দশ বছর আগেও কেউ কল্পনা করতে পারত না যে একদিন মোবাইল ফোন আমাদের লেনদেনের এত বড় অংশ হয়ে উঠবে। ১৯৯০ এর দশকে যখন মোবাইল ফোন প্রথম জনপ্রিয় হয়ে ওঠে, তখন কেউ ভাবতে পারেনি যে একদিন এই ছোট্ট যন্ত্র দিয়ে আমরা এত সহজে টাকা পাঠাতে, নিতে, বিল দিতে পারব।
২০১১ সালে মোবাইল ফিন্যান্সিয়াল সার্ভিস (MFS) বা মোবাইল ব্যাংকিং চালু হওয়ার সময়ও অনেকে এই সেবার সম্পর্কে সন্দিহান ছিলেন। কিন্তু কয়েক বছরের মধ্যেই bKash, Rocket, Nagad এর মতো সেবাগুলো আমাদের লেনদেনের অপরিহার্য অংশে পরিণত হয়েছে।
বাংলাদেশে অনেক জনপ্রিয় ব্যাংকেরই নিজস্ব মোবাইল ব্যাংকিং সেবা রয়েছে। এই ব্লগে আমরা বাংলাদেশের মোবাইল ব্যাংকিং সেবার জনপ্রিয়তার কারণ এবং সেরা ৭টি জনপ্রিয় মোবাইল ব্যাংকিং সেবার সাথে আপনাকে পরিচয় করিয়ে দেব।
মোবাইল ব্যাংকিং সেবার জনপ্রিয়তার কারণ
বাংলাদেশ মোবাইল ব্যাংকিং সেবায় বিশ্বের অন্যতম অগ্রগামী দেশ। বাংলাদেশে মোবাইল ব্যাংকিং সেবার জনপ্রিয়তার কারণসমূহ:
- সহজবোধ্য: মোবাইল ব্যাংকিং সেবা ব্যবহার করা খুবই সহজ। মোবাইল ফোন দিয়ে যে কোনো সময় যে কোনো জায়গা থেকে টাকা পাঠানো, নেওয়া, বিল পরিশোধ করা যায়। ব্যাংকে লাইনে দাঁড়াতে হয় না।
- দ্রুততা: মোবাইল ব্যাংকিং সেবা দ্রুত লেনদেনের সুযোগ করে দেয়। মাত্র কয়েক সেকেন্ডের মধ্যে টাকা পাঠানো বা নেওয়া যায়।
- সাশ্রয়ী: মোবাইল ব্যাংকিং সেবা ব্যবহার করা সাশ্রয়ী। লেনদেনের খরচ অন্যান্য পদ্ধতির চেয়ে অনেক কম।
- নিরাপত্তা: মোবাইল ব্যাংকিং সেবাগুলো উন্নত নিরাপত্তা ব্যবস্থা ব্যবহার করে। পিন নম্বর, পাসওয়ার্ড, বায়োমেট্রিক অথেন্টিকেশন ইত্যাদি ব্যবহার করে অ্যাকাউন্টগুলো নিরাপদ রাখা হয়।
- অতিরিক্ত সেবা: মোবাইল ব্যাংকিং সেবায় কেবল টাকা পাঠানো বা নেওয়া যায় না। বিল পরিশোধ, রিচার্জ, লোন, বিনিয়োগ ইত্যাদি বিভিন্ন অতিরিক্ত সেবাও পাওয়া যায়।
- গ্রামীণ জনগোষ্ঠীর অন্তর্ভুক্তি: মোবাইল ব্যাংকিং গ্রামীণ জনগোষ্ঠীর আর্থিক অন্তর্ভুক্তি বাড়াতে সাহায্য করেছে। অনেক গ্রামীণ মানুষ এখন ব্যাংকিং সেবা গ্রহণ করতে পারছে।
- অর্থনৈতিক উন্নয়ন: মোবাইল ব্যাংকিং অর্থনৈতিক উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে। এই সেবা ব্যবহার করে ব্যবসা লেনদেন সহজ হয়েছে। গ্রামীণ অর্থনীতির প্রবৃদ্ধি হয়েছে।
বাংলাদেশের জনপ্রিয় ৭টি মোবাইল ব্যাংকিং সেবা। Top Mobile Banking in Bangladesh
বর্তমানে দেশে ১৩টি প্রতিষ্ঠান মোবাইল ব্যাংকিং সেবা দিচ্ছে। এর মধ্যে বিকাশ, রকেট, নগদ, উপায়, মাই ক্যাশ, শিওর ক্যাশ ইত্যাদি বেশ জনপ্রিয়।
১. বিকাশ
ব্র্যাক ব্যাংকের জনপ্রিয় মোবাইল ব্যাংকিং সেবা। ২০১১ সালের জুলাই মাসে চালু হয়। বিকাশ দিয়ে টাকা পাঠানো, নেওয়া, বিল পরিশোধ, রিচার্জ, লোন, বিনিয়োগ ইত্যাদি কাজ সহজেই করা যায়। বিকাশ ডায়ালিং কোড: *247#
২. নগদ
বাংলাদেশ ডাক বিভাগের মোবাইল ব্যাংকিং সেবা। ২০১৮ সালের নভেম্বরে চালু হয়। নগদ দিয়ে ক্যাশ ইন, ক্যাশ আউট, টাকা পাঠানো, মোবাইল রিচার্জের মতো সেবা পাওয়া যায়। নগদ ডায়ালিং কোড: *167#
৩. রকেট
ডাচ্-বাংলা ব্যাংকের মোবাইল ব্যাংকিং সেবা। ২০১১ সালের মে মাসে চালু হয়। রকেট দিয়ে টাকা পাঠানো, নেওয়া, বিল পরিশোধ, রিচার্জ ইত্যাদি কাজ করা যায়। রকেট ডায়ালিং কোড: *322#
৪. এম-ক্যাশ
ইসলামী ব্যাংক বাংলাদেশ লিমিটেডের মোবাইল ব্যাংকিং সেবা। ২০১৯ সালে চালু হয়। এম-ক্যাশ দিয়ে টাকা জমা, উত্তোল, রিচার্জ, অনলাইন পেমেন্ট, পণ্য/সেবা কেনা ইত্যাদি কাজ করা যায়। এম-ক্যাশ ডায়ালিং কোড: *259#
৫. শিওর ক্যাশ
রুপালী ব্যাংক লিমিটেডের মোবাইল ব্যাংকিং সেবা। শিওর ক্যাশ দিয়ে ব্যাংক, এনজিও, মোবাইল অপারেটর, ইউটিলিটি মার্চেন্ট, কোম্পানি, সরকারি দপ্তর ইত্যাদির কাছে পেমেন্ট করা যায়। শিওর ক্যাশ ডায়ালিং কোড: *495#
৬. উপায়
ইউসিবিএল এর মোবাইল ব্যাংকিং অ্যাপ। উপায় দিয়ে টাকা পাঠানো, নেওয়া, বিল পরিশোধ, রিচার্জ, লোন ইত্যাদি কাজ করা যায়। বিশেষ করে ব্যাংকিংয়ের বাইরে থাকা মানুষদের জন্য উপায় খুবই উপকারী। উপায় ডায়ালিং কোড: *268#
৭. ট্রাস্ট এক্সিয়াটা পে (ট্যাপ)
ট্রাস্ট ব্যাংক লিমিটেড এবং মালয়েশীয় টেলিকম জায়ান্ট এক্সিয়াটা এর যৌথ মোবাইল ব্যাংকিং সেবা। ট্যাপ দিয়ে টাকা পাঠানো, নেওয়া, বিল পরিশোধ, রিচার্জ ইত্যাদি কাজ করা যায়। এটি নতুন সেবা হলেও দ্রুত জনপ্রিয়তা পাচ্ছে। ট্যাপ ডায়ালিং কোড: *733# বা *201# (টি-ক্যাশ মেনু)
শেষ কথা
মোবাইল ব্যাংকিং সেবা বাংলাদেশের মানুষের জীবনে বিপুল পরিবর্তন এনেছে। এই সেবা দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে। মোবাইল ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে বাংলাদেশ আর্থিক অন্তর্ভুক্তি এবং অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির লক্ষ্যে এগিয়ে চলেছে।
আশা করি, এই লেখাটি থেকে বাংলাদেশের জনপ্রিয় মোবাইল ব্যাংকিং সেবাগুলো সম্পর্কে আপনার ভালো ধারণা হয়েছে।