বিদেশ থেকে বৈধভাবে টাকা পাঠানোর জন্য সোনালী ব্যাংক একটি নির্ভরযোগ্য ও সহজ মাধ্যম। বিভিন্ন ব্যাংকের মধ্যে সোনালী ব্যাংক তাদের সহজ নিয়মাবলী ও দ্রুততম সেবার জন্য জনপ্রিয়। আপনি সহজেই বিদেশ থেকে সোনালী ব্যাংকে রেমিটেন্স পাঠাতে পারবেন, তবে কিছু নিয়ম মেনে চলতে হবে। টাকা পাঠানোর জন্য আপনাকে যে দেশ থেকে টাকা পাঠাবেন সেখানে একটি সাশ্রয়ী ও বিশ্বস্ত মানি এক্সচেঞ্জ হাউজ খুঁজে বের করতে হবে এবং কিছু প্রয়োজনীয় কাগজপত্র জমা দিতে হবে। আজকের এই লেখায় আমরা বিদেশ থেকে সোনালী ব্যাংকে টাকা পাঠানোর নিয়ম এবং এর সুবিধা সম্পর্কে বিস্তারিত জানবো।
বিদেশ থেকে সোনালী ব্যাংকে টাকা পাঠানোর সুবিধা
অন্যান্য মাধ্যমে থেকে টাকা না পাঠিয়ে আপনি যদি বিদেশ থেকে সরাসরি সোনালী ব্যাংকে টাকা পাঠান তাহলে বেশ কিছু সুবিধা পাবেন। তারমধ্যে উল্লেখযোগ্য সুবিধাসমূহ হলো:
১. সহজ নিয়মাবলী: সোনালী ব্যাংক বিদেশ থেকে রেমিটেন্স পাঠানোর জন্য সহজ নিয়মাবলী অনুসরণ করে। টাকা পাঠানোর জন্য আপনার KYC (Know Your Customer) ডকুমেন্টস এবং লেনদেনের প্রমাণ জমা দিতে হবে।
২. দ্রুততম সেবা: সোনালী ব্যাংক দ্রুততম সেবা প্রদান করে। টাকা পাঠানোর পর, গ্রাহক সাধারণত সরকারী ছুটির দিন ব্যতীত ২৪ ঘন্টার মধ্যে টাকা উত্তোলন করতে পারেন। এমনকি সোনালী ব্যাংকের অফিস চলাকালীন সময়ে আপনি টাকা পাঠাতে পারলে গ্রাহকের একঘন্টার মধ্যেও টাকা উত্তোলন করা সম্ভব।
৩. কম খরচ: সোনালী ব্যাংক রেমিটেন্স পাঠানোর জন্য অন্যান্য ব্যাংকের তুলনায় কম।
৪. বিশ্বস্ততা: দীর্ঘদিন ধরে তারা রেমিটেন্স সেবা প্রদান করে আসছে। সোনালী ব্যাংক বাংলাদেশের একটি জনপ্রিয় ও বিশ্বস্ত ব্যাংক।
৫. বিস্তৃত শাখা নেটওয়ার্ক: সোনালী ব্যাংকের সারাদেশে বিস্তৃত শাখা নেটওয়ার্ক রয়েছে। ফলে আপনার প্রিয়জন সহজেই টাকা উত্তোলন করতে পারবেন। এছাড়া আমেরিকা ও ইংল্যান্ডে সোনালী ব্যাংকের শাখা রয়েছে যেখান থেকে প্রবাসীরা সহজেই সোনালী ব্যাংকের একাউন্টে টাকা পাঠাতে পারবেন।
৬. সরকারি প্রণোদনা: সরকার বিদেশ থেকে রেমিটেন্স পাঠানোর জন্য ২.৫% প্রণোদনা প্রদানের ঘোষণা দিয়েছে। এছাড়া যদি কোন প্রবাসী সরাসরি সোনালী ব্যাংকের একাউন্টে রেমিটেন্স পাঠান তাহলে সোনালী ব্যাংকের নিজস্ব তহবিল হতে আরও অতিরিক্ত ২.৫% প্রণোদনা দিবে। অর্থ্যাৎ, বিদেশ থেকে সরাসরি সোনালী ব্যাংকে রেমিটেন্স পাঠালে উক্ত রেমিটেন্সের উপর অতিরিক্ত ৫% প্রণোদনা পাওয়া যাবে।
বিদেশ থেকে সোনালী ব্যাংকে টাকা পাঠাতে কি কি লাগবে
প্রবাসীরা বিদেশ থেকে সোনালী ব্যাংকে টাকা পাঠাতে হলে নিম্নে উল্লেখিত তথ্যগুলো প্রয়োজন হবে:
- প্রেরকের তথ্য:
- নাম ও ঠিকানা: প্রেরকের পুরো নাম এবং ঠিকানা সঠিকভাবে উল্লেখ করতে হবে।
- পাসপোর্ট নম্বর: প্রেরকের পাসপোর্ট নম্বর (যদি থাকে) উল্লেখ করতে হবে।
- প্রাপকের তথ্য:
- সোনালী ব্যাংকের একাউন্ট নম্বর: রেমিটেন্স পাঠানোর জন্য প্রাপকের একটি সোনালী ব্যাংকের একাউন্ট থাকা আবশ্যক।
- পুরো নাম ও ঠিকানা: রেমিটেন্স পাঠানোর সময় প্রাপকের পুরো নাম এবং ঠিকানা সঠিকভাবে উল্লেখ করতে হবে।
- মোবাইল নম্বর: রেমিটেন্স পাঠানোর সময় প্রাপকের মোবাইল নম্বর (যদি থাকে) উল্লেখ করতে হবে।
- শাখার নাম: রেমিটেন্স পাঠানোর জন্য প্রাপকের সোনালী ব্যাংকের শাখার নাম উল্লেখ করতে হবে।
- সুইফট কোড: রেমিটেন্স পাঠানোর জন্য প্রাপকের সোনালী ব্যাংকের শাখার সুইফট কোড উল্লেখ করতে হবে। (গ্রাহকের সোনালী ব্যাংকের শাখায় যোগাযোগ করে সুইফড কোড নম্বর জেনে নিবেন)
বিদেশ থেকে সোনালী ব্যাংকে রেমিটেন্স পাঠানোর নিয়ম
১. মানি এক্সচেঞ্জ প্রতিষ্ঠান নির্বাচন: বিদেশ থেকে টাকা পাঠানোর জন্য প্রথমেই আপনার জন্য সুবিধাজনক মানি এক্সচেঞ্জ প্রতিষ্ঠান নির্বাচন করতে হবে। প্রতিটি মানি এক্সচেঞ্জ প্রতিষ্ঠানের নিজস্ব ফি ও নিয়মাবলী থাকে। তাই লেনদেনের আগে তা জেনে নিন। বিদেশ থেকে সোনালী ব্যাংকে টাকা পাঠানোর জন্য কিছু জনপ্রিয় মানি চেঞ্জার প্রতিষ্ঠানের মধ্যে রয়েছে: Western Union, MoneyGram, Xoom, Ria Money Transfer, Remitly। এছাড়াও আমেরিকা ও ইংল্যান্ডে অবস্থিত সোনালী ব্যাংকের শাখা, সোনালীর উদ্ভাবিত আধুনিক প্রযুক্ত RMS+, Blaze ব্যবহার করেও আপনি সরাসরি সহজে বাংলাদেশে রেমিটেন্স পাঠাতে পারবেন।
২. প্রয়োজনীয় তথ্য প্রদান: প্রেরক ও প্রাপকের তথ্য, প্রাপকের সোনালী ব্যাংকের একাউন্ট নম্বর, শাখার নাম ও সুইফট কোড প্রদান করুন।
৩. পেমেন্ট: রেমিটেন্সের পরিমাণ ও ফি পরিশোধ করুন।
৪. রেমিটেন্স পিন সংগ্রহ: টাকা পাঠানো সম্পন্ন হলে, মানি ট্রান্সফার হাউস থেকে অর্থ লেনদেনের রশিদটি সংগ্রহ করতে ভুলবেন না। এই রশিদটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ কারণ এতে আপনার রেমিটেন্স পিন থাকবে।
৫. প্রাপককে অবহিত: প্রাপককে রেমিটেন্স পিন ও রেমিটেন্সের পরিমাণ জানান।
আমাদের শেষকথা
উপরে উল্লেখিত নিয়মাবলী অনুসরণ করে আপনি সহজেই বিদেশ থেকে সোনালী ব্যাংকে টাকা পাঠাতে পারবেন। দ্রুত, নিরাপদ এবং কম ফিতে রেমিটেন্স পাঠানোর জন্য সোনালী ব্যাংক একটি জনপ্রিয় বিকল্প। অনেকেই অল্প কিছু লাভের স্বপ্নে হুন্ডির মাধ্যমে টাকা পাঠাতে যেয়ে প্রতারিত হয়ে যান। তাই আমাদের অনুরোধ বিদেশ থেকে বৈধ চ্যানেলে রেমিটেন্স পাঠিয়ে আপনার গ্রাহকের নিকট টাকা পাঠানো নিশ্চিত করুন এবং দেশের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ বৃদ্ধিতে অংশগ্রহন করুন।