বিদেশী বিনিয়োগকারীরা যারা সীমিত পরিসরে বাংলাদেশে ব্যবসা বা কার্যক্রম পরিচালনা করতে ইচ্ছুক তারা বাংলাদেশী আইনের অধীনে লিমিটেড কোম্পানি নিবন্ধন না করেই বাংলাদেশে একটি লিয়াজোঁ বা শাখা অফিস খুলতে পারেন। তবে এই শাখা বা লিয়াজোঁ থেকে বিনিয়োগকারী সীমিত কার্যকলাপ পরিচালনা করতে পারে এবং সাধারণত তারা বাংলাদেশে রাজস্ব তৈরি করতে পারে না।
বিদেশি প্রতিষ্ঠান বাংলাদেশে শাখা বা লিয়াজোঁ অফিস খোলার জন্য বেশ কয়েকটি ধাপ অতিক্রম করতে হয়। এই লেখায় সবগুলো ধাপ পর্যায়ক্রমে আলোচনা করা হবে।
ধাপ ১: BIDA তে আবেদন করা
বাংলাদেশে একটি শাখা অফিস প্রতিষ্ঠার প্রথম ধাপ হল BIDA থেকে অনুমোদন পাওয়া। BIDA-এর অনুমোদন পেতে, নিম্নলিখিত প্রয়োজনীয় নথিগুলি BIDA-তে জমা দিতে হবে৷
BIDA তে যেসকল কাগজপত্রাদি জমা দিতে হবে
বিদেশি প্রতিষ্ঠানের শাখা/লিয়াজোঁ/প্রতিনিধি/প্রকল্প অফিস স্থাপনের জন্য আবেদনপত্রের সাথে BIDA তে অনলাইন ওএসএস পোর্টালের মাধ্যমে যে সকল দলিল দাখিল করতে হবে তার তালিকা:
১। বাংলাদেশে অফিস স্থাপনের বিষয়ে বিদেশি মূল কোম্পানি/ সংস্থা‘র বোর্ড রেজুলেশনের কপি
২। প্রকল্প দলিলে প্রকল্প অফিস স্থাপন এবং উক্ত অফিসে বিদেশি প্রকর্মী নিয়োগ ও তাদের বেতন ভাতাদি পরিশোধ সংক্রান্ত তথ্যাবলী সম্বলিত অংশের সত্যায়িত কপি
৩। ঠিকাদার প্রতিষ্ঠানের ক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট পক্ষদের মধ্যে সম্পাদিত Engineering, Procurement and Construction (EPC)/যথাযথ চুক্তির কপি
8। উপ-ঠিকাদার প্রতিষ্ঠানের ক্ষেত্রে প্রকল্প পরিচালকের দপ্তর হতে সত্যায়িত উপ-ঠিকাদার চুক্তির কপি
৫। মূল কোম্পানি/সংস্থার হালনাগাদ নিরীক্ষিত হিসাব বিবরণী
৬। স্থানীয় কর্মী ও বিদেশি প্রকর্মীর পদ উল্লেখপূর্বক প্রস্তাবিত অফিসের সাংগঠনিক কাঠামো
৭। মূল কোম্পানি/সংস্থা কর্তৃক পরিচালিত কার্যক্রমের বিবরণ
৮। প্রস্তাবিত অফিসের মাধ্যমে বাংলাদেশে সম্পাদিতব্য কার্যক্রমের বিবরণ
৯। মূল কোম্পানি/ সংস্থা”র পরিচালক/উদ্যোক্তাদের নাম ও জাতীয়তা সংক্রান্ত তথ্য
১০। মূল কোম্পানির সংঘবিধি (Memorandum of Association) ও সংঘ স্মারক (Articles of Association)-এর কপি
১১। নিগমিতকরণের সনদ (Incorporation Certificate)-এর কপি
১২। আবেদন দাখিলের জন্য মূল কোম্পানি/সংস্থা”র ব্যবস্থাপনা পরিচালক কর্তৃক প্রদত্ত ক্ষমতা অর্পণ পত্র
১৩। শাখা অফিসের ক্ষেত্রে উক্ত অফিসকে ভবিষ্যতে শিল্পখাতে বিনিয়োগ প্রতিষ্ঠানে রুপান্তরের বিষয়ে বিদেশি মূল কোম্পানি/সংস্থা”র বোর্ড কর্তৃক প্রত্যায়িত সময়াবদ্ধ কর্মপরিকল্পনার কপি
১৪। যৌথ/কন্সোর্টিয়াম/এসোসিয়েশন (জেভিসিএ) প্রকল্প অফিস হিসেবে আবেদন করলে নিম্নলিখিত দলিলাদি দাখিল করতে হবে
ক) যৌথ/কন্সোর্টিয়াম/এসোসিয়েশন (জেভিসিএ) সংক্রান্ত চুক্তির কপি
খ) ক্রয়কারী প্রতিষ্ঠান কর্তৃক প্রদত্ত কার্যাদেশের কপি
গ) যৌথ/কন্সোর্টিয়াম/এসোসিয়েশন (জেভিসিএ) -এর অন্তর্ভুক্ত প্রতিষ্ঠানগুলোর শাখা/ ব্রাঞ্চ অফিস হিসেবে গৃহীত অনুমোদনের কপি (যদি থাকে)
ঘ) যৌথ/কন্সোর্টিয়াম/এসোসিয়েশন (জেভিসিএ) -এর অন্তর্ভুক্ত সংস্থাসমূহের সংঘবিধি (Memorandum of Association) ও সংঘ স্মারক (Articles of Association)-এর কপি
১৫। অফিস স্থাপনের আবেদনের সাথে দাখিলকৃত কাগজপত্র কোম্পানির প্রতিষ্ঠা প্রধান/ ব্যবস্থাপনা পরিচালক কর্তৃক স্বাক্ষরিত/সত্যায়িত এবং সংশ্লিষ্ট দেশে অবস্থিত বাংলাদেশ মিশন বা বাংলাদেশে অবস্থিত সংশ্লিষ্ট দেশের মিশন অথবা সংশ্লিষ্ট দেশ/ষ্টেট/ ডিষ্ট্রিক্ট- এর শীর্ষস্থানীয় শিল্প ও বণিক সমিতি কর্তৃক প্রত্যায়িত হতে হবে।
টিকা: (১) দাখিলকৃত দলিলসমূহ ইংরেজি ভাষা ভিন্ন অন্য কোন ভাষায় প্রণীত হলে স্বীকৃত প্রতিষ্ঠান কর্তৃক অনুদিত এবং নোটারাইজড হতে হবে
(২) কর্তৃপক্ষ/ আন্তঃমন্ত্রণালয় কমিটি বর্ণিত দলিলগুলোর অতিরিক্ত অন্যান্য তথ্য ও দলিলপত্র দাখিলের জন্য আবেদনকারীকে অনুরোধ জানাতে পারবে।
পরিদর্শন
কাগজপত্র পাওয়ার পর, BIDA-এর আন্তঃমন্ত্রণালয় কমিটি কাগজপত্রসমূহ ভালোভাবে পরীক্ষানিরিক্ষা করবে। তারপরে, কমিটি সন্তুষ্ট হলে তারা অনুমোদন দেবে বা আরও নথি চাইতে পারে। অতএব, নথিগুলি সাবধানতার সাথে প্রস্তুত করা অপরিহার্য।
কত দিনের ভিতর অনুমোদন পাওয়া যায়
সাধারণত কাগজপত্রাদি কমা দেওয়ার একমাসের ভিতর BIDA সকল কাগজপত্রাদি পরীক্ষা নিরীক্ষা করে একমাসের ভিতর অনুমোদন প্রদান করে থাকে।
অনুমোদন ফি
বিদেশি কোম্পানির শাখা অফিস বাংলাদেশে স্থাপনের জন্য নতুন অনুমতির জন্য (সর্বোচ্চ ৩ বছরের জন্য) ২৫,০০০ টাকা প্রদান করতে হয়। আর অনুমতির মেয়াদ বৃদ্ধি (সর্বোচ্চ ২ বছরের জন্য) ১০,০০০ টাকা প্রদান করতে হয়।
ধাপ ২: শাখা অফিস পরিচালনার জন্য ব্যাংক হিসাব খোলা
BIDA থেকে অনুমোদন পাওয়ার পরের ধাপ হল বাংলাদেশে একটি ব্যাংক হিসাব খোলা। এর কারণ, যদিও একটি শাখা অফিস স্থাপনের জন্য কোনো ন্যূনতম পরিশোধিত মূলধনের প্রয়োজন নেই, BIDA অনুমতিপত্র জারির তারিখ থেকে ২ (দুই) মাসের মধ্যে US$৫০,০০০ রেমিট্যান্স আনতে হবে।
ধাপ ৩: বাংলাদেশ ব্যাংকের অনুমোদন
BIDA থেকে অনুমোদন পাওয়ার পর, নতুন অনুমোদিত শাখা অফিসকে অবশ্যই ৩০ (ত্রিশ) দিনের মধ্যে বাংলাদেশ ব্যাংকে একটি প্রতিবেদন জমা দিতে হবে। শাখা অফিসগুলিকে সরাসরি বাংলাদেশ ব্যাংকে এই প্রতিবেদন জমা দেওয়ার অনুমতি নেই। শাখা বা প্রতিনিধি অফিসের ব্যাংকের মাধ্যমে এই প্রতিবেদন জমা দিতে হয়। তাই BIDA থেকে অনুমোদন পাওয়ার পরপরই, নতুন অনুমোদিত শাখা অফিস বা প্রতিনিধি অফিসকে বাংলাদেশে একটি ব্যাংক হিসাব খুলতে হবে।
ধাপ ৪: শাখা অফিসের জন্য RJSC নিবন্ধন
সবশেষে, বাংলাদেশ ব্যাংক এবং বিডা উভয়ের কাছ থেকে অনুমোদন পাওয়ার পর, শেষ ধাপ হল RJSC-তে শাখা অফিস নিবন্ধন করা।
RJSC নিবন্ধন এর জন্য প্রয়োজনীয় কাগজপত্রাদি
- BIDA থেকে অনুমোদনের চিঠি
- বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে অনুমোদনের চিঠি
- আর্টিকেল অফ অ্যাসোসিয়েশন এবং মেমোরেন্ডাম অফ অ্যাসোসিয়েশন এবং অন্যান্য আইনি নথিগুলির প্রত্যয়িত অনুলিপি
- কোম্পানির নিবন্ধিত বা প্রধান অফিসের বিস্তারিত ঠিকানা
- কোম্পানির পরিচালক এবং সচিবদের (যদি থাকে) একটি তালিকা
- একজন বাংলাদেশী ব্যক্তির নাম এবং ঠিকানা যা নথি প্রক্রিয়াকরণ এবং গ্রহণে ব্যবসার প্রতিনিধিত্ব করতে পারে
- কোম্পানির বাংলাদেশী অফিসের সম্পূর্ণ ঠিকানা
ধাপ ৫: ট্রেড লাইসেন্স গ্রহণ
ট্রেড লাইসেন্স পেতে হলে সংশ্লিষ্ট স্থানীয় কর্তৃপক্ষের নিকট আবেদন করতে হবে। আবেদনের পাশাপাশি, নিম্নলিখিত তথ্য এবং নথি জমা দিতে হবে:
- AOA এবং MOA এর ফটোকপি
- ব্যবস্থাপনা পরিচালক বা চেয়ারম্যানের ছবি
- শাখা অফিসের টিআইএন
- অফিসের ভাড়া চুক্তি
- ব্যবসার প্রকৃতি
ধাপ ৬: আয়কর নিবন্ধন (TIN) এবং ভ্যাট নিবন্ধন (BIN)
শাখা অফিস স্থাপনের পর বাংলাদেশে স্বাভাবিক ব্যবসা পরিচালনার জন্য, শাখা অফিসের একটি অনন্য আয়কর নিবন্ধন নম্বর (TIN) এবং ব্যবসা শনাক্তকরণ নম্বর (BIN) থাকা অপরিহার্য। জাতীয় রাজস্ব বোর্ড থেকে এই ২টি নিবন্ধন নিতে হবে। আয়কর নিবন্ধন নম্বর (TIN) এর জন্য https://secure.incometax.gov.bd/ থেকে TIN Certificate নিতে হবে এবং ভ্যাট নিবন্ধন এর জন্য https://vat.gov.bd/ থেকে BIN নিতে হবে।