Site icon Chartered Journal

WPPF কি ও কিভাবে কাজ করে?

WPPF meaning

আপনি জানেন কি কোম্পানির মুনাফার একটি অংশ কোম্পানির সকল কর্মচারীরা অংশীদার হবে, যা WPPF নামে পরিচিত। WPPF এর পূর্নাঙ্গ অর্থ Workers Profit Participation Fund.বাংলাদেশ শ্রম আইন ২০০৬ এর পঞ্চাদশ অধ্যায় (ধারা ২৩২-২৫২) এ WPPF সম্পর্কে বিস্তারিত উল্লেখ রয়েছে।

WPPF এর মূল লক্ষ্য হলো শ্রমিকদের অবদানের স্বীকৃতি প্রদান, তাদের জীবনযাত্রার মান উন্নত করা এবং কোম্পানির মালিকানা ও পরিচালনায় তাদের অংশগ্রহণ বৃদ্ধি করা। এই লেখায় আমরা WPPF এর ধারণা, এর কার্যপ্রণালী এবং বাংলাদেশ শ্রম আইন অনুসারে এর প্রয়োগ নিয়মাবলী সহজ ভাষায় তুলে ধরার চেষ্টা করব।

WPPF কি?

WPPF হলো কোম্পানির মুনাফার একটি নির্দিষ্ট অংশ শ্রমিকদের মধ্যে বন্টন করার একটি নীতি। এই নীতি অনুযায়ী, কোম্পানির মুনাফার ৫% শ্রমিকদের মধ্যে বন্টন করা বাধ্যতামূলক।

কোন প্রতিষ্ঠানের জন্য WPPF তহবিল তৈরি বাধ্যতামূলক?

নিম্নলিখিত শর্তাবলী পূরণকারী প্রতিষ্ঠানগুলোর জন্য WPPF তৈরি করা বাধ্যতামূলক:

এছাড়াও সরকার, সরকারী গেজেটে প্রজ্ঞাপন দ্বারা অন্য কোম্পানী ও প্রতিষ্ঠান এবং বৈদেশিক মুদ্রা বিনিয়োগকারী শিল্প সেক্টরের ক্ষেত্রে সরকার বিধি দ্বারা এই ফান্ড তৈরি করতে পারবে।

কতদিনের ভিতর তহবিল গঠন করতে হবে?

তহবিল গঠনের প্রযোজ্য হইবার তারিখ হইতে এক মাসের মধ্যে একটি শ্রমিক অংশগ্রহণ তহবিল (Participation Fund) ও একটি শ্রমিক কল্যাণ তহবিল (Workers’ Welfare Fund) গঠন করা হবে।

তহবিল মূল্য কত হবে?

কোম্পানীর নীট মুনাফার ৫% অর্থ ৮০:১০:১০ অনুপাতে যথাক্রমে অংশগ্রহণ তহবিল, কল্যান তহবিল এবং বাংলাদেশ শ্রমিক কল্যাণ ফাউন্ডেশন আইন, ২০০৬ এর ধারা ১৪ এর অধীন স্থাপিত শ্রমিক কল্যাণ ফাউন্ডেশন তহবিলে প্রদান করিবে।

কতদিনের ভিতর তহবিলের অর্থ বন্ঠন করতে হবে?

কোম্পানির অর্থ বছর শেষ হওয়ার নয় (০৯) মাসের ভিতর উপরে উল্লেখিত হারে উল্লেখিত তহবিলে অর্থ প্রদান করবেন।

কিভাবে তহবিল পরিচালিত হবে?

ওয়ার্কার পার্টিসিপেশন ইন কোম্পানী প্রফিট তহবিল পরিচালনার জন্য একটি ট্রাস্টি বোর্ড গঠন করা হবে। ট্রাস্টি বোর্ডে চারজন্য সদস্য থাকবে।

ট্রাস্টি বোর্ডের সদস্যগণ প্রতি বছর পালাক্রমে শ্রমিক প্রতিনিধি ও ব্যবস্থাপনা প্রতিনিধিদের মধ্য থেকে একজনকে ট্রাস্টি বোর্ডের চেয়ারম্যান নির্বাচিত করবেন। তবে প্রথম চেয়ারম্যান হবেন ব্যবস্থাপনা কর্তৃপক্ষের মনোনীত সদস্যদের মধ্য থেকে।

তবে সরকার যদি মনে করে যে ট্রাস্টি বোর্ড সুষ্ঠভাবে পরিচালিত হচ্ছে না, তাহলে ট্রাস্টি বোর্ড অথবা ট্রাস্টি বোর্ডের যেকোনো সদস্যকে কারণ দর্শানো আদেশের মাধ্যমে সদস্যপদ বাতিল/অপসারণ করতে পারবে। এছাড়াও, ট্রাস্টি বোর্ডের সদস্যদের ক্ষমতা ও দায়িত্ব বন্টন করতে পারবে।

সরকার কর্তৃক কোন ট্রাস্টি বোর্ড, সদস্য বা বোর্ডের চেয়ারম্যানের সদস্যপদ অপসারণ করা হইলে উক্ত সদস্যবৃন্দ পুনরায় পুনরায় পুনঃনির্বাচিত বা মনোনীত হতে পারবেন না।

কোথায় তহবিলের অর্থ বিনিয়োগ করা যাবে?

কোম্পানী ব্যাংক হারের আড়াই শতাংশ অধিক হারে অথবা উহার সাধারণ শেয়ারের জন্য ঘোষিত মুনাফার হারের পঁচাত্তর শতাংশ হারে, যাহা অধিক হবে, সেই হারে প্রদানের নিমিত্তে অংশগ্রহণ তহবিল (Participation Fund)  এর অর্থ কোম্পানী ব্যবসায় পরিচলনার কাজে ব্যবহার করতে পারবে।

এছাড়াও কোম্পানী ট্রাস্টি বোর্ডকে অংশগ্রহণ তহবিল (Participation Fund) এর অর্থ নিচে উল্লেখিত ক্ষেত্রে বিনিয়োগ এর পরামর্শ দিতে পারবেনঃ

১. I.C.B মিউচুয়াল ফান্ড সার্টিফিকেট

২. I.C.B ইউনিট সার্টিফিকেট

৩. ডিফেন্স, পোস্ট সেভিং সার্টিফিকেট ও সরকারী সিকিউরিটিজ

৪. সরকার কর্তৃক অনুমোদিত অন্য যেকোন সিকিউরিটিজ

আর কল্যাণ তহবিল (Workers’ Welfare Fund) এর অর্থ ট্রাস্টি বোর্ডের সিদ্ধান্তক্রমে ব্যবহৃত হবে এবং ট্রাস্টি বোর্ড তৎসম্পর্কে সরকারকে অবহিত করবেন।

কারা সুবিধাভোগ করবেন?

কোম্পানীর মালিক কিংবা অংশীদার কিংবা পরিচালনা পর্ষদের সদস্য ব্যতিত পদমর্যাদা নির্বিশেষ উক্ত কোম্পানীতে কর্মরত সকল কর্মকর্তা/কর্মচারী/শিক্ষানবিশ, যিনি কোম্পানীতে অনুন্য নয় মাস যাবত চাকুরীতে নিযুক্ত রহিয়াছেন। তবে, কোন হিসাব বছরে কোন সুবিধাভোগীর চাকুরীর বয়স অনুন্য ছয়মাস পূর্ণ না করলে তিনি উক্ত বছরের তহবিলদ্বয়ে অংশগ্রহণ করতে পারবেন না।

কি পরিমাণ সুবিধা ভোগ করবেন?

প্রতি বছর, অংশগ্রহণ তহবিলের জমা অর্থের দুই-তৃতীয়াংশ সমান অনুপাতে সকল সুবিধাভোগী কর্মীর মধ্যে নগদে বন্টন করা হবে।

অবশিষ্ট এক-তৃতীয়াংশ নির্ধারিত বিনিয়োগখাতে বিনিয়োগ করা হবে এবং প্রাপ্ত মুনাফাও সমান অনুপাতে বন্টন করা হবে

উৎস কর ও করমুক্ত আয় সুবিধাসমূহ

কোম্পানীর ক্ষেত্রে তহবিলসমূহে বরাদ্দকৃত অর্থের উপর কোম্পানীকে কোন কর প্রদান করতে হবে না।তহবিলের সুবিধাপ্রাপ্তদের অর্থ প্রদানের সময় কোম্পানী প্রদত্ত অর্থের উপর ৫% উৎস কর কর্তন করবে। তবে, উক্ত তহবিল থেকে প্রাপ্ত অর্থ হতে সুবিধাভোগীগণ তাদের আয়ের বিপরীতে ৫০,০০০ টাকা পর্যন্ত করমুক্ত আয়ের সুবিধা পাবেন।

ট্রাস্টি বোর্ডের অবস্থান কোথায় হবে?

ট্রাস্টি বোর্ডের কার্যালয় কোম্পানী রেজিস্ট্রিকৃত প্রধান কার্যালয়ে স্থাপিত হবে।

ট্রাস্টি বোর্ডের খরচ কে বহন করবে?

ট্রাস্টি বোর্ডের হিসার রক্ষণসহ সকল খরচ কোম্পানী বহন করবে।

তহবিলের হিসাব কিভাবে নিরীক্ষা করা হবে?

কোম্পানীর আয়-ব্যয় হিসাব যেভাবে প্রতি বছর নিরীক্ষা করা হয়, একইভাবে ট্রাস্টি বোর্ডের তহবিলের হিসাব নিরীক্ষা করতে হবে।

একাধিক শিল্পসম্পর্কিত কাজের রত কোম্পানীর বোর্ড গঠন বিধান

কোন কোম্পানীর একাধিক শিল্প কাজে রত একাধিক অফিস বা ইউনিট থাকলে কোম্পানীর অনুরোধক্রমে সরকার স্ব স্ব অফিসে স্বতন্ত্র ট্রাস্টি বোর্ড গঠন ও পরিচালনা করতে পারবে। সেক্ষেত্রে এই অধ্যায়ের বিধানাবলী এমনভাবে প্রযোজ্য হবে যেন উহার প্রত্যেক অফিস বা ইউনিট একটি কোম্পানী।

জরিমানা

যদি কোম্পানী বাংলাদেশ শ্রম আইনের ২৩২ ধারা অনুযায়ী কোম্পানীর মুনাফায় শ্রমিকের অংশগ্রহণ তহবিল গঠনে বাধ্যবাধতা থাকা সত্ত্বেও এই তহবিল গঠনে ব্যর্থ হয় অথবা এই সংক্রান্ত সরকারের কোন আদেশ পরিপালন না করে সেক্ষেত্রে কোম্পানীর প্রত্যেক পরিচালক, উহার ব্যবস্থাপক বা ব্যবস্থাপনার কাজের সাথে জড়িত যেকেউ অথবা ট্রাস্টি বোর্ডের চেয়ারম্যান বা সদস্য ব্যবস্থাপনার নিয়োজিত ব্যক্তি বা ব্যক্তিবর্গকে অনধিক ১ লক্ষ টাকা এবং ব্যর্থতার প্রথম তারিখের পর হইতে প্রতিদিনের জন্য ৫ হাজার টাকা জরিমানা আরোপ করে ৩০ দিনের মধ্যে জরিমানা পরিশোধের জন্য সরকার নির্দেশ প্রদান করতে পারে। পুনরায় কোন রুপ আইনের বিধান অথবা সরকারের আদেশ পালনে ব্যর্থ হলে তাহার বিরুদ্ধে দ্বিগুন জরিমানা আরোপিত হবে।

বিরোধ নিষ্পত্তি

তহবিলদ্বয়ের প্রশাসন সংক্রান্ত ব্যাপারে ট্রাস্টি বোর্ড এবং কোম্পানীর মধ্যে কোন মতবিরোধ দেখা দিলে, বিষয়টি সরকারের কাছে পেশ করত সরকাররের সিদ্ধান্ত চুড়ান্ত হবে।

তহবিলদ্বয়ের সুযোগসুবিধা সংক্রান্ত সম্পর্কে ট্রাস্টি বোর্ড অথবা কোম্পানীর বিরুদ্ধে কোন শ্রমিকের কোন অভিযোগ থাকলে এখতিয়াভুক্ত শ্রম আদালতে আবেদন করতে পারবে।

শেষ কথা

WPPF কোম্পানির কর্মচারীর জন্য একটি দারুন সুবিধা যা তাদের কোম্পানির মুনাফায় অংশীদার করে তোলে। এরফলে কোম্পানির মুনাফা বৃদ্ধিতে কোম্পানির কর্মচারীরা আরও বেশি পরিশ্রমী হয় যা কোম্পানি ও দেশের অর্থনীতি উভয়ই গতিশীল করে। এই আইন সম্পর্কে সকল কর্মচারীর সচেতন থাকা উচিত এবং তাদের সুবিধা ভোগ করার জন্য প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করা উচিত। এছাড়াও এই আইন পালন ব্যর্থতায় কোম্পানিকে আইন অনুযায়ী জরিমানা দিতে হবে, তাই কোম্পানিও এই বিষয়ে সচেষ্ট হবে বলে আমরা আশা করি।

Exit mobile version