আয়কর আইন ২০২৩ অনুযায়ী যাদের আয়কর রিটার্ন জমা দেওয়ার বাধ্যবাধকতা রয়েছে তাদেরকে অবশ্যই কর দিবসের ভিতর আয়কর রিটার্ন জমা দিতে পারবেন। তবে, কোন করদাতা যদি কোন কারণে করদিবসের ভিতর আয়কর রিটার্ন জমা দিতে না পারেন, তবে তিনি আয়কর আইনে যে কর অব্যহতি, করমুক্ত আয় সুবিধা ও কর রেয়াত সুবিধার বিধান রয়েছে, সেই সুবিধাসমূহ থেকে বঞ্চিত হবেন এবং আয়কর আইন ২০২৩ এর ১৭৪ ধারা অনুসারে বিলম্ব ফিসহ কর নির্ধারণ করা হবে। এছাড়া করদাতা কোন যুক্তিসঙ্গত কারণ ছাড়া যদি আয়কর রিটার্ন জমা দিতে ব্যর্থ হন, তাহলে তিনি আয়কর আইন ২০২৩ এর ২৬৬ ধারা অনুসারে জরিমানার সম্মুখিন হতে পারেন। আয়কর রিটার্ন জমা না দিলে কী কী জরিমানা হতে পারে বিস্তারিত এই লেখায় উল্লেখ করা হবে।
আয়কর রিটার্ন জমা না দিলে জরিমানা l Penalty for not Filing Income Tax Return
১. যেইক্ষেত্রে কোনো ব্যক্তি যুক্তিসঙ্গত কারণ ব্যতীত, ধারা ১৬৬, ১৭২, ১৯১, ১৯৩ বা ২১২ এর অধীন কোনো ব্যক্তি রিটার্ন দাখিল করিতে ব্যর্থ হন, সেইক্ষেত্রে উপকর কমিশনার উক্ত ব্যক্তির সর্বশেষ নিরূপিত আয়ের উপর ধার্যকৃত করের ১০% (দশ শতাংশ) হারে জরিমানা আরোপ করিতে পারিবেন, যাহা ন্যূনতম ১ (এক) হাজার টাকা হইবে এবং ব্যর্থতা অব্যাহত থাকিলে ব্যর্থতা অব্যাহত থাকাকালীন প্রতিদিনের জন্য ৫০ (পঞ্চাশ) টাকা হারে অতিরিক্ত জরিমানা আরোপ করিতে পারিবেন:
তবে শর্ত থাকে যে, উক্ত জরিমানার পরিমাণ নিম্নবর্ণিত অঙ্ক অতিক্রম করিবে না, যথা:-
(ক) কোনো ব্যক্তি করদাতা, যাহার ইতঃপূর্বে কখনো কর নির্ধারণ হয় নাই, তাহার ক্ষেত্রে ৫ (পাঁচ) হাজার টাকা;
(খ) কোনো ব্যক্তি করদাতা, যাহার ইতঃপূর্বে কর নির্ধারণ হইয়াছে, তাহার ক্ষেত্রে সর্বশেষ নিরূপিত আয়ের উপর প্রদেয় করের ৫০% (পঞ্চাশ শতাংশ) বা ১ (এক) হাজার টাকা, দু’টির মধ্যে যাহা অধিক।
২. যেইক্ষেত্রে কোনো ব্যক্তি যুক্তিসঙ্গত কারণ ব্যতীত,
(ক) ধারা ১৭৭ এর অধীন কোনো রিটার্ন, তথ্য দাখিল বা উপস্থাপন করিতে ব্যর্থ হইয়াছেন সেইক্ষেত্রে উপকর কমিশনার উক্ত ব্যক্তির উপর তাহার সর্বশেষ নিরূপিত আয়ের উপর ধার্যকৃত করের ১০% (দশ শতাংশ) হারে অথবা ৫ (পাঁচ) হাজার টাকা, দু’টির মধ্যে যাহা অধিক, সেই পরিমাণ জরিমানা আরোপ করিতে পারিবেন এবং ব্যর্থতা অব্যাহত থাকিলে, ব্যর্থতা অব্যাহত থাকাকালীন প্রতি মাসের জন্য অথবা তাহার ভগ্নাংশের জন্য ১ (এক) হাজার টাকা হারে অতিরিক্ত জরিমানা আরোপ করিতে পারিবেন;
(খ) ধারা ১৪৫ এর অধীন কোনো সার্টিফিকেট প্রদান করিতে ব্যর্থ হইয়াছেন, সেইক্ষেত্রে উপকর কমিশনার উক্ত ব্যক্তির উপর ৫ (পাঁচ) হাজার টাকা পর্যন্ত জরিমানা আরোপ করিতে পারিবেন এবং ব্যর্থতা অব্যাহত থাকিলে, ব্যর্থতা অব্যাহত থাকাকালীন প্রতি মাসের জন্য অথবা তাহার ভগ্নাংশের জন্য ১ (এক) হাজার টাকা হারে অতিরিক্ত জরিমানা আরোপ করিতে পারিবেন;
(গ) ধারা ২০০ এর আবশ্যকতা অনুযায়ী কোনো তথ্য দাখিল বা উপস্থাপনে ব্যর্থ হন, সেইক্ষেত্রে যে আয়কর কর্তৃপক্ষ ধারা ২০০ এর অধীন তথ্য চাহিয়াছে সেই কর্তৃপক্ষ উক্ত ব্যক্তির উপর ৫০ (পঞ্চাশ) হাজার টাকা জরিমানা আরোপ করিতে পারিবেন এবং ব্যর্থতা অব্যাহত থাকিলে, ব্যর্থতা অব্যাহত থাকাকালীন প্রতি দিনের জন্য ৫০০ (পাঁচশত) টাকা হারে অতিরিক্ত জরিমানা আরোপ করিতে পারিবেন।
আইনের ভাষা সাধারণত একটু জটিল হয়ে থাকে। তাই সকলের বোঝার স্বার্থে আয়কর আইনে কোন ধরনের ব্যর্থতার কারণে যে পরিমাণ জরিমানা দিতে হবে তা সহজ ভাষায় নিচের টেবিলে উল্লেখ করা হলো:
জরিমানা ক্ষেত্র | জরিমানার পরিমাণ |
---|---|
রিটার্ন দাখিল না করলে | সর্বশেষ নিরূপিত আয়ের উপর ধার্যকৃত করের ১০% (দশ শতাংশ) এবং ব্যর্থতা অব্যাহত থাকিলে ব্যর্থতা অব্যাহত থাকাকালীন প্রতিদিনের জন্য ৫০ (পঞ্চাশ) টাকা হারে অতিরিক্ত জরিমানা তবে শর্ত থাকে যে, উক্ত জরিমানার পরিমাণ নিম্নবর্ণিত অঙ্ক অতিক্রম করবে না, যথা:- (ক) কোনো ব্যক্তি করদাতা, যাহার ইতঃপূর্বে কখনো কর নির্ধারণ হয় নাই, তাহার ক্ষেত্রে ৫ (পাঁচ) হাজার টাকা; (খ) কোনো ব্যক্তি করদাতা, যাহার ইতঃপূর্বে কর নির্ধারণ হয়েছে, তাহার ক্ষেত্রে সর্বশেষ নিরূপিত আয়ের উপর প্রদেয় করের ৫০% (পঞ্চাশ শতাংশ) বা ১ (এক) হাজার টাকা, দু’টির মধ্যে যাহা অধিক। |
উৎসে কর কর্তনের প্রমাণ দিতে না পারলে | সর্বশেষ নিরূপিত আয়ের উপর ধার্যকৃত করের ১০% (দশ শতাংশ) হারে অথবা ৫ (পাঁচ) হাজার টাকা, দু’টির মধ্যে যাহা অধিক এবং ব্যর্থতা অব্যাহত থাকিলে, ব্যর্থতা অব্যাহত থাকাকালীন প্রতি মাসের জন্য অথবা তাহার ভগ্নাংশের জন্য ১ (এক) হাজার টাকা হারে অতিরিক্ত জরিমানা |
কর পরিশোধের সার্টিফিকেট দেখাতে না পারলে | ৫ (পাঁচ) হাজার টাকা পর্যন্ত জরিমানা আরোপ করিতে পারিবেন এবং ব্যর্থতা অব্যাহত থাকিলে, ব্যর্থতা অব্যাহত থাকাকালীন প্রতি মাসের জন্য অথবা তাহার ভগ্নাংশের জন্য ১ (এক) হাজার টাকা হারে অতিরিক্ত জরিমানা |
কোন তথ্য বা প্রমাণ উপস্থাপন করতে না পারলে | ৫০ (পঞ্চাশ) হাজার টাকা জরিমানা আরোপ করিতে পারিবেন এবং ব্যর্থতা অব্যাহত থাকিলে, ব্যর্থতা অব্যাহত থাকাকালীন প্রতি দিনের জন্য ৫০০ (পাঁচশত) টাকা হারে অতিরিক্ত জরিমানা |
শেষ কথা
আয়কর রিটার্ন জমা দানে ব্যর্থতার জরিমানাসহ একজন করদাতা বিভিন্ন বিধিবিধান পালনে ব্যর্থ হলে আরও বিভিন্ন ধরনের জরিমানার সম্মুখীন হতে পারেন। যেমন:- বিধি দ্বারা নির্ধারিত পদ্ধতিতে হিসাব রক্ষণাবেক্ষণ না করিবার জরিমানা, অগ্রিম কর, ইত্যাদি পরিশোধে ব্যর্থতার জন্য জরিমানা, আয় গোপন করিবার জন্য জরিমানা; ইত্যাদি।
আপনার যদি করযোগ্য না থাকে এবং আর কখনও করযোগ্য আয় হওয়ার সম্ভাবনা না থাকে, এছাড়া ধারা ২৬৪ অনুযায়ী রিটার্ন দাখিলের প্রমাণ দাখিলের বাধ্যবাধকতার প্রয়োজন না হয় তাহলে আপনি চাইলে আপনার টিন (TIN) সার্টিফিকেট বাতিল করতে পারেন।
আয়কর রিটার্ন সম্পর্কে আরও জানতে আমাদের আয়কর বিভাগটা ঘুরে আসতে পারেন। এছাড়াও আয়কর সম্পর্কে আপনার কোন জিজ্ঞাসা থাকলে আমাদের কমেন্ট বক্সে বা ইমেইলে জানাতে পারেন। আমরা যথাসম্ভব দ্রুত আপনার প্রশ্নের উত্তর দেওয়ার চেষ্টা করবো।
⭐️⭐️⭐️ আয়কর সম্পর্কে আরও তথ্য পেতে এখানে ক্লিক করুন ⭐️⭐️⭐️