একটি ফাইন্যান্স কোম্পানির সুষ্ঠুভাবে পরিচালনা ও নিয়ন্ত্রণের জন্য একজন পরিচালকের ভূমিকা অপরিহার্য। তবে, কিছু ক্ষেত্রে, পরিচালক দীর্ঘ সময়ের জন্য অনুপস্থিত থাকতে পারেন, যেমন বিদেশ ভ্রমণ, প্রশিক্ষণ, অসুস্থতা, ইত্যাদি। এই পরিস্থিতিতে, কোম্পানির কার্যক্রম ব্যাহত না হওয়ার জন্য একজন বিকল্প পরিচালক নিয়োগ করা হয়।
এই লেখায়, আমরা ফাইন্যান্স কোম্পানিতে বিকল্প পরিচালক নিয়োগের প্রক্রিয়া সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করব। আমরা বিকল্প পরিচালকের নিয়োগের যোগ্যতা, প্রক্রিয়া, সীমাবদ্ধতা এবং অন্যান্য প্রাসঙ্গিক দিকগুলি পর্যালোচনা করব। ফাইন্যান্স কোম্পানিতে বিকল্প পরিচালকের নিয়োগের ক্ষেত্রে বাংলাদেশ ব্যাংকের সার্কুলার ডিএফআইএম সার্কুলার নং-০১ এ উল্লেখিত নীতিমালা অনুসরণ করতে হবে। এই লেখাটি ডিএফআইএম সার্কুলার নং-০১ এর নীতিমালা সহজবোধ্য ভাবে উপস্থাপন করা হয়েছে।
বিকল্প পরিচালক বলতে কি বোঝায়?
কোম্পানির একজন পরিচালক যখন দীর্ঘ সময়ের জন্য অনুপস্থিত থাকেন, তখন তার স্থলাভিষিক্ত হিসেবে কাজ করার জন্য একজন বিকল্প পরিচালক নিয়োগ করা হয়। কোম্পানির সংঘবিধি বা সাধারণ সভার মাধ্যমে বিকল্প পরিচালক নিয়োগের ক্ষমতা প্রদান করা হয়।
বিকল্প পরিচালক মূল পরিচালকের অনুপস্থিতিতে তার সমস্ত ক্ষমতা ও দায়িত্ব পালন করেন। মূল পরিচালক যখন দেশে ফিরে আসেন, তখন বিকল্প পরিচালকের পদাবধি শেষ হয়ে যায়।
কোম্পানি আইন, ১৯৯৪ অনুযায়ী, একজন বিকল্প পরিচালক কমপক্ষে তিন মাসের জন্য অনুপস্থিত থাকা মূল পরিচালকের স্থলাভিষিক্ত হিসেবে কাজ করতে পারবেন।
উদাহরণস্বরূপ: ধরা যাক, কোম্পানির একজন পরিচালক বিদেশে প্রশিক্ষণের জন্য ছয় মাসের জন্য অনুপস্থিত থাকবেন। এই সময়ে, কোম্পানি তার স্থলাভিষিক্ত হিসেবে একজন বিকল্প পরিচালক নিয়োগ করতে পারে।
ফাইন্যান্স কোম্পানি কখন বিকল্প পরিচালক নিয়োগ প্রদান করতে পারবে?
কোনো পরিচালক যখন অন্যূন ৩ (তিন) মাস মেয়াদে নিরবচ্ছিন্নভাবে বিদেশে অবস্থান করবেন, তখন ফাইন্যান্স কোম্পানি তার অনুপস্থিতির কারণে এক বছরে সর্বোচ্চ একবার একাদিক্রমে ৩ (তিন) মাসের জন্য একজন বিকল্প পরিচালক নিয়োগ প্রদান করতে পারবে। এক্ষেত্রে ফাইন্যান্স কোম্পানির পরিচালক পর্ষদ কোম্পানী আইন, ১৯৯৪ এর ১০১ ধারার বিধান পরিপালন করে উক্ত বিকল্প পরিচালক নিয়োগ প্রদান করবে।
বিকল্প পরিচালকের যোগ্যতা
বিকল্প পরিচালক নিয়োগের ক্ষেত্রে পরিচালক নিয়োগের যোগ্যতা ও উপযুক্ততা সংক্রান্ত বিধানাবলী প্রযোজ্য হবে। উল্লেখ্য যে, খেলাপী ঋণগ্রহীতা বা ফাইন্যান্স কোম্পানি আইন, ব্যাংক-কোম্পানী আইন, কোম্পানী আইন বা অন্য কোনো আইন, বিধি বা নির্দেশনাবলে ফাইন্যান্স কোম্পানির পরিচালক হওয়ার জন্য অযোগ্য ঘোষিত ব্যক্তি বিকল্প পরিচালক হতে পারবেন না। এছাড়াও কোনো ব্যক্তি যদি কোনো ফাইন্যান্স কোম্পানি হতে কোনোরূপ ঋণসুবিধা গ্রহণ করে থাকে, তাহলে সে উক্ত ফাইন্যান্স কোম্পানিতে বিকল্প পরিচালক হিসেবে নিয়োগপ্রাপ্তির জন্য যোগ্য হবে না।
বিকল্প পরিচালক নিয়োগ প্রক্রিয়া
বিকল্প পরিচালক নিয়োগের সময় ফাইন্যান্স কোম্পানিতে নিম্নোক্ত নিয়োগ কার্যাবলী ও দালিলিক প্রমাণাদি সংরক্ষণ করতে হবে:
- পরিচালক পর্ষদ বিকল্প পরিচালক নিয়োগের সিদ্ধান্ত গ্রহণ করবে।
- ৭ দিনের মধ্যে নিম্নলিখিত নথি বাংলাদেশ ব্যাংকে জমা দিতে হবে:
- বিকল্প পরিচালক নিয়োগের সিদ্ধান্তের অনুলিপি।
- মূল পরিচালকের বিদেশ গমনের প্রমাণ।
- বিকল্প পরিচালকের তথ্য, ঘোষণাপত্র এবং গোপনীয়তা রক্ষার ঘোষণাপত্র।
- মূল পরিচালকের প্রত্যাবর্তনের সম্ভাব্য তারিখ।
- মূল পরিচালকের প্রত্যাবর্তনের পর ১০ দিনের মধ্যে বাংলাদেশ ব্যাংককে অবহিত করতে হবে।
- ফাইন্যান্স কোম্পানিকে মূল পরিচালকের বিদেশ গমন এবং দেশে প্রত্যাবর্তন সংক্রান্ত দালিলিক প্রমাণাদি সংগ্রহ ও সংরক্ষণ নিশ্চিত করতে হবে।
বিকল্প পরিচালকের সীমাবদ্ধতা
- বিকল্প পরিচালককে কোনো পর্ষদের সহায়ক কমিটিতে নিয়োগ করা যাবে না।
- বিকল্প পরিচালকের মেয়াদকালে ঋণ নিয়ন্ত্রণ নীতিমালা মূল পরিচালকের জন্য যেমন প্রযোজ্য, তেমনি বিকল্প পরিচালকের জন্যও প্রযোজ্য হবে।
- মূল পরিচালকের অনুপস্থিতিতে ৩ মাসের বেশি সময় ধরে বিকল্প পরিচালক দায়িত্ব পালন করলে, মূল পরিচালককে পদ গ্রহণ করতে হবে এবং বাংলাদেশ ব্যাংককে অবহিত করতে হবে।
আমাদের শেষকথা
উপসংহারে, বিকল্প পরিচালক নিয়োগের মাধ্যমে ফাইন্যান্স কোম্পানি একজন পরিচালকের দীর্ঘ অনুপস্থিতির সময় কোম্পানির কার্যক্রম সুষ্ঠুভাবে পরিচালনা করতে পারে। নিয়োগের প্রক্রিয়া স্পষ্টভাবে সংজ্ঞায়িত করা হয়েছে এবং নিয়ন্ত্রক কর্তৃপক্ষ দ্বারা তদারকি করা হয়। বিকল্প পরিচালকের কিছু সীমাবদ্ধতা থাকলেও, তারা কোম্পানির পরিচালনায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। আশাকরি এই লেখাটি ফাইন্যান্স কোম্পানির পরিচালক, শেয়ারহোল্ডার, নিয়ন্ত্রক কর্তৃপক্ষ এবং অন্যান্য সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের জন্য সহায়ক হবে।