং এমনভাবে করা উচিত যে কোন কারণে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড কোন আইন পরিবর্তন করলে, সেই অনুযায়ী সহজেই নিজের ট্যাক্স প্লান পরিবর্তন করা যায়।
কিভাবে ট্যাক্স প্লানিং করা যায়? How to do tax planning?
ট্যাক্স প্লান সফল করতে হলে আমাদের যেসকল বিষয়সমূহ পরিপালন করতে হবে:
- আয়-ব্যয়ের সকল হিসাব যথাযথ নিয়মে রেকর্ড রাখা
- উৎসে কর্তনকারী সংস্থা হলে, যথাযথ নিয়মে উৎসে কর কর্তন করা এবং নির্ধারিত সময়ে সার্কেলে জমা প্রদান
- যাদের অগ্রিম কর প্রদানের বিধান রয়েছে, তাদের অগ্রিম কর যথাসময়ে জমা প্রদান
- নির্ধারিত সময়ের ভিতর ট্যাক্স রিটার্ন জমা দেওয়া
- কর কর্তৃপক্ষ কর্তৃক জারিকৃত প্রজ্ঞাপনসমূহ মেনে চলা
- মামলা এড়িয়ে চলার চেষ্টা করা
- ট্যাক্সের সকল নথিসমূহ যথাযথাভাবে সংরক্ষণ করা
- ব্যবসায়ের খরচ হিসাব করার সময় কর কর্তৃপক্ষ কর্তৃক অগ্রহণযোগ্য খরচসমূহ পরিহার করার চেষ্টা করা
শেষকথা
আমরা দেখতে পেলাম যে ট্যাক্স প্লানিং শুধুমাত্র করের বোঝা কমানোর একটি উপায় নয়, বরং এটি দেশের অর্থনীতিতে অংশগ্রহণ এবং ব্যক্তিগত আর্থিক লক্ষ্য অর্জনের একটি কৌশল। সরকারের বিভিন্ন প্রণোদনা এবং কর ছাড়ের সুযোগ গ্রহণ করে করদাতা তার আয়কর হ্রাস করতে পারে এবং একই সাথে বিনিয়োগের মাধ্যমে ভবিষ্যৎ নিশ্চিত করতে পারে।
ট্যাক্স প্লানিং একটি জটিল প্রক্রিয়া। এটি শুধুমাত্র আইনী জ্ঞানের প্রয়োজন নয়, বরং আর্থিক পরিকল্পনা এবং বিনিয়োগের দক্ষতারও প্রয়োজন। সুতরাং, করদাতাদের উচিত একটি সুপরিকল্পিত এবং দীর্ঘমেয়াদী ট্যাক্স প্ল্যান তৈরি করা এবং তা নিয়মিত পর্যালোচনা করা।