একটি প্রাইভেট কোম্পানির শেয়ার হস্তান্তর একটি জটিল প্রক্রিয়া, বিশেষ করে যদি আপনি আইনি দিকগুলি সম্পর্কে অবগত না থাকেন। এই লেখাতে, আমরা আপনাকে ধাপে ধাপে নির্দেশিকা প্রদান করব যা আপনাকে একটি প্রাইভেট কোম্পানির শেয়ার সফলভাবে হস্তান্তর করতে সাহায্য করবে। এছাড়াও, আমরা শেয়ার হস্তান্তরের জন্য প্রয়োজনীয় নথিপত্রের তালিকা দিবো। যারা শেয়ার হস্তান্তর করতে যাচ্ছেন তাদের জন্য এই লেখাটা অনেক গুরুত্বপূর্ণ, তাই সম্পূর্ণ লেখাটায় পড়ার অনুরোধ রইলো।
শেয়ার হস্তান্তরের ধাপসমূহ
কোন প্রাইভেট কোম্পানির শেয়ার হস্তান্তর করতে হলে নিচের সকল ধাপসমূহ যথাযথভাবে সম্পন্ন করতে হবে নতুবা কোম্পানিটি আইনগত জটিলতার সম্মুখীন হবে:
ধাপ ১: প্রাথমিক পর্যালোচনা
একটি প্রাইভেট লিমিটেড কোম্পানির শেয়ার হস্তান্তরের আগে অবশ্যই সেই কোম্পানির Articles of Association (AOA) যাচাই করা নিতে হবে। কারণ এতে শেয়ার হস্তান্তর নিয়ে বিভিন্ন বিধিনিষেধ থাকতে পারে। সাধারণত প্রাইভেট লিমিটেড কোম্পানির Articles of Association (AOA) এ শেয়ার বিক্রির আগে এটি অন্য শেয়ারহোল্ডারদের প্রথমে অফার করার বাধ্যবাধকতা থাকে। যদি তাঁরা না কেনে, তখনই বাইরে বিক্রি করা যায়। তাই কোনো শেয়ারহোল্ডার তার শেয়ার বিক্রি করতে চাইলে কোম্পানির লাইসেন্স, পারমিট, চুক্তি ইত্যাদি পর্যালোচনা করে নিতে হবে। কোনো বিধিনিষেধ থাকলে সে অনুযায়ী অনুমোদন নিতে হবে। প্রয়োজনে NOC সংগ্রহ করতে হবে। সহজ কথায়, শেয়ার হস্তান্তরের আগে সব নিয়মকানুন জেনে নেওয়া জরুরি।
ধাপ ২: পরিচালক পর্ষদের অনুমোদন
কোম্পানির শেয়ার বিক্রি করতে চাওয়া শেয়ারহোল্ডার লিখিতভাবে পরিচালনা পর্ষদকে অবহিত করবেন। তবে কোম্পানির গঠনতন্ত্রে উল্লিখিত নির্দিষ্ট পরিস্থিতিতে পরিচালনা পর্ষদ শেয়ার হস্তান্তর অস্বীকার করার ক্ষমতা রাখে। শেয়ার হস্তান্তর অনুমোদনের জন্য পরিচালনা পর্ষদ একটি বোর্ড মিটিং বা EGM করবে এবং অনুমোদন জানাবে। এছাড়াও, পরিচালনা পর্ষদকে একটি ঘোষণা (No Objection Certificate) দিতে হবে যেখানে যেখানে নতুগ আগত শেয়ার হোল্ডার থাকায় কোনো প্রকার আপত্তি নেই এই মর্মে শেয়ার হস্তান্তরকারী ঘোষণা দিবে।
ধাপ ৩: শেয়ারের মূল্য পরিশোধ
কোম্পানির অনুমোদন লাভের পর শেয়ারের মূল্য পরিশোধ করতে হবে। যদি ক্রেতা ও বিক্রেতা উভয়ই স্থানীয় বা বিদেশী হন, তাহলে প্রদানের প্রমাণের প্রয়োজন নেই। তবে, যদি বিক্রেতা বাংলাদেশী এবং ক্রেতা বিদেশী হন, তাহলে জয়েন্ট স্টক কোম্পানিজ অ্যান্ড ফার্মস রেজিস্ট্রার (RJSC) শেয়ার হস্তান্তরের জন্য ব্যাংকের ইনক্যাশমেন্ট লেটার (Encashment Certificate) চাইবে। বিদেশী/অপ্রবাসী বাংলাদেশীর ক্ষেত্রে: হস্তান্তর নথি এবং affidavit-এর প্রত্যয়ন প্রয়োজন।
ধাপ ৪: Form 117 পূরণ এবং স্ট্যাম্প ডিউটি প্রদান
হস্তান্তরকারী শেয়ারহোল্ডারকে পরিচালক তালিকা, কোম্পানির নিরীক্ষিত আর্থিক বিবৃতি, শেয়ার হস্তান্তরের affidavit ইত্যাদি নথি সহ রেজিস্ট্রার অফিসে (RJSC) হাজির হতে হবে। সেখানে ফর্ম ১১৭, যা মূল হস্তান্তর দলিল, রেজিস্ট্রারের সামনেই স্বাক্ষর করতে হবে। তাই, হস্তান্তরকারীর উপস্থিতি বাধ্যতামূলক। আইনে অন্যায় হাজির না হতে পারলে কমিশন দেওয়ার কথা বলা হলেও, তা কার্যকর হয়নি। প্রতিটি শেয়ারের মুখমূল্যের উপর ১.৫% স্ট্যাম্প শুল্ক দিতে হবে। ফর্ম ১১৭ স্বাক্ষরের পর, একটি অনুলিপি কোম্পানিকে দিতে হবে।
Form 117 এর স্যাম্পল ফরম ডাউনলোড করতে এখানে ক্লিক করুন।
ধাপ ৫: রেকর্ড আপডেট এবং শেয়ার সার্টিফিকেট ইস্যু
কোম্পানি শেয়ার রেজিস্টার, মিনিট রেজিস্টার আপডেট করুন এবং নতুন শেয়ারহোল্ডারের নামে নতুন শেয়ার সার্টিফিকেট ইস্যু করুন (অথবা বিদ্যমান সার্টিফিকেটে পরিবর্তন করুন)।
কোম্পানির শেয়ার হস্তান্তরে যেসকল কাগজপত্রাদি প্রয়োজন
- Form 117
- An affidavit by the transferor/seller
- কোম্পানির একটি বোর্ড রেজোলিউশন (EGM-এ) শেয়ার হস্তান্তর অনুমোদন
- শেয়ার হস্তান্তরের সনদপত্র (Certificate of Transfer of Shares)
- অসম্মতি সনদপত্র (No-Objection Certificates) (যদি প্রযোজ্য হয়)
- Letter of Resignation from the Board of Directors (যদি প্রযোজ্য হয়)
- Letter of Authorization (যদি প্রযোজ্য হয়)
আমাদের শেষকথা
শেয়ার হস্তান্তরের প্রক্রিয়াটি শুরু করার আগে, একজন আইনজীবীর সাথে পরামর্শ করা উচিত। আইনজীবী আপনাকে প্রযোজ্য আইন ও নিয়মাবলী সম্পর্কে অবগত করতে পারবেন এবং আপনার শেয়ার হস্তান্তর সফলভাবে সম্পন্ন করতে সহায়তা করবেন।