চাকরি হতে করযোগ্য আয় নির্ণয় করবেন যেভাবে

কামরুল হাসান নূর

Updated on:

Tax calculation income from salary

চাকরীজীবীদের আয়কর নির্ণয়ের জন্য আয়কর আইনে ধারা ৩২, ধারা ৩৩, ধারা ৩৪, ধারা ৭৮ এবং ষষ্ট তফসিলের অংশ ১ ও অংশ ৩ দেখতে হবে। একজন চাকরীজীবির কোন কোন প্রাপ্তি বা সুবিধাদি তার করযোগ্য আয় হিসাবে গণ্য হবে এবং কোন ধরনের সুবিধাসমূহের ক্ষেত্রে কর অব্যাহতি পাওয়া যাবে তা আমরা আজকে জানার চেষ্টা করবো। এইখানে চাকরীজীবিদের আয় নির্ণয় বলতে ‍মূলত যারা প্রাইভেট প্রতিষ্ঠানে চাকরী করেন তাদের আয় গণনার নিয়মই বর্ণিত হয়েছে। কারণ, সরকারী চাকরীজীবিদের মূল বেতন, উৎসব ভাতা ও বোনাস বাদে আর সকল ভাতাসমূহ করমুক্ত থাকবে।

যেসকল আয় চাকরি হতে আয় হিসাবে গণ্য হবে

চাকরি হতে আয় অর্থে নিম্নবর্ণিত আয়সমূহ অন্তর্ভুক্ত হবে:

  • যেকোনো বেতন, মজুরি বা পারিশ্রমিক
  • যেকোনো ভাতা, ছুটি ভাতা, ছুটি নগদায়ন, বোনাস, ফি, কমিশন, ওভারটাইম
  • অগ্রিম বেতন
  • আনুতোষিক, অ্যানুইটি, পেনশন বা ইহাদের সম্পূরক
  • চাকরির অবসানের কারণে প্রাপ্ত যেকোনো প্রকার ক্ষতিপূরণ, উহা যে নামেই অভিহিত হউক না কেন
  • ভবিষ্যত তহবিল বা অন্য কোনো তহবিলে কর্মচারীর অনুদানের অংশ ব্যতিরেকে অবশিষ্ট অংশ
  • চাকরির চুক্তির শর্তাবলির পরিবর্তনের ফলে প্রাপ্ত অঙ্ক বা সুবিধাদির ন্যায্য বাজার মূল্য
  • চাকরিতে যোগদানকালে বা চাকরির অন্য কোনো শর্তের অধীন প্রাপ্ত অঙ্ক বা সুবিধাদির ন্যায্য বাজার মূল্য
  • পারকুইজিট
  • কর্মচারী শেয়ার স্কিম হইতে অর্জিত আয়
  • কর অনারোপিত বকেয়া বেতন
  • অতীত বা ভবিষ্যতের কোনো নিয়োগকর্তা হইতে প্রাপ্ত যেকোনো অঙ্ক বা বা সুবিধা

পারকুইজিট, ভাতা ও সুবিধাদির আর্থিক মূল্য নির্ধারণ

আর্থিক মূল্যে প্রদেয় পারকুইজিট, ভাতা ও সুবিধা ব্যতীত অন্যান্য পারকুইজিট, ভাতা ও সুবিধার আর্থিক মূল্য নিম্নবর্ণিত সারণী মোতাবেক নির্ধারিত হবে:

ক্রমিক নংপারকুইজিট, ভাতা, সুবিধা, ইত্যাদিনির্ধারিত মূল্য
আবাসন সুবিধাক)  আবাসনের ভাড়া সম্পূর্ণভাবে নিয়োগকর্তা কর্তৃক পরিশোধিত হলে অথবা নিয়োগকর্তা কর্তৃক আবাসনের ব্যবস্থা করা হলে আবাসনের বার্ষিক মূল্য;
খ) হ্রাসকৃত ভাড়ায় প্রাপ্ত আবাসনের ক্ষেত্রে অনুচ্ছেদ (ক) অনুযায়ী নির্ধারিত ভাড়া এবং পরিশোধিত ভাড়ার পার্থক্য।
মোটরগাড়ি প্রতি সুবিধাক)  ২৫০০ সিসি পর্যন্ত গাড়ির ক্ষেত্রে মাসিক ১০ (দশ) হাজার টাকা;
খ)  ২৫০০ সিসির অধিক এইরূপ গাড়ির ক্ষেত্রে মাসিক ২৫ (পঁচিশ) হাজার টাকা।
অন্য কোনো পারকুইজিট, ভাতা বা সুবিধাপারকুইজিট, ভাতা বা সুবিধার আর্থিক মূল্য বা ন্যায্য বাজার মূল্য।

কর্মচারী শেয়ার স্কিম হইতে অর্জিত আয় নির্ধারণ

কর্মচারী শেয়ার স্কিম অর্থ কোনো চুক্তি বা ব্যবস্থাপনা যাহার অধীন একটি কোম্পানি –

ক) তাহার কোনো কর্মচারী বা তাহার কোনো সহযোগী কোম্পানি কর্মচারীবরাবর শেয়ার ইস্যু করিতে পারিবে

খ) একটি ট্রাস্টের ট্রাস্টি বরাবর শেয়ার ইস্যু করিতে পারিবে এবং পরবর্তীতে ট্রাস্টি ট্রাস্টের দলিল মোতাবেক উক্ত শেয়ার উক্ত কোম্পানি বা তাহার কোনো সহযোগী কোম্পানি কোনো কর্মচারী বরাবর ইস্যু করিতে পারিবে।

কর্মচারী শেয়ার স্কিমের অধীন শেয়ার প্রাপ্ত হইলে, শেয়ার প্রাপ্তির বৎসরে ক-খ নিয়মে আয় চাকরি হিইতে আয়ের সহিত যোগ হবে; যেখানে-

ক= প্রাপ্তির তারিখে শেয়ারের ন্যায্য বাজার মূল্য

খ= শেয়ার অর্জনের ব্যয় (কর্মচারী শেয়ার অর্জনে যদি কোনো মূল্য পরিশোধ করিয়া থাকেন + কর্মচারী শেয়ার অর্জনের অধিকার বা সুযোগ আদায়ে যদি কোনো মূল্য পরিশোধ করে থাকেন)

কর্মচারী শেয়ার স্কিমের অধীন শেয়ার অর্জনের প্রাপ্ত অধিকার বা সুযোগ কর্মচারী বিক্রয় বা হস্তান্তর করিলে চাকরি হতে আয়ের সহিত ক-খ নিয়মে আয় যোগ হবে, যেখানে-

ক= শেয়ার অর্জনের অধিকার বা সুযোগ বিক্রয় বা হস্তান্তর মূল্য

খ= শেয়ার অর্জনের অধিকার বা সুযোগ আদায়ে পরিশোধিত মূল্য

নিয়োগকর্তা কর্তৃক প্রদত্ত যেসকল আয় মোট আয় পরিগণনা হতে বাদ যাবে

ক) শেয়ারহোল্ডার পরিচালক নহে এইরূপ অন্য কোনো কর্মচারীর হার্ট, কিডনি, চক্ষু, লিভার ও ক্যানসার অপারেশন সংক্রান্ত চিকিৎসা ব্যয় বাবদ প্রাপ্ত অর্থ

খ) সম্পূর্ণরূপে এবং কেবল চাকরির দায়িত্ব পরিপালনের জন্য প্রাপ্ত এবং ব্যয়িত যাতায়াত ভাতা, ভ্রমণ ভাতা ও দৈনিক ভাতা

গ) কোনো স্বীকৃত ভবিষ্য তহবিল, অনুমোদিত বার্ধক্য তহবিল, পেনশন তহবিল এবং অনুমোদিত আনুতোবিক তহবিল-

  • কর্তৃক কর্মচারী বা নিয়োগকর্তা হইতে গৃহীত কোনো চাঁদা
  • হইতে উহাদের সুবিধাভোগীদের মাঝে বিতরণকৃত আয় যাহা উক্ত তহবিলের হাতে করারোপিত হয়েছে

তবে শর্ত থাকে যে, কোনো অনুমোদিত আনুতোষিক তহবিল হইতে করদাতা কর্তৃক আনুতোষিক হিসাবে গৃহীত অর্থ অনধিক ২ (দুই) কোটি ৫০ (পঞ্চাশ) লক্ষ টাকার সীমা অতিক্রম করিবে না

ঘ) ভবিষ্যত তহবিল আইন, ১৯২৫ (১৯২৫ সনের ১৯ নং আইন) প্রযোজ্য এইরূপকোনো ভবিষ্যত তহবিলে উদ্ভূত বা উপচিত অথবা ভবিষ্য তহবিল হইতে উদ্ভূত কোনো আয়

ঙ) পেনশনারস সেভিংস সার্টিফিকেট হইতে সুদ হিসাবে গৃহীত কোনো অর্থ বা গৃহীত অর্থের সমষ্টি, যেইক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট আয়বর্ষের শেষে উক্ত সার্টিফিকেটের বিনিয়োগকৃত অর্থের মোট পুঞ্জীভূত অর্জিত মূল্য/ প্রকৃত মূল্য/ আক্ষরিক মূল্য ক্রয় মূল্য অনধিক ৫ (পাঁচ) লক্ষ টাকা হয়

চ) কোন নিয়োগকর্তা কর্তৃক কোন কর্মচারীর ব্যয় পুনর্ভরণ যদি-

  • উক্ত ব্যয় সম্পূর্ণভাবে এবং আবশ্যকতা অনুসারে কর্মচারীর দায়িত্ব পালনের সূত্রে ব্যয়িত করা হয়
  • নিয়োগকারীর জন্য উক্ত কর্মচারীর মাধ্যমে এইরূপ ব্যয় নির্বাহ সর্বাধিক সুবিধাজনক ছিল

চাকরি হতে আয় পরিগণনার নিয়ম

পূর্বের আইনে বেতনের বিভিন্ন ধাপ অনুযায়ী করমুক্তির বিশেষ ছাড় পাওয়া যেত। বাড়ীভাড়া, চিকিৎসা, যাতায়ত খাতসমূহের উপর নির্ধারিত হারে এই করমুক্তির দাবী করতে হতো। নতুন আয়কর আইন ২০২৩ এ চাকরি হতে আয় পরিগণনার হিসাবটা সহজ করা হয়েছে। চাকরি হতে আয়ের এক-তৃতীয়াংশ বা ৪ লক্ষ ৫০ হাজার টাকা যাহা কম হবে তাহা চাকরি হতে আয় হতে বিয়োগ করে করযোগ্য আয় নির্ণয় করতে হবে।

উদাহরণ, মি. রহমানের চাকরি হতে বাৎসরিক মোট আয়ের পরিমাণ ১২ লক্ষ টাকা। তাহলে, চাকরি হতে আয়ের করযোগ্য আয় কতে হবে?

আইন অনুযায়ী চাকরি হতে আয়ের ১/৩ অংশ অর্থ্যাৎ ১২,০০,০০০/৩= ৪,০০,০০০ এবং ৪,৫০,০০০; এই দুইয়ের ভিতর যেহেতু ৪,০০,০০০ কম আসছে তাই ১২ লক্ষ হতে ৪ লক্ষ বিয়োগ দিতে হবে। অর্থ্যাৎ, চাকরি হতে আয়ের করযোগ্য আয় হবে ১২ লক্ষ – ৪ লক্ষ = ৮ লক্ষ টাকা। এখন এই ৮ লক্ষ টাকা উপর ব্যক্তি শ্রেণী করদাতার আয়কর স্লাব অনুযায়ী করের পরিমাণ নির্ণয় করতে হবে।

আয়কর সম্পর্কিত সকল ধরনের তথ্য জানতে Income Tax সেকশন Follow করুন

শেষ কথা

চাকরি হতে কোন আয়গুলো করযোগ্য আয় হিসাবে গণ্য হবে, কর অব্যাহতি প্রাপ্ত আয় সমূহ এবং চাকরি হতে আয় পরিগণনার হিসাবটা এই লেখায় বিস্তারিত আলোচনা করা হয়েছে। আয়কর সম্পর্কে আরও বিভিন্ন বিষয়ে জানতে এইখানে ক্লিক করুন। এছাড়া আয়কর সম্পর্কে আপনার কোন প্রশ্ন থাকলে কমেন্ট বক্সে কমেন্ট করুন অথবা আমাদের ফেসবুক পেজ এ মেসেজ করুন।

Leave a Comment